খরায় কৃষকের আশীর্বাদ তিস্তা সেচ প্রকল্প

চলমান দীর্ঘ খরায় আমন চারা রোপণ করতে না পেরে উত্তরাঞ্চলের কৃষক যখন দিশেহারা, ঠিক তখন বিপরীত চিত্র দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা সেচ প্রকল্প এলাকায়। তিস্তার পানি সেচ দিয়ে সহজেই আমন চারা রোপণের সুযোগ পেয়ে সেখানকার কৃষকের মুখে তৃপ্তির হাসি।
তিস্তা সেচ প্রকল্প এলাকায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। ছবি: আসাদুজ্জামান টিপু/স্টার

চলমান দীর্ঘ খরায় আমন চারা রোপণ করতে না পেরে উত্তরাঞ্চলের কৃষক যখন দিশেহারা, ঠিক তখন বিপরীত চিত্র দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা সেচ প্রকল্প এলাকায়। তিস্তার পানি সেচ দিয়ে সহজেই আমন চারা রোপণের সুযোগ পেয়ে সেখানকার কৃষকের মুখে তৃপ্তির হাসি।

আমন ধান মূলত বৃষ্টি নির্ভর। যদিও এবারের অস্বাভাবিক খরায় তা বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে, তিস্তা সেচ প্রকল্পে এই মৌসুমে পানি থাকায় প্রতি একরে সেচ খরচ হচ্ছে মাত্র ১৮৯ টাকা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশনের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই আমন মৌসুমে তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতাধীন নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরের ১২টি উপজেলার ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জমিতে চারা রোপণ সম্পন্ন হয়েছে এবং বাকী এলাকায় দ্রুতগতিতে রোপণের কাজ চলছে।'

তিস্তা সেচ প্রকল্প এলাকায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। ছবি: আসাদুজ্জামান টিপু/স্টার

তিনি আরও বলেন, 'চলমান খরা পরিস্থিতিতেও তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ সন্তোষজনক থাকায় আমরা সেচ প্রকল্পাধীন ৭১২ কিলোমিটার ক্যানেল নেটওয়ার্কের মধ্যে ভালো অবস্থায় থাকা ৩৩০ কিলোমিটার ক্যানেল ব্যবহার করে সেচ সুবিধা প্রদান করছি। অবশিষ্ট ক্যানেল ব্যবহার উপযোগী অবস্থায় থাকলে সেচ প্রদান এলাকা আরও বৃদ্ধি করতে পারতাম।'

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নীলফামারী সূত্র থেকে জানা গেছে, চলতি জুলাই মাসের প্রথম ২৩ দিনে মাত্র ৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অথচ গত বছর একই সময়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৫০২ মিলিমিটার।

আমন চাষের জন্য জুলাইয়ে গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত প্রয়োজন হয়।

জলঢাকা উপজেলার প্রত্যন্ত বালাগ্রাম এলাকার কৃষক আব্দুল গাফফার (৬০) বলেন, 'বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এই মৌসুমে আমার ৩ একর জমিতে আমন চারা রোপণ নিয়ে শঙ্কিত ছিলাম। পরবর্তীতে পানি উন্নয়ন বোর্ড তিস্তা সেচ প্রকল্পে সম্পূরক সেচ শুরু করলে নিশ্চিন্ত হই।'

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা গ্রামের কৃষক জোবায়দুল মণ্ডল বলেন, 'আমার আগাম রোপণ করা এক একর জমির আমন চারা বৃষ্টির অভাবে পুড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তিস্তার সেচের পানিতে সেগুলো জীবন ফিরে পেয়েছে।'

তিস্তা সেচ প্রকল্পের বহিরে রংপুরের তারগঞ্জ উপজেলার আলমপুর, কুর্শা, ইকরচলী, হাড়িয়ালকুটি ও সয়ার এবং নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার হরিশচন্দ্রপাট, কাঁঠালি ও দেশীবাই গ্রামে সরেজমিনে দেথা যায়, বৃষ্টির পানির অভাবে অনেক কৃষক আমন চারা রোপণ করতে পারেননি।

জুলাই থেকে আগস্টের ১৫ তারিখ পর্যন্ত আমন চারা রোপণের প্রকৃত সময়। রোপণ মৌসুম শেষের দিকে পৌঁছে গেলেও বৃষ্টি না থাকায় দিশেহারা হয়ে বিভিন্ন এলাকার কৃষক বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় কৃষক সূত্রে জানা যায়, শুষ্ক মৌসুমে বোরো ধান রোপণের সময় প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত গজালডোবা ব্যারেজের সবগুলো গেট বন্ধ করে রাখায় তিস্তায় পানি প্রবাহ কমে যায় এবং প্রকল্প এলাকায় সেচ সুবিধা ব্যাহত হয়।

কিন্তু বর্ষা মৌসুমে নিজেদের এলাকায় পানির চাপ কমাতে তারা ব্যারেজ গেট খুলে দেয়। ফলে ভাটিতে বাংলাদেশ অংশে পানির প্রবাহ বেড়ে যায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, 'তিস্তা সেচ প্রকল্পের অধীন পুরাতন ও ক্ষতিগ্রস্ত সেচ নালা সংস্কার ও পুনর্বাসনের ব্যাপক কাজ চলমান রয়েছে। এসব কাজ শেষ হলে আগামীতে আরও বেশি এলাকা সেচ সুবিধার আওতায় আসবে।'

Comments