‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ চায় না, যুদ্ধ চায় যুক্তরাষ্ট্র’

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রায় ৭০ বছর পর ইউরোপে আবার বড় আকারের যুদ্ধের আশঙ্কা বিরাজ করছে। ‘এই যুদ্ধ শুরু হলো বলে’—মনে করছেন পশ্চিমের নেতারা। তাদের ভাষ্য, ইউক্রেনে অভিযানের জন্যই দেশটির সীমান্তে বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। আর রাশিয়ার বক্তব্য, ‘ইউক্রেনে হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই’।
ছবি: রয়টার্স

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রায় ৭০ বছর পর ইউরোপে আবার বড় আকারের যুদ্ধের আশঙ্কা বিরাজ করছে। 'এই যুদ্ধ শুরু হলো বলে'—মনে করছেন পশ্চিমের নেতারা। তাদের ভাষ্য, ইউক্রেনে অভিযানের জন্যই দেশটির সীমান্তে বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। আর রাশিয়ার বক্তব্য, 'ইউক্রেনে হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই'।

এ সবই পুরনো তথ্য। একদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্রমাগতভাবে বলে যাচ্ছেন—যেকোনো সময় ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে রাশিয়া। এমনকি, হামলার দিন-তারিখ নিয়েও পশ্চিমের দেশগুলো 'নিশ্চিত' হয়েছিল। কিন্তু, যুদ্ধ বাঁধেনি।

ইউক্রেনে যুদ্ধ কি আসন্ন? রাশিয়া কি সত্যিই ইউক্রেন আক্রমণ করবে? কী আছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মনে? যুক্তরাষ্ট্র কি পারবে ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান ঠেকাতে? আসলে রাশিয়া কতটা শক্তিশালী? ইউক্রেনে রুশ হামলার পরিণতি কী?—এমন হাজারো প্রশ্ন নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিশেষ করে, পশ্চিমের গণমাধ্যম ব্যস্ত রয়েছে আলোচনা-বিশ্লেষণে।

ছবি: রয়টার্স

কী ঘটছে ইউক্রেনে?

অল্প কথায় বলা যায়, পশ্চিম সীমান্তে প্রতিবেশী ইউক্রেনকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ হিসেবে রাশিয়ার চেয়েছিল নিজের অনুগত রাখতে। যেমনটি রয়েছে অন্যান্য বেশিরভাগ সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলো। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিলও।

২০০৪ সালে বিতর্কিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে ইউক্রেনের তৎকালীন রুশপন্থি প্রধানমন্ত্রী ভিক্তর ইয়ানুকোভিচ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসলে পশ্চিমের গণতান্ত্রিক দেশগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের চোখ পড়ে ইউক্রেনের উপর।

প্রায় ১০ বছর শক্ত হাতে দেশ চালালেও শেষ রক্ষা হয়নি ইয়ানুকোভিচের। গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। কিয়েভ চলে যায় পশ্চিমের সমর্থনপুষ্ট গণতন্ত্রপন্থিদের হাতে। এরপর দেশটি আর একদিনের জন্যও শান্তিতে ছিল না।

ইয়ানুকোভিচের পতনের ২ দিনের মাথায় রুশ সীমান্তবর্তী ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে রাশিয়া। একসময় ক্রিমিয়া রাশিয়ার অংশ ছিল—সেই যুক্তিতে পুতিন সামরিক অভিযানের মাধ্যমে উপদ্বীপটিকে আবার নিজ দেশের অংশ করে নেন।

এতেই ক্ষান্ত হননি পুতিন। ইউক্রেনের রুশভাষী অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্কে কিয়েভবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সহায়তা দেন তিনি। সীমান্তবর্তী এলাকায় বিপুল সংখ্যক সেনা সমাবেশ ঘটান। প্রতিনিয়ত চাপে রাখেন ইউক্রেনের পশ্চিমাপন্থি সরকারকে।

এ দিকে, ইউক্রেনকে রক্ষায় সহায়তার হাত বাড়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র। কেননা, গণআন্দোলনের সময়ই রাশিয়ার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে চোখ রাখার ঘোষণা দিয়েছিল ইয়ানুকোভিচবিরোধী দলগুলো। ক্ষমতায় আসার পর তা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তারা।

রুশবিরোধী বা পশ্চিমাপন্থি হওয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সোভিয়েতবিরোধী সামরিক জোট ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হলে এর প্রতিবাদ করেন পুতিন। তিনি একে রাশিয়ার নিরাপত্তা-স্বার্থে চরম আঘাত হিসেবে মনে করেন।

পুতিন এতোটাই ক্ষিপ্ত হন যে এমনকি, পুরো ইউরোপকে অস্থির করে তোলার হুমকি দিয়ে বসেন। ক্রিমিয়া, বেলারুশ ও মোলদোভায় নতুন করে সেনা সমাবেশ ঘটান তিনি। এরপর শুরু হয়ে যায় রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের বাকযুদ্ধ। কেউ কাউকে সামান্যতম ছাড় না দেওয়ার ঘোষণা আসছে প্রতিদিনই।

মোটা দাগে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত ৬ বছর পেরিয়ে সপ্তম বছরে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এত আলোচনায় আগে কখনো আসেনি রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট।

উস্কানিতে সাড়া দেবে না ইউক্রেন

বিবিসিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, '১৯৪৫ সালের পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় যুদ্ধের পরিকল্পনা করছে রাশিয়া।' প্রাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন বলেও দাবি করেন।

বিবিসির অপর এক প্রতিবেদনে জানা যায়, গতকাল জার্মানির মিউনিখে নিরাপত্তা সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেস্কি বলেছেন, ইউক্রেনের জনগণ কোনো উস্কানিতে সাড়া দেবে না। একই সঙ্গে তিনি তার দেশকে রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয় প্রকাশ করে বলেছেন, কারো সহায়তা না পেলেও ইউক্রেন নিজের শক্তি দিয়েই নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করবে।

গত রোববার চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিজিটিএন'র মন্তব্য প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া বা ইউক্রেন কেউই যুদ্ধ চায় না। আসলে যুদ্ধ চায় শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র। 'বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশটি যুদ্ধের জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছে' উল্লেখ করে এতে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পুরোদমে প্রপাগান্ডাযুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শান্তির নামে যুদ্ধ চাপিয়ে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

Comments

The Daily Star  | English

Journalists who legitimised fascism will not be spared: Nahid

Information Adviser Nahid Islam today said journalists and writers who tried to give legitimacy to fascism and instigated mass killing through their writings will be brought to book

1h ago