‘গুলশান থেকে চোখ সাধারণ মানুষের দিকে ফেরাতে হবে’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, সরকারি তথ্য বলছে ঢাকার গুলশানে দারিদ্র্য হার ৪ শতাংশ আর দেশের সবচেয়ে গরিব এলাকায় দারিদ্র্য হার ৮০ শতাংশ। দেশ শাসন করা শাসকদের চোখ গুলশানের দিকে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ৫১ বছরের বাংলাদেশে এটা মানা যায় না। এজন্য সাধারণ মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেনি। মুক্তিযুদ্ধের অর্জন রক্ষা করতে গুলশান থেকে চোখ সাধারণ মানুষের দিকে  ফেরাতে হবে।
cpb_ds.jpg
সভায় রুহিন হোসেন প্রিন্সসহ অন্যান্যরা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, সরকারি তথ্য বলছে ঢাকার গুলশানে দারিদ্র্য হার ৪ শতাংশ আর দেশের সবচেয়ে গরিব এলাকায় দারিদ্র্য হার ৮০ শতাংশ। দেশ শাসন করা শাসকদের চোখ গুলশানের দিকে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের ৫১ বছরের বাংলাদেশে এটা মানা যায় না। এজন্য সাধারণ মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেনি। মুক্তিযুদ্ধের অর্জন রক্ষা করতে গুলশান থেকে চোখ সাধারণ মানুষের দিকে  ফেরাতে হবে।

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় পটুয়াখালী কলেজ রোডে সিপিবির অস্থায়ী কার্যালয়ে দলের বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সিপিবির ঝালকাঠি জেলা সভাপতি স্বপন সেন গুপ্তের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়ক, পটুয়াখালী জেলা সভাপতি মোতালেব মোল্লা, বরিশাল জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সেলিম, বরগুনা জেলার নেতা জাকির হোসেন জুয়েল, ভোলা জেলা সভাপতি মোবাশ্বির উল্লাহ, ঝালকাঠি জেলা সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত দাস হরি, পিরোজপুর জেলা নেতা খ ম মিরাজ পার্টি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মিলন, শাহবুদ্দিন আহমেদ, চিত্ত শীল, মোয়াজ্জেম হোসেন মানিক, সুভাষ চন্দ্র নাগ, সমীর কর্মকার, নূর হোসেন খান, বরিশাল মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক বিপ্লব দাস প্রমুখ।

সভায় রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, 'পাকিস্তান এক দেশ থাকলেও ছিল দুই অর্থনীতি। এখনো এক বাংলাদেশে দুই অর্থনীতি চলছে। আগে পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদ পাচার হতো পশ্চিম পাকিস্তানে। এখন পাচার হয় ইউরোপ, আমেরিকা, ভারতে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ লুট করা হয়েছে। জাতীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নেই। এমনকি আমাদের রক্ষাকবচ, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনকে পর্যন্ত ধ্বংস করা হচ্ছে। পালাক্রমে দেশ শাসন করা শাসকেরা দেশে চরম বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। এরাই গণতন্ত্রহীনতা, ভোটের অধিকার হরণ, লুটপাটতন্ত্র, সাম্প্রদায়িকতা লালন পালন করে চলেছে।' 

'দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদী শক্তির তাঁবেদারি করে। এদের হাত থেকে দেশ ও দেশের সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে নীতি-নিষ্ঠ রাজনৈতিক দল সিপিবিকে আরও সক্রিয় করতে হবে। গণ আন্দোলন, গণ সংগ্রামের ধারায় পার্টিকে এগিয়ে নিতে হবে। অন্যান্য বাম প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক নিষ্ঠাবান শক্তি, দল, ব্যক্তিকে কাছে টানতে হবে', বলেন তিনি।

দক্ষিণাঞ্চলের বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, 'আমাদের সংবিধানে গ্রাম শহর ও আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করার কথা থাকলেও হচ্ছে না। অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ ও সম্পদের সুষম বণ্টনের কথা থাকলেও বৈষম্য বেড়ে চলেছে। চলতি ব্যবস্থাই এই সংকট তৈরি করেছে। দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি ও অর্থনীতির হাতে দেশ আজ বন্দি। এর থেকে মুক্তি পেতে ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে, বিজয়ী হতে হবে। গুলশান থেকে চোখ সাধারণ মানুষের দিকে ফেরাতে হবে। এটা করতে পারবে বামপন্থিরা।'

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে রুহিন হোসেন বলেন, 'সারাদেশের মানুষের চাহিদামতো খাবার সরবরাহে, বাজার নিয়ন্ত্রণে  সরকার ব্যর্থ। সবকিছুর দাম বাড়িয়ে জনগণের পকেট কাটা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ কম খেয়ে পুষ্টিহীনতায় ভুগছে।'

সারা দেশে রেশন ব্যবস্থা, ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু, ফ্যামিলি কার্ডের সংখ্যা বৃদ্ধি ও কমদামে ওয়ার্ডে নিত্যপণ্য সরবরাহের দাবি জানিয়ে তিনি সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং অযৌক্তিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধে, মজুদদারি-লুটপাটের বিরুদ্ধে এলাকায় এলাকায় প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

সিপিবি সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'সরকার মেগা প্রকল্পের নামে মেগা লুটপাটের টাকা জোগান দিতে নতুন নতুন লুটপাটের পথ তৈরি করছে। স্থানীয় মানুষের সম্মতি ছাড়া কোনো প্রকল্প নেওয়া যাবে না। সব প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।'

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণের খবরে স্বস্তি প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, 'এর সুফল যেন এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ পায়, তার জন্য এলাকায় কৃষি উন্নয়ন, কৃষি ভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে হবে। এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে উপকূলীয় মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ কর্মসূচি নিতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিতে হবে। নতুন নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। পরিবেশ প্রতিবেশ ধ্বংসকারী প্রকল্প নেওয়া চলবে না।'

উৎপাদিত কৃষি পণ্যের লাভজনক দাম নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় খাদ্য গুদাম গড়ে তোলা, উৎপাদক সমবায় ও ভোক্তা সমবায় গড়ে তোলার দাবি জানিয়ে তিনি চলমান দুঃশাসনের অবসানের ঘটিয়ে বাম গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম জোরদার করার আহ্বান জানান।

Comments