দেশকে হায় হায় কোম্পানি বানিয়েছে সরকার: মির্জা আব্বাস

সিলেটে আয়োজিত অনুষ্ঠান। ছবি: সংগৃহীত

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার মেগা প্রজেক্টের নামে বিভিন্নভাবে লুটপাটের মাধ্যমে দেশটাকে 'হায় হায় কোম্পানি' বানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাস।

আজ সোমবার দুপুরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

'ওরা হায় হায় করে, করুক' প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা আব্বাস বলেন, 'আমরা ছোটবেলায় শুনেছিলাম হায় হায় কোম্পানির কথা। অনেকেই শুনেছেন। অর্থাৎ একটা কোম্পানি মানুষের থেকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে টাকা নিয়ে চলে যায়। তাকে বলি হায় হায় কোম্পানি। আজকে তেমনই বাংলাদেশকে হায় হায় কোম্পানিতে পরিণত করেছে ক্ষমতাসীনরা। কারণ আজকে আমাদের তেল নাই, খাদ্য নাই, পানি নাই, বিদ্যুৎ নাই। খালি নাই আর নাই। তারা দেশের সবকিছু লুটপাট করে খেয়ে ফেলেছে।'

সিলেটবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আজকে বক্তৃতা দিয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। অথচ এটা হওয়ার কথা নয়। বরং দেশের জন্য কথা বলার কথা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসেন বলেই তিনি সুদূর লন্ডনে থেকেও আপনাদের জন্য আমাদেরকে পাঠিয়েছেন। পুরো সিলেটে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, যার যা আছে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কতটুকু সফল হয়েছি জানি না। কিন্তু আমরা সিলেট ও সুনামগঞ্জবাসীর পাশে ছিলাম। তবে আমরা শুনিনাই যে, আওয়ামী লীগের কোনো নেতা বা সংগঠন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে? কারণ তারা তো বিদ্যুৎখাতের টাকা লুট করেছে কুইক রেন্টালের মাধ্যমে। এরমাধ্যমে কিছু লোককে ধনী করা হলো। আজকে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিভিন্ন কোম্পানিকে হাজারো কোটি টাকা দিচ্ছে শুধু শুধু। অথচ তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে না। ভারত সরকারের আদানি গ্রুপকেও টাকা দেওয়া হচ্ছে। এসব বলার মানে আওয়ামী লীগের বদনাম করা নয়।'

'এসব টাকা লুট না হলে এই সিলেট ও সুনামগঞ্জের মানুষকে পুনর্বাসিত করতে পারতাম না? খাদ্য ও চিকিৎসা সেবা দিতে পারতাম না? পারতাম। কিন্তু এই সরকারের লুটপাটের কারণে দেশটা ধ্বংস হয়ে গেছে। বিদেশিদের সঙ্গে কী চুক্তি করেছে আমরা জানি না। তবে, একটি কথা পরিষ্কার যে, এই বাংলাদেশ কারো দয়ার বা দানের নয়। এই সিলেট থেকেই শহীদ জিয়াউর রহমান সেক্টর কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। দরকার পড়লে আবারও দেশ স্বাধীন হবে। বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখবে', বলেন তিনি।

মির্জা আব্বাস বলেন, 'সিলেটে বন্যা হয় আর সরকার হেলিকপ্টার থেকে ত্রাণ ফেলে। এভাবে মানুষকে মারছে। সরকার এখন ভাবছে তারা পালিয়ে বাঁচবে। কিন্তু দেশের মানুষ সহজে যেমন ধরে না। তেমনই সহজে ছাড়েও না।'

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ) ও ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) যৌথ উদ্যোগে এবং স্থানীয় বিএনপির সহযোগিতায় আজ সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় বন্যাদুর্গতদের চিকিৎসার জন্য ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও বিনামূল্যে ওষুধ-বস্ত্র বিতরণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেডআরএফের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার। স্থানীয় ময়ুরকুঞ্জ কমিউনিটি সেন্টারে প্রায় ১ হাজার রোগীর শারীরিক অবস্থা দেখে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সেবা প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে আমান উল্লাহ আমান বলেন, 'আমরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু ক্ষমতাসীন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উল্লেখযোগ্য তৎপরতা চোখে পড়েনি। অথচ জেডআরএফ ও ড্যাবের শত শত চিকিৎসক বন্যার্ত অসহায় গরিব মানুষকে সাহায্য দিচ্ছে। এজন্যই মানুষ মনে করে বিএনপি জনগণের দল। অন্যদিকে সরকার ব্যস্ত পদ্মা সেতুর জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধন, গুম, খুন আর দুর্নীতি নিয়ে। সেই লক্ষ্যেই সিলেটের কৃতি সন্তান ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে। এভাবেই তারা বিএনপিকে নির্মূল করতে উঠে-পড়ে লেগেছে। আজকে দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার নেই। এসব পুনরুদ্ধারে আমাদের সবাইকে রাজপথে দাঁড়াতে হবে। এই ভোটারবিহীন সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। তা না হলে জনগণ অবৈধ সরকারকে তার কার্যালয় থেকে বের করে আনবে। প্রয়োজনে হাজারো মানুষ জীবন দেবে। তবুও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। সিলেট থেকেই শুরু হবে সরকার পতনের আন্দোলন।'

অনুষ্ঠানে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভাপতির বক্তব্যে ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, 'আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি জেডআরএফ ও ড্যাবের উদ্যোগে বন্যাদুর্গত গরিব ও অসহায় মানুষকে সেবাপ্রদান করতে। ইনশাআল্লাহ আমরা এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখব।'

Comments

The Daily Star  | English

Child rape cases rise nearly 75% in 7 months

Child rape cases in Bangladesh have surged by nearly 75 percent in the first seven months of 2025 compared to the same period last year, according to data from Ain o Salish Kendra (ASK).

6h ago