লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম

ওএমএস’র দোকানে ভিড়, চাল না পেয়ে হতাশ

লালমনিরহাট শহরের সাপ্টানা বাহাদুর মোড় এলাকায় চালের জন্য ওএমএস দোকানে ভিড়। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

বাজারে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ৩০ টাকা কেজি দরে চাল কেনার জন্য ওএমএস (ওপেন মার্কেট সেল) দোকানগুলোতে ভিড় করছেন মানুষ।

শুধু নিম্নআয়ের মানুষই নন, মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনও খোলা বাজার দরে চাল কেনার জন্য ওএমএস দোকানগুলোয় ভিড় করছেন।

লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম শহরে ৩২টি ওএএম দোকানে প্রতিদিন ১৪ মেট্রিক টন চাল বিক্রি হয়। প্রত্যেক সুবিধাভোগীর সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল কেনার সুযোগ থাকলেও মানুষের ভিড় বেড়ে যাওয়ায় ২ থেকে ৩ কেজি করে চালও তারা কিনতে পারছেন না।

তারপরও বেশিরভাগ মানুষকে চাল না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যেতে হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি, ওএমএস দোকানে চালের সরবরাহ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সুবিধাভোগীরা।

খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস সূত্র জানায়, ৩০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করতে লালমনিরহাট শহরে ১৩ জন ডিলারের জন্য প্রতিদিন ৫ মেট্রিক টন ও কুড়িগ্রাম শহরে ১৯ জন ডিলারের জন্য ৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এতে প্রত্যেক ডিলার ভাগে ৪৩৮ কেজি চাল বিক্রির সুযোগ পান।

ওএমএস ডিলাররা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা যে পরিমাণ চালের বরাদ্দ পান তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। সকাল ৯টায় ওএমএস দোকান খোলা হয়। কিন্তু, সকাল ৬টা থেকে দোকানের সামনে লোকজন ভিড় করতে থাকেন।

তারা আরও জানান, কয়েকদিন আগেও শুধু নিম্নআয়ের মানুষকে ভিড় করতে দেখা গিয়েছিল। এখন মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনকেও দেখা যাচ্ছে।

ওএমএস দোকানে চাল কিনতে আসা বেশিরভাগ মানুষ চাল না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন উল্লেখ করে তারা বলেন, এতে লোকজন ওএমএস ডিলারদের সন্দেহ করছেন।

লালমনিরহাট শহরের ওএমএস ডিলার আব্দুর রহিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রত্যেক ডিলার প্রতিদিন দেড় থেকে ২ মেট্রিক টন চালের বরাদ্দ পেলে তারা সুবিধাভোগীদের চাহিদা পূরণ করতে পারবেন। অল্প সময়ের মধ্যেই বরাদ্দকৃত চাল বিক্রি শেষ হয়ে যায়। লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষমাণ অনেক সুবিধাভোগীকে খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে।'

'গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ওএমএস দোকানগুলোয় চালের জন্য মানুষর ভিড় কয়েকগুণ বেড়েছে,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

লালমনিরহাট পৌরসভার রিফুজি কলোনির দিনমজুর মেহের আলী (৪৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাজারে প্রতি কেজি চাল ৪৪ টাকা থেকে ৫৫ টাকা দরে কিনতে হয়। ওএমএস দোকানে প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা দরে কেনা যায়। কিন্তু, ওএমএস দোকানে সবসময় চাল পাওয়া যায় না। ২ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরও খালি হাতে ফিরে আসতে হয় অনেক সময়।'

শাহজাহান কলোনির দিনমজুর মহিমা বেওয়া (৫৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগে ৫ কেজি করে চাল কেনা যেত। এখন ২ থেকে ৩ কেজি করে চাল দিচ্ছে। এতে প্রয়োজন মেটে না। ওএমএস দোকানে চালের সরবরাহ আরও বাড়ানো দরকার। বাজার থেকে বেশি দামে চাল কেনা কষ্টকর হয়ে উঠেছে।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুড়িগ্রাম শহরের দাদামোড় এলাকার এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সংসারে খরচ অনেক বেড়েছে। বাজার থেকে বেশি দামে চাল কিনতে হিমশিম খাচ্ছি। চাল কিনতে ওএমএস দোকানে লাইনে দাঁড়িয়েছি। লজ্জায় অনেক সময় কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকতে হয়।'

লালমনিরহাট জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক রফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওএমএস দোকানে চালের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু, সরকারি নির্দেশ ছাড়া সরবরাহ বাড়াতে পারি না। এ ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা পেলে অবশ্যই চালের সরবরাহ বাড়ানো হবে। খোলা বাজারে চাল বিক্রি করতে ওএমএস ডিলারকে ২৮ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ করা হচ্ছে। ডিলাররা বিক্রি করছেন ৩০ টাকা কেজি দরে।'

Comments

The Daily Star  | English

Distressed loans surge to Tk 7.56 lakh cr

Distressed loans at banks soared 59 percent to a record Tk 756,526 crore in 2024, laying bare the fragile state of the country’s financial sector.

5h ago