আমার বাবা কই?
অন্য সবার মতো ৭ বছরের হুমায়রার কাছে বাবাই ছিল সবচেয়ে কাছের পৃথিবী, তার দুরন্তপনার সঙ্গী, সব আবদার মেটানোর ভরসাস্থল।
ঈদ উপলক্ষে বাবা মোরসালিনের কাছে স্কুলব্যাগ, মাথার ব্যান্ড আর কসমেটিকস চেয়েছিল হুমায়রা। এগুলো পাওয়ার আশ্বাসও মিলেছিল। কিন্তু তার বাবা যে না ফেরার দেশে চলে গেছে, তা ঠিক বুঝতে চাইছিল না ছোট্ট হুমায়রা।
তাই বাড়ি ভর্তি মানুষ, কান্না আর আহাজারির মধ্যেও শিশুটি তার বাবাকে খুঁজে ফিরছিল। একে ওকে প্রশ্ন করছিল—আমার বাবা কই?
রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে আহত দোকান কর্মচারী মো. মোরসালিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মারা যান।
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার কানাইনগর গ্রামের মৃত মানিক মিয়ার ছেলে মোরসালিন স্ত্রী ও ২ সন্তান নিয়ে কামরাঙ্গীরচর পশ্চিম রসুলপুরে ভাড়া থাকতেন।
মোরসালিনের মেয়ে হুমায়রা ইসলাম লামহার বয়স ৭ বছর আর ছেলে আমির হামজার বয়স ৪ বছর। পরিবারে ২ ভাই, এক বোনের মধ্যে মোরসালিন ছিলেন দ্বিতীয়।
মোরসালিন নিউ সুপার মার্কেটে একটি শার্টের দোকানে কাজ করতেন।
আজ দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে মোরসালিনের মরদেহ তখন কামরাঙ্গীরচরের রসুলপুরের পথে। সে সময় বাসায় মোরসালিনের মেয়ে হুমায়রা ও স্ত্রী মিতুর সঙ্গে কথা হয় দ্য ডেইলি স্টারের।
বাবা যে নেই, তা মানতেই চাইছিল না হুমায়রা। তাই কাঁদতে কাঁদতে এর ওর কাছে বাবার খোঁজ চেয়ে বেড়াচ্ছিল শিশুটি।
এ সময় মোরসালিনের শোকাতুর স্ত্রী মিতু বলেন, 'বাবার কাছেই মেয়ের সব আবদার ছিল। ঈদে বাবার কাছে স্কুলের ব্যাগ, মাথার ব্যান্ড আর কসমেটিকস চেয়েছিল সে। এখন কে ওর আবদার পূরণ করবে?'
স্বামীর মৃত্যুতে তীব্র শোক ছাপিয়ে ২ সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন এই মা বলে ওঠেন, 'আমার শরীর অসুস্থ থাকে। ঘরের কাজই করতে পারি না। এখন আমার বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ কে দেখবে?'
উপস্থিত কেউই মিতুর এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি।
Comments