দক্ষিণ আফ্রিকায় কেন এমন বেহাল দশা?

আউট হয়ে হতাশ মুশফিক। ছবি: এএফপি

দেশের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট জিতে চাঙা হয়েই দক্ষিণ আফ্রিকায় উড়াল দিয়েছিল বাংলাদেশ। কন্ডিশন বিরুদ্ধ বটে, সাকিব আল হাসানও ছিলেন বিশ্রামে। তবু টেস্টে গেল বছর দুয়েকের পারফরম্যান্সে আশা দেখছিলেন অনেকেই। হয়েছে ঠিক উল্টো। দুই টেস্টেই শোচনীয় হার, একশর নিচে অলআউটের বিব্রতকর অভিজ্ঞতা, সিরিজে হোয়াইটওয়াশ। সবই ফিরিয়ে এনেছে সেই পুরনো দিনের  বাংলাদেশকে। কেন এমন বেহাল দশা?

প্রোটিয়া বোলিং অ্যাটাকে ডেল স্টেইন, ভারনন ফিল্যান্ডার, ক্রিস মরিস ছিলেন না। দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে পারেননি মরনে মরকেলও। এক কাগিসো রাবাদার পেসের ঝাঁজেই নাজেহাল হয়েছেন টাইগার ব্যাটসম্যানরা।

বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের কোচ সারোয়ার ইমরান দ্য ডেইলি স্টারকে  বলেন, ‘দলে টিম স্পিরিট ছিল না। যেরকম বলা হয়েছে বাউন্সি উইকেট হবে, আসলে উইকেটও ভাল ছিল, সবই ঠিক ছিল। ওইজন্য আমাদের পেস বোলাররা ভালো বোলিং করতে পারে নাই। আর ওরা শর্ট বল করে করে আমাদের সমস্যায় ফেলেছে।’

যে পিচে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা আগুন ঝরিয়েছেন। সেখানেই ম্রিয়মাণ মোস্তাফিজরা। আবার ব্যাট হাতে যেখানে রান ফোয়ারা ছুটিয়েছেন হাশিম আমলারা সেখানেই মুশফিকদের অবস্থা তথৈবচ। সরওয়ার ইমরান নিজে পেসার ছিলেন। তার হাত দিয়ে উঠে এসেছেন অনেক টাইগার পেসার। শিষ্যদের শক্তি, দুর্বলতা সবই জানেন তিনি। ব্যাখ্যায় বললেন,  ‘এসব পিচে ১২৫, ১৩০ গতিতে বল করে কিছু করা যায় না। ১৪০ প্লাস গতি লাগে।’

বোলাররা কমজোরি। তেতে  উঠে কাবু করতে পারেননি বিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু ব্যাটিংয়ের কেন এমন হাল? বিসিবির গেম ডেভলাপমেন্টে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত নাজমুল আবেদিন ফাহিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সাউথ আফ্রিকার উইকেটের পেসের কথা আমি বলব না, কিন্তু বাউন্সটা বোধহয় খুব কঠিন ছিল। এটা সামলাতে পারেনি। বাউন্সে যে আমরা দুর্বল এটা উন্মোচন হয়ে গেছে। তারপরও আরও বড় ব্যাপার যে প্রথম টেস্টে তামিম ভাল খেলেনি। দ্বিতীয় টেস্টে তো খেলেইনি। আমাদের রিলাই করার মতো বেশি ব্যাটসম্যান ছিল না। আমাদের টপ অর্ডারে এমন কেউ ছিল না যে সাহস নিয়ে হেন্ডেল করবে। এখনে সাহসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবাই সারভাইব করার চেষ্টা করেছে এবং ব্যর্থ হয়েছে।’

দেশের মাঠে পেস বান্ধব উইকেট পাননা বলে পেসারদের যতো আক্ষেপ। দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে পেস বান্ধব উইকেটেই বা তেজ দেখাতে পারলেন কই? দুই টেস্ট খেলে কোন পেসারই পারেননি তিনটির বেশি উইকেট নিতে। ওদিকে কাগিসো রাবাদা দুই টেস্টেই নিয়েছেন ১৫ উইকেট। ফারাকটা কোথায়?

