মুক্তচিন্তার পথিক: কামাল হোসেন

ড. কামাল হোসেনের সবচেয়ে বড় পরিচয়, তিনি বাংলাদেশের সংবিধানের স্থপতি। এছাড়াও তিনি মত প্রকাশের স্বাধীনতার নিরলস সমর্থক এবং মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের অবিচল রক্ষক। একজন আইনজ্ঞ, রাজনীতিবিদ এবং আইনজীবী হিসাবে তিনি দেশের রাজনৈতিক ও আইনি পটভূমিতে গভীর প্রভাব রেখেছেন।
কামাল হোসেন। স্কেচ: সজীব

প্রতিষ্ঠার ৩৩ বছরে পদার্পণে বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার প্রচার ও প্রসারে নিরলস কাজ করা ১২ কীর্তিমানকে 'সেনটিনেল অব ফ্রিডম অব থট' সম্মাননা দিচ্ছে দ্য ডেইলি স্টার।

আজ শনিবার ঢাকার র‌্যাডিসন ব্লু হোটেলে আয়োজিত এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার পাটাতন তৈরিতে অগ্রগামী এবং চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গীকারবন্ধ এই ১২ সূর্যসন্তানকে সম্মাননা দেওয়া হবে।

তাদেরই একজন কামাল হোসেন

ড. কামাল হোসেনের সবচেয়ে বড় পরিচয়, তিনি বাংলাদেশের সংবিধানের স্থপতি। এছাড়াও তিনি মত প্রকাশের স্বাধীনতার নিরলস সমর্থক এবং মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের অবিচল রক্ষক। একজন আইনজ্ঞ, রাজনীতিবিদ এবং আইনজীবী হিসাবে তিনি দেশের রাজনৈতিক ও আইনি পটভূমিতে গভীর প্রভাব রেখেছেন।

ড. কামাল হোসেন ১৯৩৭ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সময় বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি অন্যান্য বিশিষ্ট আইনজীবীদের সঙ্গে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিনিধিত্ব করেন। সে সময় আইন বিশেষজ্ঞ হিসাবে তিনি তার দক্ষতা এবং ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের প্রতি অঙ্গীকার প্রদর্শন করেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ড. কামাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারে আইনমন্ত্রী, তেল ও খনিজসম্পদ মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তাকে বাংলাদেশের সংবিধানের খসড়া প্রণয়নের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার নেতৃত্বে প্রণীত সংবিধানে স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটে। পরবর্তীতে এসব মূল্যবোধই হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি।

বিশিষ্ট সাংবিধানিক আইনজীবী হিসেবে ড. কামাল হোসেন মৌলিক মানবাধিকার, বিশেষ করে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় তার কর্মজীবন উৎসর্গ করেছেন। তিনি ধারাবাহিকভাবে সাংবাদিক ও মুক্ত গণমাধ্যমের ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করে গেছেন। যখনই কোনো সাংবাদিক তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন, তখনই তিনি তাদের বিনা খরচে বিশেষায়িত আইনি সহায়তা দিয়েছেন। তিনি একইসঙ্গে বাংলাদেশ লিগাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি এবং সভাপতি। এটি একটি আইনি সংগঠন যারা প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে আইনি সেবা দেওয়ার দিকে বিশেষ নজর দেয়।   

ড. কামাল হোসেন বৈশ্বিক অঙ্গনেও উল্লেখযোগ্য প্রভাব রেখেছেন। তিনি জাতিসংঘের কমপেনসেশন কমিশনে ২ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন এবং আফগানিস্তানে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কিত বিশেষ দূত হিসেবেও কাজ করেন। পরবর্তীতে তিনি একাধিক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের সভাপতি ও সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যার মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস ও ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউট উল্লেখযোগ্য।

দ্য ডেইলি স্টার গর্বের সঙ্গে ড. কামাল হোসেনকে স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের প্রবক্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে আমরা স্বাধীন চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে তার অসামান্য ও নিরলস উদ্যোগের উদযাপন করছি। 

Comments

The Daily Star  | English
interim government struggles with decision-making

Interim govt struggling on many fronts

The government on around a dozen occasions has backtracked on its decisions during its two months in office, casting doubts about its resolve.

12h ago