পেট্রোবাংলাকে ১২২২৭ কোটি টাকা নিরাপত্তা-উন্নয়ন তহবিলে ফেরতের নির্দেশ

গণশুনানির রায়ে পেট্রোবাংলাকে নিরাপত্তা ও উন্নয়ন তহবিল থেকে নেওয়া ১২ হাজার ২২৭ কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন।
ছবি: সংগৃহীত

গণশুনানির রায়ে পেট্রোবাংলাকে নিরাপত্তা ও উন্নয়ন তহবিল থেকে নেওয়া ১২ হাজার ২২৭ কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন।

আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করতে নিজেদের এনার্জি সিকিউরিটি ফান্ড থেকে ৯ হাজার ২২৭ কোটি টাকা নেয় রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাটি। এ ছাড়া, উদ্বৃত্ত অর্থ হিসেবে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা তারা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়।

গত ২১ থেকে ২৪ মার্চ গ্যাসের দাম সমন্বয়ের বিষয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে ভোক্তা অধিকার সংস্থা, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক নেতারা অর্থ ফেরতের দাবি জানান।

তারা বলেন, এই টাকা পেট্রোবাংলার আয় নয়। ফলে এটি সরকারি অর্থের অপব্যবহার।

গত সোমবার এই রায় প্রকাশ করা হয়।

শুনানিতে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রতিনিধি অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, বিইআরসির কোনো অনুমতি ছাড়াই পেট্রোবাংলার এই তহবিল থেকে টাকা নেওয়া একটি 'স্বার্থের দ্বন্দ্ব'।

পেট্রোবাংলা আলাদাভাবে উল্লেখ করেনি যে তারা স্পট মার্কেট থেকে কত গ্যাস আমদানি করেছে এবং কতটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, 'পরিসংখ্যানের মধ্যে ব্যবধানের কারণে অর্থের অপব্যবহার করার সুযোগ তৈরি করেছে।'

তবে, পেট্রোবাংলার প্রতিনিধি এই যুক্তিতে একমত পোষণ করেনি। কোম্পানির পরিচালক (অর্থ) একেএম বেনজামিন রিয়াজী দাবি করেন, এলএনজি আমদানির জন্য তাদের কাছে কোনো উদ্বৃত্ত অর্থ নেই।

বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি দেখতে পেরেছে, ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত এলএনজি আমদানির জন্য পেট্রোবাংলার ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ২১৪ কোটি টাকা। যেখানে এই খাত থেকে আয় করেছে ৪৯ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। ফলে, এখান থেকে আয়ের ২ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত রয়েছে।

রায়ে বলা হয়, পেট্রোবাংলা ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে গড়ে যথাক্রমে ৫৫৮ এমএমসিএফডি (মিলিয়ন ঘনফুট দৈনিক) এবং ৫৮৯ এমএমসিএফডি গ্যাস আমদানি করেছে। বিইআরসির ২০১৯ সালের গ্যাস মূল্য নির্ধারণের আদেশে আমদানি অনুমান ছিল ৮৫০ এমএমসিএফডি।

কমিশন বলেছে, পেট্রোবাংলা প্রাক্কলিত খরচের চেয়েও কম দামে এলএনজি আমদানি করেছে এবং ভোক্তা পর্যায়ে মোট বিতরণ ব্যয় যথাক্রমে ৭ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা এবং ৭ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা কমেছে।

আদেশে বলা হয়েছে, '২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এলএনজি আমদানি ব্যয়ের তুলনায় পেট্রোবাংলার এলএনজি চার্জ এবং সংশ্লিষ্ট আয় বেশি ছিল। সে কারণেই জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল থেকে নেওয়া অর্থ ফেরত দিতে হবে।'

এ ছাড়া, পেট্রোবাংলার উদ্বৃত্ত অর্থ হিসেবে সরকারি কোষাগারে জমা থাকা গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের ৩ হাজার কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিইআরসি। এই অর্থ ফেরত দিতে হবে সুদসহ।

কোম্পানিটি ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত দুটি তহবিল থেকে ১২ হাজার ২২৭ কোটি টাকা নিয়েছে।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ও পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনগুলোর উদ্বৃত্ত তহবিলের আমানত বিষয়ে সরকারি কোষাগার আইন পাস করে।

এ আইনে পেট্রোবাংলা সরকারি কোষাগারে ৫ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা জমা দিয়েছে। এর মধ্যে জিডিএফ বাবদ গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা।

২০১৯ সালের জুলাইয়ে বিইআরসি একটি আদেশের মাধ্যমে তহবিলটি তৈরি করে।

২০১৯ সালে ভোক্তাদের দেওয়া ট্যারিফের একটি অংশ এই তহবিলের জন্য রাখা হয়েছিল এবং এই অর্থ কোথায় ব্যয় করা যাবে সে সম্পর্কে সরকারের প্রবিধান রয়েছে।

২০১২ সালের জিডিএফ প্রবিধান অনুযায়ী, এই অর্থ শুধুমাত্র গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ঋণ হিসেবে নিয়ে ব্যয় করা যেতে পারে।

বিষয়টি উল্লেখ করে, বিইআরসি পেট্রোবাংলাকে একাধিকবার টাকা ফেরত চেয়ে চিঠি দিলেও কোনো লাভ হয়নি।

গত সোমবারের রায়ে বলা হয়েছে, জিডিএফ থেকে অর্থ নিয়ে গৃহীত প্রকল্প, প্রকল্পের অগ্রগতি এবং তাদের সুবিধার প্রতিবেদন প্রতি ৬ মাস পর পর বিইআরসিকে পাঠাতে হবে।

এতে পেট্রোবাংলার গ্যাস উৎপাদন ও খরচ, আমদানি ও খরচ, কর ও ভ্যাট সংক্রান্ত মাসিক প্রতিবেদনও চাওয়া হয়েছে।

Comments