‘প্রয়োজনে জীবন দেবো, তবুও জুম ভূমি কেড়ে নিতে দেবো না’

চট্টগ্রামে সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ। ছবি: স্টার

'প্রয়োজনে জীবন দেবো, তবু আমাদের ৪০০ একর জুম ভূমি কেড়ে নিতে দেবো না। জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রি যে ভূমি লিজ নিয়েছে, তার কোনো বৈধতা নেই। আমাদের ওপর অন্যায় করা হচ্ছে।'

কথাগুলো বলছিলেন বান্দরবানের লামা উপজেলায় দুর্গম লাংকম ম্রো পাড়ায় জুমের বাগান পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত লাংকম ম্রো।

ওই ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামে সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের পর দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে লাংকম ম্রো এসব কথা বলেন।

সমাবেশে জুম পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় বান্দরবান জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির শুনানি ষড়যন্ত্রমূলক ও পক্ষপাতদুষ্ট বলেও অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্তরা। এসময় লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেনসহ মূল হোতাদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি করা হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত লাংকম পাড়ার কারবারি লাংকম ম্রো ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বান্দরবান জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি গত ২২ মে এক শুনানির মাধ্যমে যারা আমাদের জুম ভূমি পুড়িয়ে দিয়েছে সেই লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সঙ্গে সমঝোতার প্রস্তাব দেয়। আমরা সেই প্রস্তাব শুনে খুব কষ্ট পেয়েছি এবং তা প্রত্যাখ্যান করেছি।'

তিনি বলেন, 'যারা আমাদের জুমের বাগান পুড়িয়ে দিয়েছে, এ এলাকার জীববৈচিত্র্য, খাবার পানির উৎস ঝিরি ধ্বংস করে দিয়েছে, আমাদের শ্মশান পুড়িয়ে দিয়েছে তাদের সঙ্গে আপোষ করে আমাদের ৪০০ একর জুমের জায়গার পরিবর্তে ২০৬ একর জায়গা নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়।'

'এই প্রস্তাব শুনে আমরা ক্ষোভে-দুঃখে সেদিন শুনানি চলাকালে অনুষ্ঠান থেকে বের হয়ে যাই', বলেন তিনি।

লাংকম ম্রো আরও বলেন, 'জুম ভূমি রক্ষায় প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা মামলা করা হয়েছে, সেগুলো থেকে আমাদের মুক্তি দেওয়া হোক।'

ক্ষতিগ্রস্ত ইনচং ম্রো ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জুমের বাগানে আগুন দিয়ে আমাদের নিঃস্ব করে দেওয়া হয়েছে। আমরা এর উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চাই।'

ছবি: স্টার

৫০ বছর বয়সী ইন্দ্রতি ত্রিপুরা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল আমাদের জুম ভূমি রক্ষায় জীবনে এই প্রথমবার দুর্গম পাহাড় থেকে আমি চট্টগ্রাম শহরে এসেছি। দয়া করে আমাদের জুম ভূমি কেড়ে নেবেন না। আমাদের বাঁচতে দিন।'

সমাবেশে অংশ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, 'পার্বত্য চট্টগ্রামের বন ও প্রকৃতিকে ধ্বংস এবং পাহাড়িদের উচ্ছেদ করে তথাকথিত উন্নয়ন হতে পারে না।'

গত ২৬ এপ্রিল দুর্গম লাংকম ম্রো পাড়ায় পাহাড়িদের জুমের বাগানে আগুন দেওয়ায় প্রায় ১০০ একর ধান, আম, কলা, আনারসসহ বিভিন্ন ফসল পুড়ে যায়। পাড়াবাসীর অভিযোগ, জমি দখলের জন্য লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড পাহাড়ে আগুন দেয়।

এ ঘটনায় বান্দরবান জেলা প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বান্দরবান জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. লুৎফুর রহমানের কাছে সমঝোতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সমঝোতার প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। পাড়াবাসী ও যাদের বিরুদ্ধে জুমের বাগান পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ, সেই লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডসহ ২ পক্ষ রাজি থাকলে ২০৬ একর জমিতে পাড়াবাসীকে জুম চাষ করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম।'

লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ যে ভূমি লিজ নিয়েছে তার কোনো বৈধতা আছে কি না, জানতে চাইলে মো. লুৎফুর রহমান বলেন, 'এ বিষয়ে প্রশাসনের যারা লিজ দিয়েছেন, তারাই ভালো বলতে পারবেন।'

Comments

The Daily Star  | English
Aminul Islam Bulbul new BCB president

Bulbul 'agrees' to take over BCB president's post

Aminul Islam Bulbul is coming to the Bangladesh Cricket Board as its president, the former national team captain himself confirmed to The Daily Star.

44m ago