‘মা আমি বিসিএস পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি’, ট্রাকচাপায় নিহত পিংকীর শেষ কথা

নিহত পিংকী রানী বর্মণ। ছবি: সংগৃহীত

'মা আমাকে আশীর্বাদ করো। আমি বিসিএস পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি।' এটুকুই ছিল মুঠোফোনে মা মণিকা রানীর সঙ্গে কন্যা পিংকী রানী বর্মণের (২৫) শেষ কথা।

মণিকা রানী মেয়ের এই বাক্য ২টি উচ্চারণ করে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন।

পিংকী রানী বর্মণ গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী ইউনিয়নের তালতলী গ্রামের নারায়ণ চন্দ্র বর্মণের দ্বিতীয় সন্তান ও এবং একমাত্র কন্যা। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ বছর স্নাতক উত্তীর্ণ হন।

পিংকীর বড় চাচা গোপাল চন্দ্র বর্মণ বলেন, 'স্নাতক পাসের পর থেকেই ৪৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিতে প্রস্তুতি নেয় পিংকী। সার্কুলার হওয়ার পর যথারীতি আবেদনও করে সে। ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে ছিল পরীক্ষার সিট। আবেদনের পর পিংকী তার নানা বাড়ী ময়মনসিংহের ভালুকায় বেড়াতে যায়। শুক্রবার ভোরে বাবা নারায়ণ চন্দ্র বর্মণ কন্যা পিংকীকে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে তালতলীর বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়।'

'সেখান থেকে বাবা-মেয়ে একই মোটরসাইকেলে চড়ে ময়মনসিংহের চুরখাই এলাকায় পৌঁছে। এ সময় পেছন থেকে একটি ডামট্রাক তাদের মোটরসাইকেলটিকে ওভারটেক করে সামনে গিয়ে ব্রেক করে। এতে পিংকীর বাবা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। পরে পিংকী মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে গিয়ে আহত হয়। এসময় পেছন থেকে আসা একটি বাস তাকে চাপা দিলে গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক পিংকীকে মৃত ঘোষণা করেন,' বলেন তিনি।

টাঙ্গাইল টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইন্সটিটিউট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন পিংকীর ভাই নিতাই চন্দ্র বর্মণ। তিনি এখন বাবার রেন্ট-এ কার ও বাড়ি ভাড়া দেখাশোনা করেন।

নিতাই চন্দ্র বর্মণ বলেন, 'পিংকী এলাকার তালতলী মডার্ন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে প্রাথমিক, পাশের গ্রাম মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। পরে নিজ জেলা গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।'

তালতলী মডার্ন স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ কে এম জাহিদুল ইসলাম বলেন, 'শিক্ষাজীবনের সব ক্ষেত্রেই ছোটবেলা থেকে পিংকী সফলতার সঙ্গে এগিয়ে গেছে। আমরাও মেয়েটিকে নিয়ে বড় আশা করেছিলাম। শ্রেণিকক্ষেও সে বিনয়ী, শান্ত ও মেধার পরিচয় দিয়েছে। ভবিষ্যতে সে বড় কিছু হতে পারত।'

মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রতিবেশী আনন্দ চন্দ্র বর্মণ বলেন, 'বিদ্যালয়ে ক্লাসের ফাঁকে যে গ্যাপ থাকত, সেই গ্যাপে সে পড়তো। অথচ তার অন্যান্য সহপাঠীরা অন্য কিছু করত।'

পিংকীর সহপাঠী ও চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী অর্পিতা রাণী বর্মণ বলেন, 'পিংকী পড়াশোনায় যেমন মনোযোগী ছিল, তেমন তার অনেক ধৈর্য ছিল। যে বিষয় বা টপিক নিয়ে সে পড়তে বসত সেটি শেষ না করে উঠত না।'

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষক ড. আব্দুস ছালাম জানান, 'পিংকী আমার ডিপার্টমেন্টের ছাত্রী ছিল না। কিন্তু, শ্রেণিতে তার পারফরমেন্সের কারণে তার বিষয়ে জেনেছি। সে খুবই মেধাবী ছিল।'

ময়মনসিংহ কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ বলেন, 'ঘাতক ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। তবে চালক পলাতক আছেন। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।'

Comments

The Daily Star  | English
remittance earning of Bangladesh

Remittance rises 30% in July

Migrants sent home $2.47 billion in the first month of the current fiscal year

5h ago