রেলের অনিয়ম অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে প্রবল হচ্ছে যাত্রীক্ষোভ

(ঘড়ির কাঁটা অনুযায়ী বামে ওপর থেকে) রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মহিউদ্দিন রনির প্রতিবাদ, জামালপুর স্টেশনে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি, নোয়াখালীর চৌমুহনীতে অবস্থান ধর্মঘট ও চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে চবি শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী কর্মসূচি। ছবি: স্টার/সংগৃহীত

বাংলাদেশ রেলওয়ের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা ও যাত্রী হয়রানির প্রতিবাদসহ ৬ দফা দাবিতে টানা ১৪ দিন ধরে অহিংস কর্মসূচি পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি।

রেল কর্তৃপক্ষ বলছে রনির দাবিগুলো যৌক্তিক এবং তারা ইতোমধ্যে সেগুলো নিয়ে কাজ করছে।

রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে গত ৭ জুলাই থেকে একাই অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন রনি। তার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় অহিংস আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে।

জানা যায়, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, নোয়াখালী, শরীয়তপুর, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া রেল স্টেশনে রনির দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী ১৭ জুলাই থেকে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে রনির ৬ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করছেন। তারা গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম রেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রেলপথ মন্ত্রণালয় বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। স্মারকলিপিতে শাটল ট্রেনের সমস্যা দূর করতে আরও ৫ দফা দাবি জানান তারা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী কাজী আশিকুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের আরও আগে রেলের এই অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করা উচিত ছিল। রনি যখন রেলের অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে একাই আন্দোলন শুরু করেন তখন আর বসে থাকতে পারিনি। তার সাহস ও মনোবল আমাদের আন্দোলনের প্রেরণা জুগিয়েছে। আমাদের আন্দোলন সম্পূর্ণ অহিংস।'

তিনি বলেন, 'আমাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে আমরা স্টেশনে ঢুকতে পারি। তৃতীয় দিন আমাদেরকে আটকে দেওয়ার জন্য স্টেশনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। স্টেশনে আমাদের প্রবেশের অনুমতি নেই বলে জানানো হয়। তখন আমরা স্টেশনের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা সরছি না।'

রনির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে জামালপুর রেলওয়ে স্টেশনে টানা তৃতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ৬ জন শিক্ষার্থী।

তাদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সোমবার আমরা ৪ জন আন্দোলন শুরু করি। মঙ্গলবার আমাদের সঙ্গে আরও ২ জন যোগ দিয়েছেন। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত রেলের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে আমাদের অহিংস কর্মসূচি চলবে।'

আন্দোলনকারীদের ওপর বিভিন্ন হুমকি আসছে দাবি করে তিনি বলেন, 'আমাদের স্টেশনে দাঁড়াতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িতরা আমাদের হুমকি দিচ্ছেন। গতকাল থেকে হুমকি দিয়ে আমার ফোনে ২০-২৫টি কল এসেছে। আমাকে বলা হয়েছে আজ বুধবার জামালপুর স্টেশনে দাঁড়ালে নাকি আমি হেঁটে বাড়ি যেতে পারব না। আমরা এসব হুমকিকে ভয় পাচ্ছি না। আজও আমরা স্টেশনে দাঁড়িয়েছি।'

মেহেদী হাসানের ভাষ্য, 'আমদের এই কর্মসূচি সম্পূর্ণ অহিংস। আমাদেরকে বিতর্কিত করার জন্য কেউ সহিংস ঘটনা ঘটালে আমরা সে দায়ভার নেব না। যারা রনির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন তারা কখনো সহিংস কিছু করবেন না।'

রনির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে মৌলভীবাজারের 'কুলাউড়া উপজেলার সাধারণ রেলওয়ে যাত্রীগণ' ব্যানারে গতকাল মঙ্গলবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।

কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম শামীম গণমাধ্যমকে বলেন, 'অনলাইনে ১০ মিনিটের মধ্যে টিকেট শেষ হয়ে যায়। কাউন্টারে আসলে বলে টিকেট নেই। অথচ কালো বাজারে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি দিলে টিকেট পাওয়া যায়। কিছু দুর্নীতিবাজের কারণে আমাদের রেল ধ্বংস হতে পারে না। সবাইকে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।'

রনির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে নোয়াখালী-ঢাকা রুটে যাত্রী সেবার মান বাড়াতে ১১ দফা দাবি নিয়ে নোয়াখালীতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। গত সোমবার সকাল ১১টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী রেল স্টেশনে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

রনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দাবি পূরণে রেল কর্তৃপক্ষকে আমি ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি যা আগামীকাল দুপুর ৩টায় শেষ হবে। দুপুর ৩টার পর আমি পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।'

রনি বলেন, 'আমি যে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে আন্দোলন করছি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রায় তাই প্রমাণ করে। আমাদের সবাইকে সত্যের পথে সোচ্চার থাকতে হবে।'

দেশের বিভিন্ন জায়গায় রেলের অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে যারা কর্মসূচি পালন করছে তাদেরকে অহিংস থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'যারা আমার প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে স্বেচ্ছায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে তাদেরকে আমি সাধুবাদ জানাই। আমাদের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য কেউ যেন সহিংসতায় জড়াতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকার অনুরোধ করছি।'

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) অসীম কুমার তালুকদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মহিউদ্দিন রনি যে ৬ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে তা সম্পূর্ণ যৌক্তিক ও ন্যায় সঙ্গত। ট্রেনে বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ছাড়া তার সব দাবিগুলো পূরণ করা সম্ভব। আমরা ইতোমধ্যে এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছি।'

ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি হয় জানিয়ে তিনি বলেন, 'কিছু দিন আগেই আমি একজনকে ধরলাম। আমরা চেষ্টা করছি সবকিছু ঠিক করার। বিভিন্ন আইনি জটিলতা থাকায় সবকিছু তো আর দ্রুত ঠিক করা যায় না। কিছুদিন সময় লাগবে। তবে দেশের রেল ব্যবস্থা এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো। আমরা সেবা আরও উন্নত করার চেষ্টা করছি।

Comments

The Daily Star  | English

Türk concerned over changes in Bangladesh's legislation banning activities of parties

"This [the changes in legislation] unduly restricts the freedoms of association, expression, and assembly," says the UN high commissioner for human rights

51m ago