ঘরের জানালা খুলেই পদ্মা সেতু দেখতে পান যারা

পদ্মা সেতু সংলগ্ন লৌহজং উপজেলার দক্ষিণ মেদেনীমন্ডল গ্রামের একটি বাড়ি। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/স্টার

মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার দক্ষিণ মেদেনীমন্ডল গ্রামে ৩৩ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন আবুল কাশেম মাদবর (৭০)। ঘরের দরজা, জানালা খুললেই পদ্মা সেতু দেখতে পান তিনি। চোখ এড়িয়ে অন্য কিছু দেখার সুযোগ নেই। কারণ, তার ঘরের কাছেই তৈরি হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় স্থাপনা।

আবুল কাশেমসহ এ এলাকায় বসবাস করে প্রায় ৭৯০টি পরিবার। এই পরিবারের সদস্যরা সবাই প্রতি সকালে ঘুম ভাঙার পর দেখেন পদ্মা সেতু।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় চায়ের দোকানে কথা হয় শ্রমিক আবুল কাশেম মাদবরের সাথে। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা ৭৯০টি পরিবার এ এলাকায় থাকি। পদ্মা নদী ভাঙনের কারণে ৫ বার জায়গা পরিবর্তন করেছি। সর্বশেষ ২০১৪ সালে ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেতে এখানে আসি। জায়গা-জমি ভাড়া নিয়েই থাকা হয় আমাদের।'

৪ ছেলে, ২ মেয়ে ও স্ত্রীসহ ৩ কক্ষের টিনশেড বাসায় তিনি বসবাস করেন বলে জানান।

পদ্মা সেতু সংলগ্ন মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার দক্ষিণ মেদেনীমন্ডল গ্রাম। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/স্টার

আবুল কাশেম বলেন, 'ঘরের ৩টি জানালা খুললেই দেখতে পাই পদ্মা সেতু। চোখ সরানোর উপায় নেই বললেই চলে। খুব কাছ থেকে সেতু নির্মাণের সব কাজ দেখেছি আমরা।'

এ এলাকার আরেক বাসিন্দা অটোরিকশা চালক আকাশ হাওলাদার। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, পদ্মা নদীর বুকে কীভাবে সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হলো তার সব কিছুই তার চোখের সামনে হয়েছে।

'বাসায় বসেই দেখা যায় পদ্মা সেতু। বাসার দরজা-জানালা খুললেই সেতুর ল্যাম্পপোস্ট, স্প্যান, পিলার দেখা যায়। আমরা অনেক ভাগ্যবান। আর কেউই হয়তো দর্শক হিসেবে প্রতিদিন সেতুর কাজ দেখতে পারেননি,' বলেন তিনি।

এলাকার ব্যবসায়ী মো. শরিফুল ইসলাম সঞ্জীব বলেন, 'সেতু নির্মাণের সময় কাজের শব্দ আমাদের কানে এসেছে। ২৪ ঘণ্টাই শব্দ পেয়েছি নির্মাণ কাজের।'

'প্রমত্তা পদ্মার বুকে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু যখন সেতুর পিলার নদীতে দাঁড়ালো, তখন মনে হয়েছে যে আর কোনো বাঁধাই আটকাতে পারবে না। এলাকার শিশুরাও প্রতিদিন সেতু নিয়ে আলোচনা করে,' বলেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য পৃথিবীর বড় বড় যন্ত্রপাতি এনেছিল মাওয়ায়। আমরা সবাই এসব দেখেছি। নতুন নতুন যন্ত্রপাতি দেখে আমাদের মাঝে কৌতূহলও তৈরি হয়েছিল।'

ওই এলাকার চায়ের দোকানদার সালাম উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সেতু নির্মাণের শুরু থেকে চায়ের দোকানগুলোতে প্রতিদিন আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল সেতুকেন্দ্রিক। পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে যখন নানা বাঁধা এসেছিল তখন আমরাও দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু এসব বাঁ শেষ। করোনা ও ঈদেও থেমে থাকেনি সেতুর কাজ। ঈদে আমরা সেতুর কাজ দেখেছি।'

মাছ ব্যবসায়ী কাদের হোসেন বলেন, 'আমাদের এলাকার অনেক ছেলেরাও পদ্মাসেতুতে কাজ করেছে। সেতু যখন প্রথম আলোকিত হলো আমরা সবাই বাসা থেকে বের হয়ে সেতু দেখি। সেতুকে ঘিরে নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি হবে এতে আমাদের এলাকার উন্নয়ন হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Yunus leaves Dhaka for Ctg on first visit as chief adviser

Prof Yunus departed Hazrat Shahjalal International Airport at 8:45am

48m ago