‘সিনেমা শিল্পের শিক্ষক ছিলেন আমজাদ হোসেন’

নয়নমনি, ভাত দে, গোলাপি এখন ট্রেনে চলচ্চিত্রের কালজয়ী স্রষ্টা আমজাদ হোসেন। অভিনেতা হিসেবে ছিল তার খ্যাতি। লেখক হিসেবেও বিপুলভাবে সমাদৃত। পরিচালক হিসেবে ১২টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন আমজাদ হোসেন। একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ আরও বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছিলেন জীবদ্দশায়।
আজ ১৪ ডিসেম্বর আমজাদ হোসেনের প্রয়াণ দিবস। তার সম্পর্কে জানতে দ্য ডেইলি স্টারের কথা বলেছে চিত্রনায়িকা ববিতা ও রোজিনা, চিত্রনায়ক ফেরদৌস এবং আমজাদ হোসেনের ছেলে সোহেল আরমানের সঙ্গে।

প্রত্যেকে আমজাদ হোসেনের সঙ্গে তাদের নানান স্মৃতি নিয়ে কথা বলেছেন।
চিত্রনায়িকা ববিতা বলেন, 'আমজাদ হোসেন বেঁচে থাকবেন কালজয়ী সিনেমা দিয়ে। তার মতো পরিচালকের মৃত্যু নেই। তার সিনেমারও মৃত্যু নেই। এতো গুণ সম্পন্ন মানুষ আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে কমই ছিলেন।'
তিনি বলেন, 'তার পরিচালিত গোলাপী এখন ট্রেনে এবং নয়নমনি সিনেমা ২টি আমাকে দিয়েছিল বেশ দর্শকপ্রিয়তা ও ভালোবাসা। এখনো মানুষের মুখে নয়নমনি, গোলাপি এখন ট্রেনে সিনেমার কথা শুনতে পাই। আমজাদ হোসেন আমার খুব প্রিয় একজন পরিচালক। খুব পছন্দ করতাম তাকে। সম্মানও করতাম। তিনি শুধু দিয়ে গেছেন চলচ্চিত্রে। তার সিনেমার আবেদন কখনো শেষ হবে না। তার সিনেমা মাইলস্টোন হয়ে থাকবে।'
চিত্রনায়িকা রোজিনা বলেন, 'অনেক কিছু শিখেছি তার কাছ থেকে। আমজাদ হোসেনের সিনেমায় অভিনয় করে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলাম। সিনেমার নাম কসাই। আমার জীবনের বড় পাওয়া এটি। আমাদের দেশের সিনেমা শিল্পকে যারা সমৃদ্ধ করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম একজন পরিচালক আমজাদ হোসেন।'
তিনি বলেন, 'অনেক কিছু শিখেছি তার কাছ থেকে। এ জন্য তাকে শিক্ষক বলব। চলচ্চিত্রের জন্য শিক্ষক ছিলেন তিনি। আমজাদ হোসেন পরিচালক, অভিনেতা, কাহিনীকার, আবার লেখক হিসেবেও বিখ্যাত ছিলেন। তার সঙ্গে কাজ করে বুঝেছি তিনি ক্যামেরার সামনে অসাধারণ মানুষ ছিলেন। ক্যামেরার ভাষা অনেক বেশি বুঝতেন। কাজের প্রতি তার যত্নের ছোঁয়াটা বেশি থাকত। শতভাগ নিখুঁত হওয়ার পরই তিনি কাজটি চূড়ান্ত করতেন।'
চিত্রনায়ক ফেরদৌস বলেন, 'এ দেশের সিনেমা শিল্পের শিক্ষক ছিলেন আমজাদ হোসেন। আমজাদ হোসেন ছিলেন আমাদের সিনেমার ইনস্টিটিউট। আমাদের এখানে ওইভাবে অভিনয় শেখার কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। তার কাছ থেকে যতটুকু শিখেছি সারাজীবন মনে থাকবে। একজন মানুষ কত গুণের অধিকারী হতে পারে তা শুধু আমজাদ হোসেনকে দেখেই বোঝা যেত।'
তিনি বলেন, 'পরিচালক হিসেবে যতটা সফল ছিলেন ততটাই সফল ছিলেন অভিনেতা হিসেবেও। মনে পড়ে, প্রাণের মানুষ সিনেমায় অভিনয় করার সময় আমাকে ও শাবনুরকে নিখুঁতভাবে অভিনয় বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। চোখের তাকানোটা কেমন করে তাকাবো সেটাও সুন্দর করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। এ ছাড়া কাঁদার দৃশ্যে অভিনয় দেখানোর সময় তিনি কেঁদে ফেলতেন।'
ফেরদৌস বলেন, 'ইমোশনাল দৃশ্যে অন্য আমজাদ হোসেনের দেখা পেয়েছি তার পরিচালিত সিনেমা করতে গিয়ে। গোলাপী এখন বিলেতে সিনেমার শুটিং করতে আমরা লন্ডনে গিয়েছিলাম। সেখানকার বহু স্মৃতি মনে পড়ে। একটা সময় তিনি বন্ধুর মতো হয়ে গিয়েছিলেন। আজ তিনি নেই। কিন্তু তার কথাগুলো আজও কানে বাজে।'
সোহেল আরমান বলেন, 'বাবাকে সব সময় মিস করি। অনেক কষ্ট হয় বাবাকে ছাড়া। বাবার লেখার টেবিলটার দিকে তাকালে মনে পড়ে বাবার শূণ্যতা। বাবার শূণ্যতা কখনোই পূরণ হবে না।'
তিনি বলেন, 'বাবা একজন শিক্ষকও ছিলেন আমার কাছে। বাবার কাছ থেকে শিখেছি অনেক কিছু। বাবাকে নিয়ে বলে কখনোই শেষ করা যাবে না। আমি গর্ববোধ করি আমজাদ হোসেনের সন্তান হিসেবে। বাবার জন্য এখনো মন কাঁদে। বাবা যেখানে আছো, ভালো থেকো। তোমার প্রতি ভালোবাসা চিরদিন থাকবে।'
Comments