দুর্বল প্রস্তুতি-সমন্বয়ের অভাবে বাড়ছে প্রকল্পের মেয়াদ
উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তুত, প্রক্রিয়াকরণ ও মূল্যায়নের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৭৬ শতাংশ সরকারি কর্মকর্তা মনে করেন, পর্যাপ্ত সম্ভাব্যতা যাচাই ও স্টেকহোল্ডারদের পরামর্শ ছাড়াই বিভিন্ন প্রকল্প অনুমোদন পায়।
উন্নয়ন প্রকল্পের ধীর বাস্তবায়নের উপর 'ইমপ্লিমেন্টেশন মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন ডিভিশনের' (আইএমইডি) গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ২৬ শতাংশ উত্তর দিয়েছেন যে তারা ৬১ থেকে ৮১ শতাংশ প্রকল্পে এই সমস্যা দেখা যায়।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'এটি উদ্বেগের একটি প্রধান ক্ষেত্র।'
এই গবেষণায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ১০০ জন কর্মকর্তার কাছে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ৫ বছরের বিভিন্ন প্রকল্পের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে এবং ২টি ফোকাস গ্রুপ আলোচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি পরামর্শদাতা, অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা এবং প্রকল্প পরিচালকদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
এটি সরকারের এই ধরনের প্রথম গবেষণা। আইএমইডি সচিবের নির্দেশনায় বিভাগের পরিচালক মো. তাইবুর রহমান প্রধান গবেষক হিসেবে এটি সম্পন্ন করছেনে। গবেষণাটি আইএমইডি ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে।
বাংলাদেশ বেশিরভাগ প্রকল্প সময়মত এবং নির্দিষ্ট বাজেটের মধ্যে শেষ করার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। এতে করে প্রকল্পগুলোতে ব্যয় বেড়েছে এবং প্রত্যাশিত সুবিধা কমেছে।
গত ৬ জুন প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ এবং ঢাকা মেট্রোরেলের মতো ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের ধীর গতি বাস্তবায়নের হার এর একটি উদাহরণ।
সরকারের ৮টি ফাস্ট-ট্র্যাক প্রকল্পের মধ্যে ৬টি ইতোমধ্যে সংশোধন করা হয়েছে এবং অন্য একটি প্রকল্পের (মেট্রো রেল) জন্য সংশোধনী প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছে। শুধু রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পে এখনো কোনো সংশোধন করা হয়নি।
খরচ এবং সময় বৃদ্ধির কারণে, বেশিরভাগ প্রকল্প প্রাথমিকভাবে নির্ধারিত লক্ষ্য এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। যার মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ রিটার্নের হার, রিটার্নের আর্থিক হার এবং রিটার্নের অর্থনৈতিক হার।
প্রধান কারণগুলো চিহ্নিত করে সরকারি প্রকল্পগুলোর এই ধরনের অপব্যবহার রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
উত্তরদাতাদের প্রায় ৮৫ শতাংশ মনে করেন, যেসব প্রকল্পে সিভিল কাজের প্রয়োজন হয় সেখানে যথাযথ প্রকৌশল নকশার অভাব রয়েছে। এই নকশা প্রকল্পগুলোর সফল করেত মূল চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করে।
উত্তরদাতাদের প্রায় ৭২ শতাংশ একমত বা পুরোপুরি একমত যে প্রকল্পের দুর্বল নথিগুলো একটি বড় বাধা। মাত্র ১৬ শতাংশ ভিন্নমত দিয়েছেন এবং ১২ শতাংশ একমত হননি।
'এটি ইঙ্গিত দেয় যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত দিয়েছে, প্রকল্পের নথিগুলো দুর্বল এবং এটি একটি গুরুতর সমস্যা।'
উত্তরদাতাদের প্রায় ১৬ শতাংশের এই ধরনের সমস্যার অনেক বেশি অভিজ্ঞতা (৬১-৮১ শতাংশ) আছে।
উত্তরদাতাদের প্রায় ৮৯ শতাংশ একমত হয়েছেন যে একটি স্বচ্ছ উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রস্তুত করার জন্য সম্পদের স্বল্পতা রয়েছে।
প্রায় ৭০ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, পর্যাপ্ত সম্পদের অভাবে ৪০ শতাংশেরও বেশি প্রকল্পে দুর্বল ডিপিপি বা টেকনিক্যাল প্রজেক্ট প্রপোজাল (টিপিপি) রয়েছে।
'অল্প সংখ্যক লোক বেশি সংখ্যক ডিপিপি বা টিপিপি প্রস্তুত করার সঙ্গে জড়িত। এটি প্রকল্পের নথিগুলোর গুণগতমানের সঙ্গে আপস করে। যা পরে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণ হয়।
গবেষণার এই ফলাফল সব মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখাকে শক্তিশালী করার জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
প্রায় ৭৪ শতাংশ উত্তরদাতা একমত বা পুরোপুরি একমত হয়েছেন যে ডিপিপি বা টিপিপির কাজ এবং ক্রয় পরিকল্পনা সূক্ষ্মভাবে অনুসরণ করা হয় না।
৮০ শতাংশেরও বেশি উত্তরদাতা মনে করেন প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। উত্তরদাতাদের তিন-চতুর্থাংশ বিশ্বাস করেন যে ৪০ শতাংশেরও বেশি প্রকল্পের এই ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে।
৯০ শতাংশেরও বেশি উত্তরদাতা মনে করেন, পিডি ও প্রকল্প কর্মীদের নিয়োগ এবং পিডির ঘন ঘন বদলি প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব ঘটায়।
গবেষণায় পূর্ণ-সময়ের জন্য প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ এবং প্রকল্প সংশোধনীর জন্য কম সুযোগের আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রায় ৮০ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।
উত্তরদাতাদের ৮০ শতাংশ মনে করেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান ২টি কমিটি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি এবং প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির সঠিকভাবে গঠিত হয় না। যা প্রকল্প বিলম্বের একটি প্রধান কারণ।
কখনো কখনো, অ-পেশাদার লোকজনকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যা সমস্যা তৈরি করে।
উত্তরদাতাদের প্রায় ৯৫ শতাংশ একমত বা পুরোপুরি একমত হয়েছেন যে সঠিক ঠিকাদারদের নির্বাচন করা হয় না, যা সমস্যার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
প্রায় তিন-চতুর্থাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, ৪০ শতাংশেরও বেশি প্রকল্পে এই ধরনের সমস্যা আছে।
প্রায় ৯১ শতাংশ মনে করেন, প্রকল্প শেষ করার ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রতিবেদনে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় সব ধরনের নির্মাণ সামগ্রী, ভূমি, বিদ্যুৎ সরবরাহ, ক্রয়, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সসহ অন্যান্য ইউটিলিটি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়।
অনুবাদ করেছেন সুমন আলী
Comments