স্পেনের ‘কৃষি মডেল’ প্রয়োগ করতে চায় বাংলাদেশ
বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে বাণিজ্যিকীকরণের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে ইউরোপের দেশ স্পেন সফর করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। ৫ দিনের সফরকালে প্রতিনিধিদল কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের পাশাপাশি স্পেনের আলমেরিয়ার কৃষি মডেল বাংলাদেশে প্রয়োগ এবং এর সম্ভাব্যতা যাচাই করেন।
গত ২৫ মে বাণিজ্যমন্ত্রীসহ বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল আলমেরিয়া প্রদেশ সফরকালে টেকনোভা ফাউন্ডেশনের প্রযুক্তি কেন্দ্র, বায়োটেকনোলজি কোম্পানি বায়োরিজন, ফ্রেশ ফল ও সবজি সরবরাহকারী কোম্পানি প্রাইমাফ্লোর এবং সমবায় কেন্দ্র কোপ্রোনিখার পরিদর্শন করেন।
এ সময় আলমেরিয়ার কৃষি; বিশেষ করে- পারিবারিক খামার, উচ্চ ফলনশীল খোলা উৎপাদন পদ্ধতি, হাইড্রোপনিক চাষ পদ্ধতি, সমবায়ের ভিত্তিতে মার্কেটিং ও বিক্রয় পদ্ধতি, সার্টিফিকেশন পদ্ধতি এবং প্যাকেজিং সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা নেন প্রতিনিধি দল।
দক্ষিণ-পূর্ব স্পেনে অবস্থিত আলমেরিয়া প্রদেশটি ইনটেনসিভ এগ্রিকালচারের কারণে টেকসই কৃষি উন্নয়নের উদাহরণ। স্পেনের শীর্ষ ফল এবং সবজি উৎপাদনকারী প্রদেশটি দেশটির জাতীয় ফল এবং সবজি উৎপাদনের ৫০ শতাংশের বেশি প্রতিনিধিত্ব করে। এটি ইউরোপের বৃহত্তম কোঅপারেটিভ সবজি চাষের এলাকা। এখানকার উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি রফতানি করা হয় এবং এই অর্থনৈতিক বিপ্লব মাত্র ২৬ হাজার ২০০ হেক্টর এলাকায় ঘটেছে।
আলমেরিয়ার কৃষকদের গড় জমির পরিমাণ হল এক দশমিক ৫ হেক্টর অর্থাৎ বেশিরভাগ উৎপাদন কেন্দ্রই ক্ষুদ্র বা পারিবারিক কৃষকদের হাতে যারা কৃষি সমবায়ের সদস্য। আলমেরিয়া মডেলটিকে কৃষি উৎপাদনের একটি সম্পূর্ণ ইকোসিস্টেম এবং কৃষি ক্ষেত্রে একে বিপ্লব হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
এ উপলক্ষে বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল উইংয়ের উদ্যোগে আলমেরিয়া চেম্বার অব কমার্স ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের একটি বৈঠক হয়।
বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আলমেরিয়া কৃষির মডেলটি কীভাবে তৈরি হয়েছে, কীভাবে কাজ করছে তা বোঝার জন্য আমরা সরেজমিনে দেখতে এসেছি। স্পেনের দরিদ্রতম প্রদেশ থেকে আলমেরিয়া কৃষির মাধ্যমে যেভাবে উন্নতি করেছে, ধনী হয়েছে সেটা বাংলাদেশকেও করতে হবে এবং এই মডেল আমাদের দেশকে সাহায্য করতে পারে।
টিপু মুনশি আরও বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে আলমেরিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা এবং দুই দেশের ব্যবসায়িক খাতের মধ্যে যোগাযোগ পারস্পরিক সুবিধা বৃদ্ধি করবে এবং তা আকর্ষণীয় হতে পারে।
আলমেরিয়া চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খেরোনিমো পাররা বলেন, ১৬ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশ আমাদের প্রধান শিল্পের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে, এটা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের বিষয়। বাংলাদেশকে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। পাশাপাশি আমরাও বাংলাদেশ থেকে প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ে আগ্রহী।
বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ, এনডিসি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ মোস্তফা জামাল হায়দার, কমার্শিয়াল কাউন্সেলর রেদোয়ান আহমেদ, সাবেক বিজিএমইএ সভাপতি ও ব্যবসায়ী কুতুবউদ্দিন আহমেদ, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ব্যবসায়ী কে এম আখতারুজ্জামান এবং স্পেন বাংলাদেশ চেম্বার ও কমার্সের সভাপতি নুরিয়া লোপেজ উপস্থিত ছিলেন।
লেখক: স্পেনপ্রবাসী সাংবাদিক
Comments