৩ হাজার আফগান শরণার্থীকে আশ্রয় দেবে অস্ট্রেলিয়া

আফগানিস্তানে তালেবান শাসন থেকে পালাতে মরিয়া কাবুলের বিমানবন্দরে বিপুল সংখ্যক জনতার ছবি দেখে বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ হতবাক হয়েছে।
ছবি: সংগৃহীত

আফগানিস্তানে তালেবান শাসন থেকে পালাতে মরিয়া কাবুলের বিমানবন্দরে বিপুল সংখ্যক জনতার ছবি দেখে বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ হতবাক হয়েছে।

দেশ পালানো আফগানদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে অধিকাংশ দেশ তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলেও বেশ কয়েকটি দেশ এখন ধীরে ধীরে সাড়া দিতে শুরু করেছে।

আজ শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন মন্ত্রী অ্যালেক্স হক সংবাদমাধ্যম এসবিএস নিউজকে বলেছেন, 'বিপজ্জনক পরিবেশের মধ্যেও আফগান নাগরিক যারা যুদ্ধের সময় অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কাজ করেছিল তাদের তালেবান অঞ্চল থেকে উড়োজাহাজে সরিয়ে নিতে আমরা কাজ করছি।'

তার মতে, 'অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কাজের কারণে তাদের গ্রেপ্তার বা মৃত্যুদণ্ডের ভয় আছে।'

ইতোমধ্যেই কানাডা ও ব্রিটেন ৪০ হাজার আফগানকে আশ্রয় দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে দুই হাজার আফগান নাগরিককে আশ্রয় দিতে সম্মতি জানিয়েছে পূর্ব আফ্রিকার দেশ উগান্ডা।

দেশত্যাগী আফগানদের আশ্রয় দিতে অন্যান্য দেশের মতো অস্ট্রেলিয়াও মানবিক ভিসায় শরণার্থী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এই কর্মসূচিতে যারা আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে আসছে তাদের মধ্যে তিন হাজারকে ভিসা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, 'অস্ট্রেলিয়ায় যে সব আফগান বাস করছেন তাদের পরিবারের নারী ও শিশু এবং নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'মনে রাখা জরুরি যে, এটি আফগান শরণার্থীদের বিশেষভাবে গ্রহণ কর্মসূচি নয়। অস্ট্রেলিয়া প্রতি বছর যে মানবিক ভিসা দিয়ে থাকে এই তিন হাজার ভিসা তারই অন্তর্ভুক্ত হবে।'

এ বছর অস্ট্রেলিয়া মানবিক ভিসার অধীনে নানা দেশের ১৩ হাজার ৭৫০ শরণার্থী গ্রহণ করবে। গত বছরের বার্ষিক কর্মসূচির সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার ৭৫০ জন।

আফগানদের ভিসা দেওয়ার বিষয়ে অস্ট্রেলিয়া ওই সংখ্যার বাইরে না গিয়ে তিন হাজার ভিসা আলাদা করে রাখছে। আগামী ১০ মাসের মধ্যে এই ভিসাগুলো দেওয়া হবে।

অন্য দেশের নাগরিকদের সঙ্কটে অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ার বিশেষ বিবেচনায় মানবিক ভিসা কর্মসূচি বেশ প্রশংসিত এবং এর ঐতিহ্য দীর্ঘকালের।

১৯৭৫ সালে সায়গন পতনের পর যখন হাজার হাজার ভিয়েতনামী দেশ থেকে পালিয়েছিল তখন থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া প্রায় ৫৫ হাজার ভিয়েতনামীকে আশ্রয় দিয়েছে। একই সময়ে অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে এসে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১২ হাজার কম্বোডীয়কে গ্রহণ করেছে অস্ট্রেলিয়া।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বব হক ৪২ হাজার চীনা নাগরিককে অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দিয়েছিলেন।

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবট ২০১৫ সালে সিরিয়ার ১২ হাজার শরণার্থীকে স্থায়ীভাবে অস্ট্রেলিয়ায় থাকার সুযোগ দিয়েছিলেন।

এ ছাড়াও, ফেডারেল সরকার অস্থায়ী ভিসায় বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় থাকা আফগানদের অনির্দিষ্টকালের জন্য থাকার অনুমতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, 'আমাদের সরকারের পরিকল্পনার অধীনে যারা আসবেন এই ভিসা শুধু তাদের জন্য। কিন্তু, যারা নৌকায় বা অন্য কোনো অবৈধ পথে অস্ট্রেলিয়ায় আসার চেষ্টা করবেন আমরা তাদের গ্রহণ করবো না।'

'আমরা মানুষকে অবৈধভাবে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে দেবো না। এমনকি, এই সময়েও না। আমাদের নীতি বদলায়নি,' যোগ করেন তিনি।

দেশটির সরকার গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, আফগানিস্তানে অস্ট্রেলিয়ান বাহিনীর সঙ্গে যারা গত ২০ বছর ধরে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেছেন তাদের জন্য অন্যান্য ভিসা দেওয়া হচ্ছে। তাদেরকে কাবুল থেকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে উদ্ধার করা হবে।

সরকারের মুখপাত্র বলেছেন, ২০১৩ সাল থেকে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে সাড়ে আট হাজারের বেশি আফগানকে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা দেওয়া হয়েছে।

গত এপ্রিলে আফগানিস্তানে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কাজ করা চার শ'র বেশি আফগান তাদের পরিবার নিয়ে অস্ট্রেলিয়া এসেছেন।

দুই দশকের যুদ্ধ শেষে তালেবানের বিজয়ের পর পশ্চিমের দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করা আফগানদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেও কার্যত তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না।

কট্টরপন্থি তালেবান পশ্চিমের রাষ্ট্রগুলোর সমর্থকদের তালিকা তৈরি করে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে। স্বেচ্ছায় দেশ ছেড়ে যেতে ইচ্ছুকদের বাধা না দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র তালেবানের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে। তা সত্ত্বেও তালেবান বিমানবন্দরের প্রবেশ পথে চেকপোস্ট বসিয়ে দেশ পালানো আফগানদের গ্রেপ্তার করছে।

গত বুধবার অস্ট্রেলিয়ার সামরিক বাহিনীর এক সাবেক আফগান দোভাষী আফগানিস্তান থেকে অস্ট্রেলিয়ান একটি জরুরি উদ্ধার ফ্লাইটে দেশ ছাড়ার জন্য তালেবান চেকপয়েন্ট দিয়ে যাওয়ার সময় কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে পায়ে গুলিবিদ্ধ হন।

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Taka to trade more freely by next month

Bangladesh will introduce a crawling peg system by next month to make the exchange rate more flexible and improve the foreign currency reserves, a key prescription from the International Monetary Fund.

46m ago