প্রত্যেক বিভাগে মেরিন একাডেমি চালু হবে: প্রধানমন্ত্রী
দেশের প্রত্যেকটি বিভাগে একটি করে মেরিন একাডেমি চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রোববার সকালে চট্টগ্রামে মেরিন একাডেমির ক্যাডেটদের শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিকে বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অংশীদারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা উন্নীত করেছি। ফলে বর্তমানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একাডেমির গ্রহণযোগ্যতা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে এবং সমুদ্র বিশ্বের চাহিদা অনুযায়ী আমরা এ বছর অর্থাৎ ২০২২-এর জানুয়ারি থেকে পাবনা, বরিশাল, রংপুর ও সিলেটে আরও ৪টি মেরিন একাডেমির কার্যক্রম আমরা চালু করেছি। আমার ইচ্ছা আছে যে, প্রত্যেক বিভাগে একটি করে মেরিন একাডেমি চালু হবে। যেখানে আমাদের ছেলে-মেয়েরা শুধু প্রশিক্ষিতই হবে না, দেশে-বিদেশে তাদের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে এবং আমাদের বেকার সমস্যা দূর হবে।
১৫ আগস্ট শাহাদাত বরণকারীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আপনজন হারিয়েছি কিন্তু বাংলাদেশ হারিয়েছিল উন্নয়নের সব সম্ভাবনাকে। বাংলাদেশের মানুষ যেমন শোষিত-বঞ্চিত ছিল, তারা আবার সেই শোষণ-বঞ্চনার খপ্পড়ে পড়ে যায়। এটা হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্য। এর পরে যারা অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় এসেছে একের পর এক তারা কখনো দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে বা একটা স্বাধীন রাষ্ট্র কীভাবে পরিচালিত হবে তার পদক্ষেপ তেমনভাবে নেয়নি। বরং তারা দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতিতে বেশ ব্যস্ত ছিল।
তিনি বলেন, ২১ বছর পর '৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার সুযোগ পায়। আমরা সরকার গঠন করেই বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ নিই। আমাদের দেশের মানুষের শিক্ষা-দীক্ষা বহুমুখী করা, কম্পিউটার থেকে শুরু করে সব রকম শিক্ষা ব্যবস্থা আমরা হাতে নিয়েছিলাম। মেরিন একাডেমিকে আরও উন্নত মানের, যুগোপযোগী করার পদক্ষেপ নিই এবং এর গভার্নিং বডিও আমরা অনুমোদন দিই।
মেরিন একাডেমির শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক ধরনের প্রতিকূলতা আসবে। সেগুলো চ্যালেঞ্জ করার মতো সক্ষমতা তোমরা অর্জন করেছো। সমুদ্রচারণ কোনো সাধারণ পেশা নয়। এ পেশায় আত্মনিয়োগ করতে সমুদ্রের প্রতি একটি তীব্র আকর্ষণও সৃষ্টি হয়। বিশ্ব বাণিজ্যের প্রায় ৮০ শতাংশ পণ্য পরিবহন সমুদ্র পথেই হয়ে থাকে। আমাদের বে অব বেঙ্গলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গা। তাই বিশ্ব অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে মেরিন একাডেমির ভূমিকা অপরিসীম। জীবন ধারণের জন্য খাদ্য, জীবন রক্ষাকারী ওষুধসহ শিল্পায়নের যন্ত্রপাতিসহ প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন বিঘ্নিত হলে গোটা বিশ্বটাই স্থবির হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক মহামারির কারণে বহু সংখ্যক মেরিন অফিসার-ইঞ্জিনিয়াররা সমুদ্রে আটকা পড়েছিল, আমি আনন্দিত মানসিকভাবে তারা ভেঙে পড়েনি। দায়িত্ব পালনে বিন্দুমাত্র অবহেলা করেনি। আন্তর্জাতিক মেরিটাইম সংস্থার মহাসচিবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরাও করোনাকালে অবিরাম দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে মেরিন অফিসার ও ইঞ্জিনিয়ারদের 'কি ওয়ার্কার' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছি। বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির প্রায় ৫ হাজার প্রশিক্ষিত ক্যাডেটরা সংশ্লিষ্ট খাতে সেবা প্রদানের মাধ্যমে প্রতি বছর আমাদের অর্থনীতিতে প্রায় ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যুক্ত করে থাকে। তা ছাড়া, প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক পরিসরে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে যাচ্ছে।
মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এই মাহেন্দ্রক্ষণে সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের অদম্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সবাইকে আমি সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। অর্থনৈতিকভাবে আমরা যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করতে পেরেছি। করোনা আমাদের বাধা দিতে পারেনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন বাঙালির উদ্দেশে কেউ দাবায়া রাখতে পারবা না। বাঙালিকে কেউ দাবায়া রাখতে পারবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
Comments