মোবাইলের কলরেট পরিবর্তনের উদ্যোগ নিচ্ছে বিটিআরসি

​বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) মোবাইল ফোনের কলরেটে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছে। বিটিআরসির এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে গ্রাহক পর্যায়ে ফোনে কথা বলার খরচ বাড়বে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) মোবাইল ফোনের কলরেটে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছে। বিটিআরসির এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে গ্রাহক পর্যায়ে ফোনে কথা বলার খরচ বাড়বে।

গত ২৪ জুলাই বিটিআরসির এক বৈঠকে একই অপারেটরের মধ্যে (অন-নেট) সর্বনিম্ন কলরেট ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি ও আন্তঅপরেটর সর্বনিম্ন কলরেট (অফ নেট) ২৫ শতাংশ হ্রাস করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

কলরেট পরিবর্তনের প্রস্তাবটি গত সপ্তাহে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বিটিআরসি। এর যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, নতুন কলরেটে অন-নেট ও অফ-নেট কল চার্জের মধ্যে ফারাক কমবে। উন্নত বিশ্বে দুধরনের কল রেটের মধ্যে পার্থক্য কম বলেও উল্লেখ করেছে বিটিআরসি।

বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটররা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে তারা নিজেরা টেলিকম রেগুলেটর বা সরকারের কাছে কোনো প্রস্তাব দেয়নি।

ব্যবসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিটিআরসির প্রস্তাব মোতাবেক কলরেটে পরিবর্তন আসলে বেসরকারি তিন অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংকের—প্রতি মাসে ১২১ কোটি টাকা আয় বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিটকের আয় প্রতি মাসে চার কোটি কমবে।

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম বাড়াতে গত মাসে বিটিআরসি পৃথক একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে টেলিকম ডিভিশনে। এই প্রস্তাব এখনও অনুমোদন পায়নি। চলতি বাজেটেও সরকার মোবাইল সেট আমদানিতে পাঁচ শতাংশ আমদানি শুল্ক বাড়িয়েছে।

গত ২৪ জুলাইয়ের বৈঠকে বিটিআরসি অন-নেট সর্বনিম্ন কলরেট মিনিট প্রতি ২৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩৫ পয়সা ও অফ-নেট সর্বনিম্ন কলরেট ৬০ পয়সা থেকে কমিয়ে ৪৫ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে।

আরও পড়ুন: মোবাইল ডেটার দাম নির্ধারণ করে দিবে বিটিআরসি

নতুন কলরেটের প্রস্তাব সম্পর্কে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ গত রাতে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, গত সপ্তাহে আমরা প্রস্তাবটি সরকারের কাছে পাঠিয়েছি। তবে এটি চূড়ান্ত নয়। এটা নিয়ে আরও আলোচনা করে প্রস্তাবিত কলরেটে পরিবর্তন আসতে পারে।

কলরেটের এই পরিবর্তনের ফলে গ্রাহককে বেশি টাকা গুণতে হবে সেটা মানছেন মোবাইল টেলিকম অপারেটরদের সংগঠন এমটব’র সাধারণ সম্পাদক টিআইএম নরুল কবিরও। তিনি বলেছেন খরচ বাড়লেও এটা গ্রাহকদের জন্য অসহনীয় নয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়লেও কলরেট ও গ্রাহক প্রতি মাসিক রেভিনিউ সারা বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। মোবাইল অপারেটরদের আয়ের ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশই সরকার পায়। এর ফলে কলরেট বাড়লে সরকারেরও আয় বাড়বে। এটা দু পক্ষের জন্যই লাভজনক হবে।

টেলিফোন অপারেটর খরচও গত কয়েক বছরে বেড়েছে। সে তুলনায় ভয়েস কল থেকে আয় বাড়েনি। বাজারে প্রচণ্ড প্রতিযোগিতার কারণে ভয়েস কলের আয় সর্বনিম্ন পর্যায়ে এসে আটকে রয়েছে, যোগ করেন তিনি।

সর্বোচ্চ কলরেটেও পরিবর্তন আনার প্রস্তাব দিয়েছে বিটিআরসি। বর্তমানে অপারেটররা গ্রাহককে প্রতি মিনিটে ২টাকার বেশি চার্জ করতে পারে না। নতুন প্রস্তাবে এটা প্রতি মিনিটে দেড় টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে বেশিরভাগ অপারেটরেই সর্বোচ্চ কলরেট ২টাকার কম হওয়ায় সিলিং পরিবর্তনের তেমন কোন প্রভাব পড়বে না বলেই ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

২০১০ সালে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের সহায়তায় কস্ট মডেলিংয়ের মাধ্যমে অপারেটরদের জন্য সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ কলরেট বেঁধে দিয়েছিল বিটিআরসি। তার আগে ভয়েস কলের মূল্য নির্ধারণে কোনো কস্ট মডেলিং ছিল না বাংলাদেশে। কয়েক বছর আগেও অপারেটররা এর সুযোগে মিনিট প্রতি সাত থেকে ১০টাকা পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করেছে।

এবার বিটিআরসি নিজেই কলরেট নির্ধারণের জন্য গবেষণার কাজটি করেছে। এর ফলাফলে দেখা যাচ্ছে প্রস্তাব অনুযায়ী কলরেট বাস্তবায়িত হলে বড় অপারেটররা লাভবান হবে ও টেলিটক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago