পদ্মা সেতু: কুয়াকাটা ঘিরে নতুন সম্ভাবনা

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা। এখানে বছরজুড়ে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের উপস্থিতি থাকে চোখে পড়ার মতো। এতদিন কুয়াকাটায় যেতে পর্যটকদের প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল যোগাযোগ ব্যবস্থা। কিন্তু, পদ্মা সেতু চালুর মাধ্যমে এ সমস্যার অবসান হতে যাচ্ছে। ফলে, কুয়াকাটায় পর্যটকের সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে কুয়াকাটাকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে নতুন সম্ভাবনা।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের ভিড়। ছবি: সোহরাব হোসেন

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা। এখানে বছরজুড়ে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের উপস্থিতি থাকে চোখে পড়ার মতো। এতদিন কুয়াকাটায় যেতে পর্যটকদের প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল যোগাযোগ ব্যবস্থা। কিন্তু, পদ্মা সেতু চালুর মাধ্যমে এ সমস্যার অবসান হতে যাচ্ছে। ফলে, কুয়াকাটায় পর্যটকের সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে কুয়াকাটাকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে নতুন সম্ভাবনা।

কুয়াকাটা হোটেলে-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও কুয়াকাটা গেস্ট হাউজের মালিক মোতালেব শরীফ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগে ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় আসতে ১২-১৪ ঘণ্টা সময় লাগতো। ফলে, দীর্ঘ ভ্রমণে পর্যটকরা ক্লান্ত হয়ে পড়তেন। কিন্তু, পদ্মা সেতু চালুর পর মাত্র ৫-৬ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় পৌঁছানো সম্ভব হবে। এতে পর্যটকদের সময় ও অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি ক্লান্তিও কমবে। তাই, কুয়াকাটায় পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে বলে আমরা আশা করছি।'

তিনি আরও বলেন, 'কুয়াকাটায় বর্তমানে ছোট-বড় ১৫০টি আবাসিক হোটেল আছে। এসব হোটেলে ১৫ হাজার পর্যটক স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারেন। পদ্মা সেতু চালুর পর এ সংখ্যা কয়েকগুণ হবে। পর্যটকের বাড়তি চাপ সামাল দিতে কয়েকটি হোটেল কর্তৃপক্ষ তাদের অবকাঠামো ও সেবার মান বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে।'

কুয়াকাটায় বাড়তি পর্যটকদের উন্নত সেবা নিশ্চিতে কাজ শুরু করেছেন হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট মালিকরা। তারা বলছেন, পদ্মা সেতু চালুর পর পর্যটক কয়েকগুণ বাড়বে। তাই হোটেলের কক্ষ, জনবল ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে।

কুয়াকাটার অন্যতম হোটেল সিকদার রিসোর্টের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মো. আল আমিন জানান, পদ্মা সেতু চালুর পর কুয়াকাটায় পর্যটকের সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই আমরাও সেই অনুযায়ী সেবার মান বৃদ্ধিসহ অবকাঠামোর উন্নয়ন শুরু করেছি। আমাদের এখানে আগে ১২টি ভিলা ও ৬৮টি রুম ছিল। বর্তমানে আরও ২০টি ভিলা ও আরও ৩৪টি রুম তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়াও, ১৩-তলা বিশিষ্ট সিকদার টাওয়ার থেকে সরাসরি সমুদ্র, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগের জন্য টাওয়ারে অত্যাধুনিক মানের সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের হোটেলটি থ্রি-স্টার মানের হলেও এখানে ফাইভ-স্টার মানের হোটেলের সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে।'

ঢাকা থেকে ভ্রমণে আসা নুরুল কবির জানান, কুয়াকাটা ভ্রমণের ইচ্ছা থাকলেও এতদিন যাতায়াত ব্যবস্থা মূল প্রতিবন্ধকতা ছিল। তবে, পদ্মা সেতু চালু হলে সেই প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। কারণ ঢাকা থেকে কক্সবাজারের চেয়ে সড়ক পথে কুয়াকাটার দূরত্ব কম। এতে সময় ও অর্থ দু'টোই সাশ্রয় হবে।

কুয়াকাটা ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এম বাচ্চু বলেন, 'পদ্মা সেতু চালুর পর বর্তমানের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পর্যটক কুয়াকাটায় আসবেন। সেজন্য ট্যুর গাইডদের পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি, পাশাপাশি সৈকতকে আরও সুন্দর করার চেষ্টা চলছে।'

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সভাপতি রুম্মান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, 'সেতু চালু হলে কুয়াকাটায় আমূল পরিবর্তন হবে। বাড়তি পর্যটকদের চাপ সামলাতে আমরা আশেপাশের বাসাবাড়িতেও 'হোমস্টে' সার্ভিস চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছি। এজন্য ইতোমধ্যেই প্রায় ৫০০ জন বাসাবাড়ির মালিকদের আমরা পর্যটকদের সেবা সম্পর্কিত বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছি এবং আরও প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।'

পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে কুয়াকাটায় পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে আবাসিক হোটেল-মোটেলগুলোতে ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। হোটেলে-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি ও হোটেল বনানীর মালিক শফিখুর রহমান চান এ কথা বলেন।

Comments