একসময়ের বিকেএসপি কোচ ফাহিম বুঝিয়ে বললেন, ‘এক, আমাদের বোলারদের উচ্চতার অভাব। আর দুই, বাউন্স এক্সট্রাক্ট করার জন্য ওইধরনের বোলিং করতে অভ্যস্ত হতে হয়। ঘরোয়া ক্রিকেটে আমাদের পেসারদের বাউন্স দিতে দেখা যায় না কারণ পিচ থেকে এই বাউন্সটা আমরা পাই না।’

তারমতে, ‘সাউথ আফ্রিকান বোলাররা যে বল করেছে আমাদের বোলাররা তো সেই বল করেনি। আমাদের ব্যাটসম্যানদের জন্য ডিগ্রি অব ডিফিকাল্টি দশের মধ্যে আট ছিল। ওদের ব্যাটসম্যানদের জন্য তা ছিল দশের মধ্যে তিন। আমাদের বোলাররা যে হুমকি দিতে পেরেছে সেটা একেবারেই মামুলি।’

দুই টেস্টেই টস জিতে ফিল্ডিং নেয় বাংলাদেশ। সফরকারীদের এমন সিদ্ধান্তে বিস্ময় লুকাননি প্রোটিয়া অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিও। এমনকি দ্বিতীয় টেস্টের আগে মুশফিকুর রহিমকে এই নিয়ে খোঁচাও দিয়েছিলেন তিনি। টসের ভুল সিদ্ধান্ত, দুর্বল শরীরী ভাষায় বিস্তর সমালোচনা হচ্ছে চারপাশে। কেউ দুষছেন মুশফিকুর রহিমকে। কারো তীর টিম ম্যানেজমেন্টের দিকেই।

ইমরান বলেন, ‘টস জিতে ব্যাটিং না নেয়া একা ক্যাপ্টেনের সিদ্ধান্ত না। টিম ম্যানেজমেন্ট আছে, সবার সিদ্ধান্ত এটা।’ টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত মুশফিকের একার নয়। একমত ফাহিমও। তবে আগে ব্যাটিং নিলেও ভিন্ন কিছু হতো বলে মনে করেন না তিনি, ‘আমরা আগে ব্যাট করলেই অনেক রান করতাম তেমনটা আমার মনে হয় না। কারণ আমরা যখন ব্যাট করেছি তখনো কিন্তু উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য আদর্শ ছিল। ওদেরকে ব্যাটিং দেওয়ার কারণে যেটা হয়েছে তারা শুরুতেই গ্রিপে নিয়ে নিয়েছে ম্যাচ। তবে আমরা আগে ব্যাটিং নিয়ে ১২০ রানেও গুটিয়ে গেলেও কিন্তু ব্যাপাররা একই রকম হতো। হ্যাঁ যে উইকেটে ব্যাটিং করা যায় সেখানে টস জিতে ব্যাটিং করলে পজেটিভ অপ্রোচ দেয় দলে। সেদিক থেকে এটা অবশ্যই ঠিক সিদ্ধান্ত নয়।’

টেস্টে অমন হারের স্মৃতি তাজা থাকতেই রঙ্গিন পোশাকে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। দলের সঙ্গে এরমধ্যে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা, সহ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান যোগ দিয়েছেন। সাদা পোশাকে দুঃসহ স্মৃতি কি আড়াল করা যাবে?

সরওয়ার ইমরান মনে করছেন টেস্টের খারাপ ফলের প্রভাব পড়বে ওয়ানডেতেও, ‘আমি মনে করি ওয়ানডেতে এর প্রভাব থাকবেই। এখান থেকে দল ঘুরে দাঁড়ানো একটু কঠিন।’

ভিন্নমত নাজমুল আবেদিন ফাহিমের, ‘আমার ধারনা গত তিন চার বছরে যা অর্জন করেছি একটা প্রসেসের মধ্য দিয়েই এসেছে। তা হঠাৎ করে আসেনি, হঠাৎ করে যাবেও না। সীমিত ওভারের ক্রিকেট কীভাবে খেলতে হয় তা আমরা ভাল করেই জানি। আর কন্ডিশনকে ওয়ানডেতে ওইভাবে ব্যবহারের সুযোগ নেই। তাছাড়া সাকিব, মাশরাফি যোগ দিচ্ছে। ওয়ানডেতে ভালো ফল হবে।’

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে পচেফস্ট্রমে প্রথম টেস্ট ৩৩৩ রানে হারে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টেস্টে স্বাগতিকদের কাছে উড়ে যায় ইনিংস ও ২৫৪ রানে। ১৫ অক্টোবর থেকে শুরু হবে দুদলের তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। পরে দুটি টি-টোয়েন্টি দিয়ে শেষ হবে টাইগারদের কঠিন সফর।

Comments

The Daily Star  | English

US tariff talks: First day ends without major decision

A high-level meeting between Bangladesh and the Office of the United States Trade Representative (USTR) ended in Washington, DC, yesterday without a major decision, despite the looming expiry of a 90-day negotiation window on July 9.

5h ago