রেস্তোরাঁয় জায়গা হয়নি, হরিজনদের রাস্তায় বসে খাবার খেতে দেখলেন ডিসি

লালমনিরহাট শহরের মিশনমোড় এলাকায় রাস্তায় বসে খাবার খাচ্ছেন হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষ। ছবিটি আজ বৃহস্পতিবার সকালে তোলা। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

'অস্পৃশ্য' বিবেচনায় লালমনিরহাটের রেস্তোরাঁগুলোতে সাধারণত হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষদের ঢুকতে দেওয়া হয় না। আজ বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ কয়েকটি রেস্তোরাঁ ঘুরে এই ঘটনার সত্যতা পান। তিনি দেখেন, রেস্তোরাঁয় ঢুকতে না পেরে রাস্তায় বসেই খাবার খাচ্ছেন হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষ।

এ অবস্থায় জেলা প্রশাসক হরিজনদের রেস্তোরাঁর ভেতরে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা করতে এর মালিকদের নির্দেশ দেন। জানান, এতে হরিজনদের কেউ বাধা দিতে পারবেন না।

তবে রেস্তোরাঁ মালিকদের ভাষ্য, অনেক ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে তাদের কোনো আপত্তি না থাকলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ গ্রাহকদের আপত্তির কারণে জেলার রেস্তোরাঁগুলোতে হরিজন সম্প্রদায়ের সদস্যদের ঢুকতে দেওয়া হয় না।

বিপরীতে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে আশ্বাস পাওয়ার পরও হরিজন সম্প্রদায়ের লোকেরা রেস্তোরাঁয় ঢোকার সাহস পাচ্ছেন না। তাদের আশঙ্কা, রেস্তোরাঁয় ঢুকলে তারা মারধরের শিকার হতে পারেন।

হরিজনরা এ সমাজের সবচেয়ে দরিদ্র, অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়গুলোর অন্যতম। তাদের অর্থনৈতিক দুর্দশার পাশাপাশি সামাজিক ও মানবিক মর্যাদার অভাব যারপরনাই বেদনাদায়ক। এর পেছনে সবচেয়ে বড় যে কারণটি ক্রিয়াশীল, তা হলো তাদের প্রতি সমাজের বৃহত্তর অংশের হীন দৃষ্টিভঙ্গি।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের ভাষ্য, রেস্তোরাঁয় ঢুকতে না দিয়ে হরিজনদের রাস্তায় বসে খাবার খেতে বাধ্য করার বিষয়টি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। তাই গত ৪ জানুয়ারি তিনি লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসককে এ ব্যাপারে সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

লালমনিরহাট শহরের স্টোরপাড়া হরিজন কলোনীর কিরণ রানী বাঁশফোড় (৩৫) দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসক তাদের রেস্তোরাঁয় বসে খাবার খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এতে তারা খুশি হয়েছেন। কিন্তু সাহস পাচ্ছেন না।

কিরণ রানীর আশঙ্কা, এমনটা করতে গেলে রেস্তোরাঁ মালিক ও কর্মচারীরা তাদের মারধর করতে পারেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লালমনিরহাট শহরের এক রেস্তোরাঁ মালিক জানান, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা তারা পেয়েছেন। তবে তিনি বলেন, 'আমরাও চাই যে হরিজনরা আর সবার মতো রেস্তোরাঁয় বসে খাবার খাক। কিন্তু সমাজের মানুষ এটা চায় না। আমার রেস্টুরেন্টে হরিজনরা ঢুকে খাবার খেলে অন্য কাস্টমাররা আর এখানে আসবেন না। এতে আমার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।'

এই রেস্তোরাঁ মালিকের ভাষ্য, 'এই সমস্যা বহুদিনের। এজন্য সামজের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে।'

বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের লালমনিরহাট জেলা ইউনিটের সাধারন সম্পাদক ঘুগলু বাবু বাঁশফোড় বলেন, 'জেলা প্রশাসকের নির্দেশের ব্যাপারে আমরা নিজেদের মধ্যে কথা বলেছি। সিদ্ধান্ত নিয়েছ আমরা সাহস করে রেস্তোরাঁয় ঢুকে খেতে শুরু করতে। তাতে যা হবার হবে।'

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই বৈষম্যের অবসান ঘটাতে আমরা রেস্তোরাঁ মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের ব্যবস্থা করেছি। ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, নারী-পুরুষ ভেদাভেদ কিংবা জন্মস্থান নিয়ে যাতে কোন বৈষম্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা না ঘটে, সে ব্যাপারে আমরা সজাগ আছি।'

Comments

The Daily Star  | English
Unhealthy election controversy must be resolved

Unhealthy election controversy must be resolved

Just as the fundamental reforms are necessary for the country, so is an elected government.

8h ago