খুলনায় মাদ্রাসা অধ্যক্ষকে মারধর: ইউপি চেয়ারম্যান জেলহাজতে

খুলনার কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। ছবি: সংগৃহীত

খুলনার কয়রা উপজেলায় মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে পিটিয়ে জখমের ঘটনায় সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলামকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন আদালত।

আজ শুক্রবার পাইকগাছা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আনারুল ইসলাম তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

বৃহস্পতিবার রাতে খুলনা শহরের বাসা থেকে বাহারুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ বি এম এস দোহা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে অধ্যক্ষের স্ত্রী বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০-১৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলার অন্যতম আসামি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব আমাদের কাছে হস্তান্তর করে। পরে আসামিকে পাইকগাছা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে বিচারক আনারুল ইসলাম তাকে জেলহাজতে পাঠান।'

গত সোমবার কয়রা উত্তরচক আমিনীয়া বহুমুখী কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাসুদুর রহমানকে পিটিয়ে জখম করেন অভিযুক্ত চেয়ারম্যান।

আহত মাসুদুর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সোমবার মাদ্রাসায় কাজ করছিলেন অধ্যক্ষ মাসুদুর। এসময় সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম বাহারুল ইসলামের নেতৃত্বে স্থানীয় ইউনুসুর রহমান, নিয়াজ হোসেন, মাসুদুর রহমান, মিলন হোসেন, জহুরুল ইসলাম, রিয়াল, আমিরুল, অমিত মণ্ডল, রফিকুল গাজী ও সাদিকসহ ১৫-২০ জন তাকে জোর করে রুম থেকে বের করে নিয়ে যান বলে জানান অধ্যক্ষ।

তিনি বলেন, 'প্রতিষ্ঠানের সাবেক অধ্যক্ষ মোস্তফা আব্দুল মালেকের উপস্থিতিতে বাহারুল আমাকে গালাগাল করতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা আমাকে ফেলে চোখে, ঘাড়ে, কানে ও পিঠে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন। এরপর সেখান থেকে তুলে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখেন। সেখানেও আমাকে বেদম মারপিট করা হয়।'

'এতে আমার চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কানের পর্দা ফেটে যায়। একপর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি', বলেন তিনি।

অধ্যক্ষ আরও বলেন, 'জ্ঞান ফিরলে চেয়ারম্যান আমাকে মাদ্রাসা থেকে পদত্যাগ করতে বলেন। পরে কয়রা থানার এস আই মনিরুল ইসলাম আমাকে উদ্ধার করেন।'

তিনি বলেন, 'প্রথমে আমাকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা।'

অধ্যক্ষ জানান, তার মাদ্রাসাটি ঢাকার ইসলামিক অ্যারাবিক ইউনিভার্সিটির আওতাভুক্ত। ৩ মাস আগে কলেজে সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩ জনের নাম চাওয়া হয়েছিল। তখন চেয়ারম্যান বাহারুল তার নাম দেওয়ার জন্য অধ্যক্ষকে জোর করেছিলেন।

তিনি বলেন, 'বাধ্য হয়ে বাহারুলসহ ৩ জনের নাম প্রস্তাব করেছিলাম। তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেটা রিজেক্ট করে নতুন কমিটি দিতে বলা হয়েছিল।'

'পরে আমি মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ-আল মাহমুদসহ ৩ জনের নাম প্রস্তাব করে আরেকটি কমিটি জমা দিই। তখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মহারাজপুরের চেয়ারম্যানকে সভাপতি ঘোষণা করা হয়', যোগ করেন তিনি।

অধ্যক্ষ বলেন, 'এরপর থেকেই সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাহারুল আমাকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিলেন।'

'এরপর সোমবার তিনি আমাকে তুলে নিয়ে মারধর করেছেন। বলেছেন, অধ্যক্ষের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে। না হলে এলাকায় ফিরতে পারব না। থানায় জানালেও মামলা না নিয়ে প্রথমে বিষয়টি মিটমাট করতে বলা হয়েছিল। পরে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হলে থানায় মামলা নিয়েছে', বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

SSC examinee dies in Uttara road crash after leaving exam centre

Nayeem's classmate Pallab Kumar Shil said they were students of Uttara High School and were appearing for their SSC exams this year

18m ago