আজভস্টল কারখানা থেকে ৩০০ বেসামরিক নাগরিক উদ্ধার: জেলেনস্কি

মারিউপোলের বহুল আলোচিত ও ইউক্রেন সেনাবাহিনীর ‘শেষ প্রতিরক্ষা’ হিসেবে বিবেচিত আজভস্টল ইস্পাত কারখানায় আটকে পড়া সব নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষকে বের করে আনা হয়েছে বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
মারিউপোলের বহুল আলোচিত ও ইউক্রেন সেনাবাহিনীর ‘শেষ প্রতিরক্ষা’ হিসেবে বিবেচিত আজভস্টল ইস্পাত কারখানা. ছবি: রয়টার্স

মারিউপোলের বহুল আলোচিত ও ইউক্রেন সেনাবাহিনীর 'শেষ প্রতিরক্ষা' হিসেবে বিবেচিত আজভস্টল ইস্পাত কারখানায় আটকে পড়া সব নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষকে বের করে আনা হয়েছে বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

আজ রোববার রয়টার্স জেলেনস্কির বরাত দিয়ে জানায়, এরপর আহত ও স্বাস্থ্য সেবাকর্মীদের বের করে আনার দিকে নজর দেওয়া হবে।

সোভিয়েত আমলে নির্মিত এই বিশাল আকারের ইস্পাত কারখানাকে বাঙ্কার হিসেবে ব্যবহার করে প্রায় দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। রাশিয়ার পক্ষ থেকে তাদেরকে বার বার আত্মসমর্পণের অনুরোধ জানানো হলেও তারা এতে রাজি হননি।

পশ্চিমা বিশেষজ্ঞদের ধারণা, রাশিয়া ৯ মে বিজয় দিবস উদযাপনের আগেই মারিউপোল দখলের ঘোষণা দিতে চাইছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই দিনটিতে রুশ বাহিনী জার্মান উগ্র জাতীয়তাবাদী বাহিনীকে পরাস্ত করেছিল।

রাশিয়ার বিজয় দিবসকে সামনে রেখে আজ ইউক্রেনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও অপর জি৭ নেতারা জেলেনস্কির সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলবেন।

রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন সাধারণত এই দিনটিতে মস্কোয় বড় আকারের সেনা মহড়ার আয়োজন করেন এবং তিনি সশরীরে সেই মহড়া পরিদর্শন করেন।

সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, বিজয় দিবসে পুতিনের ভাষণে যুদ্ধের পরবর্তী মোড় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে। পশ্চিমা গণমাধ্যমের ভাষ্য অনুযায়ী, ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশদের বিশেষ সামরিক অভিযানের শুরু থেকেই সামরিক সরঞ্জাম সংক্রান্ত সমস্যা তাদের অগ্রযাত্রাকে বিঘ্নিত করেছে এবং ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রবল প্রতিরোধের মুখে তাদের অনেক সেনা হতাহত হয়েছেন এবং অসংখ্য ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান ধ্বংস হয়েছে। তবে রাশিয়া এসব দাবির কোনোটিই স্বীকার করেনি।

মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) পরিচালক উইলিয়াম বার্নস জানান, পুতিন ভাবছেন সব ধরনের উদ্যোগের মাত্রা দ্বিগুণ করলে যুদ্ধের ফলাফল রুশদের পক্ষে চলে আসবে।

‘পুতিন হার মানতে নারাজ’: মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) পরিচালক উইলিয়াম বার্নস

'পুতিন হার মানতে নারাজ', যোগ করেন বার্নস।

অন্যান্য পর্যবেক্ষকরা ভাবছেন, পুতিন মারিউপোলের 'মিশন সমাপ্ত' হয়েছে বলে ঘোষণা দিতে পারেন।

ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, ক্রেমলিনের কর্মকর্তারা সম্ভবত মারিউপোলে একটি বিজয় দিবসের মহড়া আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

শনিবার গভীর রাতে দেওয়া বক্তৃতায় জেলেনস্কি জানান, ৩০০ জনেরও বেশি বেসামরিক ব্যক্তিকে আজভস্টল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং কর্তৃপক্ষ এখন আহত ব্যক্তি ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বের করে আনার দিকে নজর দিচ্ছে।

৩০০ জনেরও বেশি বেসামরিক ব্যক্তিকে আজভস্টল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ছবি: ইপিএ

মারিউপোলের অন্যান্য অংশের বাসিন্দাদের সহায়তা দেওয়া ও আশপাশের এলাকাগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা জানিয়েছেন, ইস্পাত কারখানা থেকে ১৭৬ জন বেসামরিক নাগরিককে বের করে আনা হয়েছে। ঠিক কতজন বেসামরিক নাগরিক কারখানার ভেতরে আটকা পড়েছিলেন, সেটি নিশ্চিত নয়।

রয়টার্স কোনো পক্ষের দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।

ধারাবাহিক বোমাবর্ষণের মুখে যোদ্ধা ও বেসামরিক নাগরিকরা বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে আজভস্টলে ভেতরে মাটির গভীরে অবস্থিত বাঙ্কার ও সুরঙ্গে আটক অবস্থায় থেকেছেন। তাদের কাছে খুব কম পরিমাণ খাদ্য, পানি ও ওষুধ ছিল।

বোমার আঘাতে মারিউপোল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং ইস্পাত কারখানারও বড় একটি অংশ ধ্বংস হয়েছে।

মস্কো দাবি করেছে, তারা বিশেষ সামরিক অভিযানের মাধ্যমে ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ ও দেশটিকে উগ্র জাতীয়তাবাদীদের হাত থেকে রক্ষা করছে। পশ্চিমারা এই দাবি মেনে নেয়নি এবং একে বিনা উসকানিতে ইউক্রেনে আক্রমণের অজুহাত হিসেবে বর্ণনা করেছে।

রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণের আগে রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক দখল করে নেয়। ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে অবস্থিত এই দুটি এলাকাকে রাশিয়া স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা দেয়।

এর আগে, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহায়তায় ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে নেয় রাশিয়া। এই ২ অঞ্চলের মধ্যে মারিউপোল একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী। এ শহরের দখল নিতে পারলে একদিকে ক্রিমিয়া ও দনবাসের ২ অঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা যাবে, অপরদিকে ইউক্রেনের মূল ভূখণ্ডে অস্ত্র ও পণ্যের প্রবাহও থামানো যাবে। এসব কারণে রাশিয়ার জন্য মারিউপোলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ইউক্রেন সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, মারিউপোলে রুশদের সামরিক কর্মকাণ্ডের পেছনে মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা এবং ভূ-করিডরের মাধ্যমে এসব অঞ্চলের সঙ্গে ক্রিমিয়ার সংযোগ স্থাপন করা।

Comments