মধুপুরে বন রক্ষী ও গারোদের মধ্যে উত্তেজনা

টাঙ্গাইলের মধুপুরে পর্যটকদের জন্য একটি কৃত্রিম লেক খনন নিয়ে গারোদের সঙ্গে বন বিভাগের দ্বন্দ্বের মধ্যেই এবার জমি চাষ করা নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
ছবি: স্টার

টাঙ্গাইলের মধুপুরে পর্যটকদের জন্য একটি কৃত্রিম লেক খনন নিয়ে গারোদের সঙ্গে বন বিভাগের দ্বন্দ্বের মধ্যেই এবার জমি চাষ করা নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।

উপজেলার পীরগাছা মৌজার আমতলীতে বনের মধ্যবর্তী একটি জমিতে গতকাল বুধবার হালচাষ করতে গেলে গারোদের বাধা দেয় বনরক্ষীরা।  

জানা যায়, জমিটিতে স্থানীয় গারোরা বংশ পরম্পরায় ফসল চাষ করে আসছিল।

সম্প্রতি সেখানে পর্যটকদের বিনোদনের জন্য একটি কৃত্রিম লেক খননের পরিকল্পনা হাতে নেয় বন বিভাগ। জমিগুলি সংরক্ষিত বনভূমি উল্লেখ করে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ করে সেখানে কিছুদিন আগে একটি সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেয় তারা।

তবে স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তাদের জীবন-জীবিকা এবং সংস্কৃতি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় শুরু থেকেই এখানে বন বিভাগের লেক খননের বিরোধিতা করে আসছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল ওই জমিতে চাষবাসকারীদের মধ্যে কৌশলা নকরেকসহ আরও কয়েকজন শ্রমিককে নিয়ে হালচাষ করতে গেলে দোখালা রেঞ্জের রেঞ্জার ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন বনরক্ষী সেখানে গিয়ে তাদের বাধা দেয়।

মধুপুর বনের মধ্যবর্তী একটি জমিতে গতকাল বুধবার হালচাষ করতে গেলে গারোদের বাধা দেয় বনরক্ষীরা। ছবি: সংগৃহীত

উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে বনরক্ষীরা সেখান থেকে চলে যায়। পরে একদল পুলিশ সাথে নিয়ে আবার সেখানে গিয়ে হালচাষের কাজ বন্ধ করে দেয়।

তবে সে সময় বনরক্ষীরা স্থানীয়দের ওপর গুলি চালানোর হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করে স্থানীয় গারোরা।

কৌশলা নকরেকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, জমিটিতে তারা বংশ পরম্পরায় ফসল চাষাবাদ করে আসছেন। কাল তিনি শ্রমিকদের নিয়ে সেখানে ট্রাকটর দিয়ে হালচাষ করতে গেলে সশস্ত্র বন বিভাগের লোকজন এসে তাদের গুলি করার হুমকি দেয়।

'তখন আমি তাদের কাছে জানতে চেয়েছি সরকার কি তাদের অস্ত্র দিয়েছে আমাদের ওপর গুলি চালানোর জন্যে,' কৌশলা বলেন। 'আবাদ না করলে আমরা খাবো কি?,' তিনি যোগ করেন।

যোগাযোগ করা হলে দোখালা রেঞ্জ অফিসার ইসমাইল হেসেন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বনের জমিতে গারোরা ট্রাকটর দিয়ে হালচাষ করছে জানতে পেরে তারা কয়েকজন সেখানে গিয়ে তাদের তা করতে নিষেধ করেন। কিন্তু তারা নিষেধ অমান্য করে কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। তারা সেখানে ৪০/৫০ জন ছিল।

'আমরা তাদের গুলি করবো বলিনি। আমরা কাজ করতে বাধা দিলে তারাই বলেন গুলি করেন, গুলি করেন। তখন অমরা সেখান থেকে চলে আসি,' তিনি বলেন।

এ বিষয়ে জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি গারো নেতা ইউজিন নকরেক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বন বিভাগ যেখানে লেক খনন করতে চাচ্ছে সেখানে কয়েকটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবার দীর্ঘকাল ধরে ফসল চাষ করে আসছে। এর খুব কাছেই বন বিভাগ একটি নতুন রেস্ট হাউজ নির্মাণ করছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং কৃষিমন্ত্রী একাধিকবার স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে লেকটি সেখানে খনন করতে দেয়ার জন্য গারোদের অনুরোধ করেছেন। তবে ওই পরিবারগুলি তাতে রাজি হয়নি।

'আলোচনা সাপেক্ষে সমস্যাটি দ্রুত সমাধান করা জরুরি বলে আমরা মনে করি। এছাড়াও যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা সবাইকে সংযত হবার আহ্বান জানাই,' তিনি যোগ করেন।

টাঙ্গাইল বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সাজ্জাদুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, স্থানীয়রা ফসল আবাদ করলেও লেক খননের জন্য নির্ধারিত জমিগুলি সরকারি গেজেটভূক্ত সংরক্ষিত বনভূমি।

যে কজন স্থানীয় এখানে চাষ করেন তাদের ইতোমধ্যে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক পাঁচ লাখ টাকা এবং উপজেলা প্রশাসন আরও পাঁচ লাখ টাকা মানবিক সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়াও তাদের স্থানীয় সামাজিক বনায়নে উপকারভোগী করার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। লেক হলে সেখানে তাদের বোট ভাড়া দিয়ে রোজগারের সুযোগ করে দেয়ার কথাও বলা হয়েছে। এরপরও তারা মানছে না, বলেন এই বন কর্মকর্তা।

'আমরা কি করতে পারি? বন বিভাগের লোকজন তো সরকারি কর্মচারী। তাদেরকে তো নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে হবে,' বলেন তিনি।

 

Comments