‘বিশেষ কারণে’ জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ করছে না রাশিয়া
রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি প্রতিষ্ঠান গাজপ্রম 'বিশেষ কারণে' জার্মানিসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রাখার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না বলে জানিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে পাঠানো চিঠির বরাত দিয়ে আজ মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
গত ১৪ জুলাই পাঠানো চিঠিতে গাজপ্রম জানায়, তারা গ্যাস সরবরাহ চুক্তির 'ফোর্স ম্যাজিউর' অংশটি কার্যকর করতে চাচ্ছে।
এ সংবাদ এমন সময়ে এলো যখন নর্ড স্ট্রিম ১ পাইপ লাইনে ১০ দিনের বার্ষিক সংস্কার কাজ চলছে। এই পাইপ লাইনের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ইতালি, স্লোভাকিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রে গ্যাস রপ্তানি করা হয়।
ইউরোপজুড়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল, রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার প্রতিশোধ হিসেবে সংস্কার শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময়ের পর মস্কো পাইপ লাইনে গ্যাসের প্রবাহ চালু নাও রাখতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তাদের আশঙ্কা সত্য হয়েছে। ফলে এ অঞ্চলে জ্বালানি সংকট আরও তীব্র হওয়ার পাশাপাশি অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিতে পারে।
'দৈবক্রমে', বা প্রত্যক্ষভাবে মানুষের নিয়ন্ত্রণে নেই এমন কোনো ঘটনার কারণে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের প্রয়োজন হলে 'ফোর্স ম্যাজিউর' ধারাটি কার্যকর হয়। এর জন্য কোনো পক্ষ দায়ী থাকে না। এটি মোটামুটি সব ধরনের বাণিজ্যিক চুক্তির আবশ্যিক একটি ধারা।
তবে গাজপ্রমের ঘোষণায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধের কথা বলা হয়নি, বরং বলা হয়েছে, 'দৈবক্রমে' গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হলে তার জন্য সংস্থাটিকে দায়ী করা যাবে না।
এ বিষয়ে রয়টার্স গাজপ্রম'র সঙ্গে যোগাযোগ করলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
বেশ কয়েক মাস ধরে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমাচ্ছে রাশিয়া। ইউক্রেন ও বেলারুশের মধ্য দিয়ে যাওয়া পাইপ লাইনের পাশাপাশি বাল্টিক সাগরের নিচ দিয়ে যাওয়া নর্ড স্ট্রিম ১ পাইপ লাইনেও সরবরাহ কমছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র রয়টার্সকে জানায়, 'ফোর্স ম্যাজিউর' ধারাটি মূলত নর্ড স্ট্রিম ১ পাইপ লাইনের বিষয়ে কার্যকর করা হয়েছে।
ইউরোপের ব্যাংক এবিএন আমরোর জ্বালানি সংক্রান্ত জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ হান্স ভ্যান ক্লিফ বলেন, 'এই প্রথম ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে ১০ দিনের রক্ষণাবেক্ষণের পরও নর্ড স্ট্রিম ১ দিয়ে গ্যাস আসা সম্ভবত শুরু নাও হতে পারে।'
তিনি আরও জানান, 'বিশেষ' কারণগুলো প্রযুক্তিগত না রাজনৈতিক তা নির্ভর করবে রাশিয়া, ইউরোপ ও জার্মানির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক কোনদিকে মোড় নেয়।
জার্মানির সবচেয়ে বড় গ্যাস আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ইউনিপার জানিয়েছে, তারা গাজপ্রমের কাছ থেকে উল্লেখিত চিঠিটি পেয়েছে। তবে তারা সেই চিঠির বার্তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
গত ১৪ জুন থেকে গাজপ্রম নর্ড স্ট্রিমের প্রবাহ কমিয়ে ৪০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। সেদিন থেকেই 'ফোর্স ম্যাজিউর' ধারাটি কার্যকর হবে বলে গাজপ্রম জানিয়েছে।
প্রবাহ কমানোর পেছনে কারণ হিসেবে গাজপ্রম অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও নর্ড স্ট্রিমে ব্যবহৃত গ্যাস টারবাইনের সংস্কার শেষ হওয়ায় দেরির কথা উল্লেখ করেছে।
সংস্কার শেষে কানাডা গত ১৭ জুলাই উড়োজাহাজের মাধ্যমে টারবাইনটি জার্মানি পাঠিয়েছে। রাশিয়া পৌঁছাতে টারবাইনটির আরও ৫ থেকে ৭ দিন লাগতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৭ সালের মধ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানি বন্ধ করতে চায়। বিকল্প উৎস তৈরি হওয়া না পর্যন্ত তারা রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাস নেওয়া অব্যাহত রাখবে।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কারিন জঁ-পিয়েরের মন্তব্য, 'রাশিয়া প্রাকৃতিক গ্যাসকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা অব্যাহত রেখেছে।'
রুশ অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, দেশটি চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে তেল ও গ্যাস রপ্তানি থেকে ১১৪ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার (৬ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন রুবল) আয় করেছে। এ বছরের জন্য দেশটির আয়ের পরিকল্পনা ছিল ৯ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন রুবল।
Comments