‘তথ্য পেয়েছি এমন কিছু করবে যেন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করতে না পারি’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষায় সবাইকে সতর্ক থাকবে হবে।
স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার দুপুরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ চালাতে এসেছি, নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি—দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি। কাজে যদি কেউ কখনো অপবাদ দিতে চায় সেটা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। আর কারো কাছে আমরা মাথানত করে চলতে চাই না। পদ্মা সেতু নিয়ে একটা মিথ্যা অপবাদ আমাদের ওপর দেওয়া হয়েছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো সেটা আমাদেরই একজন স্বনামধন্য মানুষ, যাকে আমি নিজেই সব থেকে বেশি সুযোগ দিয়েছি। ব্যবসা-বাণিজ্য, তার ব্যাংকে টাকা দেওয়া থেকে শুরু করে সব কিছুতে সব থেকে বেশি সুযোগ যাকে দিয়েছিলাম সেই বেঈমানিটা করল সামান্য ব্যাংকের একটা এমডি পদের জন্য। সেটা হলো ড. ইউনূস। আমি নাম বলবো কারণ এখন আমি পদ্মা সেতু করে ফেলেছি।
আইন অনুযায়ী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এমডি থাকতে পারে। ৭০ বছর পর্যন্ত এমডির পদে সে ছিল। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ নিয়েছিল, আইনগতভাবে সে থাকতে পারে না। তখন তাকে বলা হয়েছিল, আমাদের তরফ থেকে আমরা বলেছিলাম আপনি গ্রামীণ ব্যাংকের উপদেষ্টা হোন। অ্যাডভাইজার এমিরেটাস হিসেবে একটা মর্যাদা তাকে দেওয়ার কথা। কিন্তু তিনি এই এমডি পদটা ছাড়বেন না। অথচ গ্রামীণ ব্যাংক চালাতে পারে না। আমি ৯৮ সালে যখন সরকারে, ভয়াবহ বন্যা, সেই সময় এই ব্যাংকে প্রথমে ১০০ কোটি তারপর ২০০ কোটি, তারপর ৪০০ কোটি টাকা গ্রামীণ ব্যাংককে আমি দিয়েছিলাম; ব্যাংকটা যেন চালু থাকে। গরিবের কথা চিন্তা করে। কিন্তু গরিবের কাছ থেকে প্রায় ৪৭ ভাগ সে ইন্টারেস্ট নিত, এটি হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাগ্যের বিষয়, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, যখন আমরা ডিজিটাল সিস্টেম নিয়ে এলাম। টেলিকমিউনিকেশন, আগে সব এনালগ ছিল এবং মোবাইল ফোনের ব্যবসা দিয়ে দিলাম প্রাইভেট সেক্টরে, তাকেও একটা মোবাইল ফোনের ব্যবসা দেওয়া হলো। আরও যে দুটো আমরা দিয়েছিলাম তাদের আমরা বেশি সুযোগ দেইনি কিন্তু গ্রামীণ ফোনের জন্য রেলওয়ে অপটিক ফাইবার ক্যাবল ব্যবহার করার সুযোগ আমরা দিয়েছিলাম। ১০০ কোটি টাকার ডিপোজিট দিতে হয় সেটা তাকে মওকুফ করেছিলাম এবং তাকে অন্যান্য সুবিধা...মানে সব ধরনের সুবিধা তাকে এত বেশি দেওয়া হয়েছিল কিন্তু সেই লোকই এমডি পদে থাকতে পারবে না; অথচ এটা তো আইনগত ব্যাপার—এটা জানার পরে ড. ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থেকে শুরু করে সরকারের সবাইকে আসামি করে। কিন্তু প্রত্যেকটি মামলায় হেরে যায়। হেরে গিয়ে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। তখন তার বন্ধু আমেরিকার ফরেন মিনিস্টার হিলারি ক্লিনটন—তিনি ক্লিনটন ফাউন্ডেশন করেন। সেই ফাউন্ডেশনে ৩ লাখ ডলার ডোনেশন দিয়েছিলেন ড. ইউনূস। যদিও কেউ কখনো প্রশ্ন করেনি এই ৩ লাখ ডলার একটা ব্যাংকের এমডি কোথায় পেল, কীভাবে দিলো।
এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, হিলারির কাছে বারবার ধরনা দেয়। হিলারি আমার কাছে ফোনও করে। তাকে আমি আইনের কথাই বলেছি। এভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে বারবার ইমেইল পাঠায়, হিলারিকে বারবার ইমেইল পাঠায় এবং তারই প্ররোচনায় ওয়ার্ল্ড ব্যাংক পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেয়। এরপরই একটা দুর্নীতি হয়েছে...আমি বলেছি দুর্নীতির প্রমাণ দিতে হবে। এটা আমি একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক মামলা করে, সেই মামলায় হেরে যায়। কানাডার কোর্ট বলে দেয়, এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক যা যা অভিযোগ এনেছে সব ভুয়া, মিথ্যা। ইউনূসের প্ররোচনায় ওয়ার্ল্ড ব্যাংক টাকা বন্ধ করে দিয়েছিল জন্য আমি তখন ঘোষণা দিয়েছিলাম পদ্মা সেতু নিজের টাকায় করবো। যেদিন নিজের টাকায় করতে পারবো সেদিনই করবো। খুব স্বাভাবিক অনেকে ভেবেছিল আমরা এটা করতে পারবো না।
নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এত বড় একটা চ্যালেঞ্জ দিয়ে যে কাজটা আমরা সম্পন্ন করেছি, যারা এর বিরোধিতা করেছিল তাদের কিন্তু একটা উদ্দেশ্য আছে। কিছু কিছু তথ্য আমরা পেয়েছি, এমন একটা ঘটনা ঘটানো হবে যেন ২৫ তারিখে আমরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটা করতেই না পারি। কী করবে তা জানি না। ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন, রেলে আগুন, লঞ্চে আগুন, ফেরিতে আগুন, এমনকি সীতাকুণ্ডে যে আগুনটা; একটা জায়গা থেকে আগুন ধরে কিন্তু বিক্ষিপ্ত বিক্ষিপ্ত কয়েকটা জায়গায় একসঙ্গে আগুন ধরে কীভাবে! রেলের আগুনের আমি একটা ভিডিও পেয়েছি, নিচের দিকে রেলের চাকার কাছ থেকে আগুন জ্বলছে। এটা কী করে হয়! সব জিনিসগুলো রহস্যজনক। সে জন্য আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার দিকে নজর দিতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
Comments