হাকালুকি হাওড়ে পানি বাড়ছে, আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ

ঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন মানুষ। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের নদী ও হাকালুকি হাওড়ের পানি বাড়ছেই। এতে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের বর্ষা মৌসুমে বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে জরুরি প্যাকেজে জেলার প্রধান খরস্রোতা মনু নদীর ৪টি স্থানে কাজ শুরু হলেও রাজনগর উপজেলার কোনাগাঁও, আদনাবাজ, কামারচাক বাজার সংলগ্ন ভুলানগর, খাসপ্রেমনগর ও চাটিমেলাঘর ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে কোনো কাজ হয়নি।

উপজেলা কৃষি অফিসারের কার্যালয়ের সামনে হাঁটু পানি। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার রাবেয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয়রা বিভিন্ন এলাকা থেকে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন।

হাকালুকি হাওড় পারের মইতাম এলাকার ৭৫-বছর বয়সী আবু তাহের বলেন, 'বাড়ি থেকে কিছু নিয়ে আসতে পারিনি। ১৯৮৮ সালের বন্যা দেখেছিলাম, সেবার বাড়িতে পানি উঠেনি। কিন্তু, গতকাল সকাল থেকে পানি বাড়তে শুরু করে এবং বিকেলে ঘরে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। উপায় না পেয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছি।'

আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা নুরুল ইসলাম বলেন, 'বাড়িতে যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে গত বছরের জরুরি কাজের আওতাধীন জায়গাটি এখনো ঝুঁকিপূর্ণ। বাঁধ ভেঙে নদীর সঙ্গে বিলীন হয়ে আর মাত্র আড়াই ফুটের মতো প্রস্থ আছে। পানি বৃদ্ধি পেলে যেকোনো সময় ওই অংশ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।'

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, জেলার প্রধান ৩টি নদীতে ক্রমান্বয়ে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাওড়ের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এদিকে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে মৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক মহাসড়কের কিছু অংশ। বিশেষ করে হাকালুকি ও কাউয়াদীঘি হাওড়ের নিম্নাঞ্চলের গ্রাম।'

আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিচ্ছেন মানুষ। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা

কোনাগাঁও এলাকার সাবেক মেম্বার এনামুল হোসেন চৌধুরী বলেন, 'এলাকায় কয়েকটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ আছে। কর্তৃপক্ষ যদি দ্রুত মেরামত না করেন তাহলে এসব স্থান দিয়ে ভাঙন দেখা দিতে পারে এবং ২০১৮ সালের মতো বন্যা হতে পারে।'

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামান বলেন, 'ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে কাজ চলছে। সব মিলিয়ে মৌলভীবাজারের বন্যার পরিস্থিতি অনেকটা অবনতির দিকে।'

কুলাউড়া উপজেলার ইউএনও এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, 'হাকালুকি হাওড়ে পানি বাড়ছে। নিম্নাঞ্চলে পানি আসছে। যেখানে পায়ের পাতা সমান পানি ছিল আজ সেখানে হাঁটু সমান পানি হয়েছে। গতকাল বিকালে আমাদের আশ্রয়কেন্দ্রে ৪০-৫০ পরিবার ছিল। আজ তা বেড়ে ১০০ ছাড়িয়েছে। আমরা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খাবার বিতরণ করেছি।'

জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, 'বড়লেখা, জুড়ী ও কুলাউড়ার পানি অনেকটা বেড়েছে। জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে আমাদের আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh-origin NYPD officer killed in Manhattan shooting

Didarul Islam's wife was eight-months pregnant and the couple had two young boys

53m ago