২ বছর স্থগিতের পর ২ ফিলিস্তিনি এনজিওর অর্থায়ন আবারও চালু

ইসরায়েলের আনা ‘জঙ্গিবাদ সমর্থনের’ অভিযোগের মুখে গত বছর ইউরোপীয় কমিশন ২টি ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংস্থার অর্থায়ন স্থগিত করে। সম্প্রতি এই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনের অলাভজন প্রতিষ্ঠান আল-হাকের কার্যালয়ের সামনে প্রতিষ্ঠানের লোগো। ছবি: এপি ফাইল ফটো
ফিলিস্তিনের অলাভজন প্রতিষ্ঠান আল-হাকের কার্যালয়ের সামনে প্রতিষ্ঠানের লোগো। ছবি: এপি ফাইল ফটো

ইসরায়েলের আনা 'জঙ্গিবাদ সমর্থনের' অভিযোগের মুখে গত বছর ইউরোপীয় কমিশন ২টি ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংস্থার অর্থায়ন স্থগিত করে। সম্প্রতি এই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

আজ কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

একই সঙ্গে, এ দুই সংস্থার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আনা 'জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার' অভিযোগকে 'ভিত্তিহীন' বলেছে ইইউ।

ইইউর নির্বাহী শাখা ইউরোপীয় কমিশন কয়েকদিন আগে আল-হাক ও প্যালেস্টিনিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস (পিসিএইচআর) নামের এই ২ সংস্থাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, ১৩ মাস আগে তাদের বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শর্তহীনভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষনিকভাবে প্রযোজ্য।

ইউরোপীয় কমিশন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতারণা বিরোধী কার্যালয়ের (ওএলএএফ) বরাত দিয়ে জানায়, এই ২ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অনিয়ম বা প্রতারণামূলক কার্যক্রমের কোনো লক্ষণ খুঁজে পাওয়া যায়নি, যার ফলে 'তদন্ত পরিচালনার জন্য কোনো গ্রহণযোগ্য যুক্তি নেই।'

এ বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রদের মতে, আল-হাক ইউরোপীয় কমিশনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে উদ্যত হলে এই ইমেল পাঠানো হয়।

২০২১ এর মে মাসে ইইউ আল-হাক ও পিসিএইচআরের অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়।

সে সময়, ইউরোপের কূটনীতিকরা ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে একটি গোপন নথি পান। সেখানে দাবি করা হয়, আল-হাক সহ ৬টি প্রথম সারির ফিলিস্তিন ভিত্তিক এনজিও ইইউর কাছ থেকে পাওয়া অর্থ ব্যবহার করে পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএফএলপি) নামের সংগঠনের অর্থায়ন করছে।

এ তালিকায় পিসিএইচআরের নাম না থাকলেও আল-হাকের পাশাপাশি এ সংস্থারও অর্থায়ন বন্ধ করে দেয় ইউরোপীয় কমিশন।

২০২১ এর অক্টোবরে ইসরায়েল পিএফএলপির সঙ্গে যোগসূত্রের অভিযোগে উল্লেখিত ৬ প্রতিষ্ঠানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।

এই উদ্যোগকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো অযৌক্তিক ও অন্যায় হিসেবে অভিহিত করে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিন্দা জানায়।

ইসরায়েল সরকার তাদের দাবির স্বপক্ষে কোনো জোরালো প্রমাণ দেয়নি।

আরোপিত নিষেধাজ্ঞার আইনি গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে অনুসন্ধানের পর অলাভজনক প্রতিষ্ঠান আল-হাক ইউরোপীয় কমিশনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নেয়।

৪ জুলাই বেলজিয়ামের ব্রাসেলস শহরে এ বিষয়ে প্রথম শুনানির দিন ধার্য করে আদালত।

আল-হাক জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও, সংস্থাটি আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবে, কারণ ইউরোপীয় কমিশনের এ উদ্যোগে সংস্থাটির সুনামহানি হয়েছে। এছাড়াও, ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সেটাও তারা নিশ্চিত করতে চায়।

আল-হাক ও পিসিএইচআরের মত নাগরিক সমাজভিত্তিক সংগঠনগুলো দাতা দেশগুলো থেকে পাওয়া তহবিলের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। এই সংস্থাগুলো বিভিন্ন অধিগ্রহণকৃত এলাকায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।

ফিলিস্তিন ভিত্তিক এনজিও এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এরকম সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েল ও কিছু আন্তর্জাতিক লবি গ্রুপের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে।

১৯৬৭ সাল থেকে শুরু করে ইসরায়েল ৪০০'র চেয়েও বেশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে 'শত্রুভাবাপন্ন' ও 'অবৈধ' তকমা দিয়ে নিষিদ্ধ করেছে। নিষিদ্ধের তালিকায় আছে ফিলিস্তিনের সকল মূল রাজনৈতিক দল।

 

Comments