লুয়াইউনি হলিছড়া চা বাগানের টিলা কেটে রাস্তা নির্মাণ

লুয়াইউনি হলিছড়া চা বাগানের ভেতর এক্সকেভেটর দিয়ে টিলা কেটে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। ছবি: স্টার

পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার লুয়াইউনি হলিছড়া চা বাগানের টিলা কেটে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

লুয়াইউনি হলিছড়া চা বাগান উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নে অবস্থিত।

স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি বাগানের হলিছড়া ফাঁড়ির ১৭ নম্বর সেকশন এলাকায় জালালাবাদ মৌজার ২৫০ নম্বর দাগ থেকে শুরু করে মর্তুজ মিয়ার বাড়ির পাশ দিয়ে (হাড়িয়াটিলার পূর্বপাশ কুলাউড়া-ব্রাহ্মণবাজার আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে বাগানের ভেতর দিয়ে এবং সীমানা ঘেঁষে) কুলাউড়া আসনের সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদের বরাদ্দকৃত কাবিখা'র (৩৫ টন চাল) প্রায় ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি নতুন রাস্তা নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন হয়। এরপর প্রকল্প সভাপতি ও ইউপি সদস্য আতাউর রহমান আফতাব সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বাগানের ভেতর জালালাবাদ মৌজার ২৫০ নম্বর দাগ থেকে রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করেন।

পরিবেশ আইনের কোনো তোয়াক্কা না করেই খননযন্ত্র (এক্সকেভেটর) দিয়ে বেশ কয়েকটি উঁচু-নিচু টিলা কেটে মাটি ফেলে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও প্রায় ১০ ফুট প্রস্থের নতুন একটি রাস্তায় মাটি ভরাট ও ইট বিছানোর কাজ চলছে।

বাগান কর্তৃপক্ষ তাদের অনুমতি না নিয়ে বাগানের নিরাপত্তা বিঘ্নিত ও বাগানের মূল্যবান গাছ চুরি হওয়ার আশঙ্কায় কাজ বন্ধ রাখতে বাঁধা দিলেও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জোরপূর্বক টিলা কেটে রাস্তার কাজ চালু রাখেন। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে বাগানের শ্রমিকরা রাস্তা নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়ে বাগানের ভেতর একত্রিত হন। সেসময় দেখা দেয় চরম উত্তেজনা।

সরেজমিনে দেখা যায়, লুয়াইউনি বাগানের হলিছড়া ফাঁড়ির ১৭ নম্বর সেকশন এলাকায় ৪-৫টি উঁচু-নিচু টিলা ও পাহাড়ি এলাকায় ১০-১২টি টিলা কেটে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ ফুট রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। প্রকল্পের শেষ প্রান্তে হাড়িয়াটিলার পূর্বপাশ কুলাউড়া-ব্রাহ্মণবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে প্রায় ৩০-৩৫ জন শ্রমিক এক্সকেভেটর দিয়ে টিলা কাটার কাজ করছেন।

ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও প্রকল্প সভাপতি আতাউর রহমান আফতাব তার লোক দিয়ে প্রায় এক মাস আগে থেকে টিলা কেটে রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু করেন।

ছবি: স্টার

এই রাস্তা নির্মাণের জন্য বাগানের ভেতরে দৈর্ঘ্যে প্রায় ৬০০ ফুট এবং প্রস্থে প্রায় ১০ ফুট টিলা কাটা হয়েছে, যা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ধারা ৬ (খ) লঙ্ঘন এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।

বাগানের শ্রমিকদের অভিযোগ, ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আতাউর রহমান আফতাব তার লোক দিয়ে জোরপূর্বক বাগানের ভেতর টিলা কেটে রাস্তা নির্মাণ করছেন। টিলা কাটা আইনি অপরাধ এমনটি বলার পরও আতাউর রহমান কোনো কর্ণপাত না করেই দিব্যি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে তারা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন বলে জানান। যেকোনো সময় বাগানের ভেতর থেকে গাছ ও মাটিসহ অনেক কিছু চুরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ বিষয়ে আতাউর রহমান আফতাব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাস্তার কাজ প্রায় অর্ধেক শেষ হওয়ার পথে। বাগানের সীমানা এলাকায় ইট বিছানোর কাজ বাকি আছে। এমপির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।'

বাগানের ভেতর টিলা কেটে রাস্তা নির্মাণের জন্য কোনো অনুমোদন নিয়েছেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এমপি অনুমতি নিয়েছেন কি না তা আমি জানি না। এটা তিনি ভালো বলতে পারবেন।'

ছবি: স্টার

লুয়াইউনি হলিছড়া চা-বাগানের ব্যবস্থাপক মো. মাবুদ আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাগানের ভেতর রাস্তা নির্মাণ করতে হলে অবশ্যই জেলা প্রশাসক ও বাগান মালিক পক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই রাস্তা নির্মাণে কোনো অনুমতি না নিয়ে তারা জোরপূর্বক কাজ শুরু করেন। বাগানের শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে রাস্তার কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সোমবার বিকেলে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।'

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. শিমুল আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এমপির অফিস থেকে প্রকল্পের প্রস্তাব পেয়ে অনুমোদনের জন্য আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর তালিকা প্রেরণ করি। সেটি অনুমোদন হওয়ার পর প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এখন প্রকল্পের শর্তের বাইরে গিয়ে যদি কাজ করানো হয় তাহলে প্রকল্প কমিটি তার দায়ভার নেবে।' 

মৌলভীবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বদরুল হুদা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহমুদুর রহমান খোন্দকার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আপাতত কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি। বিষয়টি সমাধানে এমপি ও বাগান মালিক পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। কাজের বিষয়ে ৫ আগস্টের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
government decision to abolish DSA

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

13h ago