যুক্তরাজ্য

অনাস্থা ভোটে জিতলেও নিজ দলে ‘আস্থা’ হারিয়েছেন বরিস জনসন

যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে যে ভূমিকম্প হয়ে গেল তা থেকে আপাতদৃষ্টিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন রক্ষা পেলেও তার ক্ষমতায় টিকে থাকা সংশয় নিয়ে দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও তার স্ত্রী
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও তার স্ত্রী। ফাইল ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে যে ভূমিকম্প হয়ে গেল তা থেকে আপাতদৃষ্টিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন রক্ষা পেলেও তার ক্ষমতায় টিকে থাকা সংশয় নিয়ে দেখা দিয়েছে।

'টোরি' হিসেবে পরিচিত তার নিজ দল কনজারভেটিভ পার্টির অনেক এমপি মনে করছেন, বরিস জনসন অনাস্থা ভোটে জিতলেও এই ফলাফল তার নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতাকে খর্ব করেছে।

টোরি এমপি জুলিয়ান স্টার্ডি গণমাধ্যমকে বলেন, 'ফলাফলে প্রমাণিত হয়েছে যে ক্ষমতাসীন দলের পূর্ণ সমর্থন তার সঙ্গে আর নেই। তার নিজের ব্যক্তিগত অবস্থানকে পুনর্বিবেচনা করা উচিৎ।'

একই দলের স্যার রজার গেইল বলেন, 'ফল খুবই খারাপ হয়েছে। বরিস খুবই অবাক হবেন যদি আসন্ন শরৎ পর্যন্ত তিনি এই পদে টিকে থাকতে পারেন।'

এ ছাড়াও, বরিসের কট্টর সমর্থক হিসেবে বিবেচিত এমপি স্টিভ বার্কার ভোটগ্রহণের আগে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, 'বরিস জনসন হয়তো আনুষ্ঠানিকভাবে জয়ী হবেন। কিন্তু, এতে বিষয়টির (নেতৃত্ব চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা) নিষ্পত্তি হবে না।'

তিনি পরিবর্তন আনতে বরিসের বিপক্ষে ভোট দেবেন উল্লেখ করে বলেছিলেন, 'আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কী ধরনের পরিবর্তন আসছে, তা আমি জানি না।'

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, গতকাল সোমবার গোপন ভোটে কনজারভেটিভ পার্টির ৩৫৯ এমপির মধ্যে ২১১ জনের ভোট পান বরিস জনসন। অর্থাৎ, দলের ১৪৮ এমপির সমর্থন তিনি হারিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিই বরিসের ক্ষমতায় টিকে থাকা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

বরিস এই জয়কে 'নিরঙ্কুশ' বলে দাবি করলেও দলকে 'একাত্ম' হয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'এর অর্থ এটাই যে সরকার হিসেবে আমরা এখন সামনে এগিয়ে যেতে পারি এবং সেসব বিষয়ের ওপর নজর দিতে পারি যেগুলো মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে।'

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বরিস জনসনের পূর্বসূরি টেরেসা মে'র বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট হয়। সেসময় তিনি জিতলেও ৬ মাস পর পদত্যাগে বাধ্য হন। তিনি নিজ দলের ৬৩ শতাংশ এমপির ভোট পেয়েছিলেন। সেই তুলনায় বরিস পেয়েছেন ৫৮ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট।

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপি জানিয়েছে, ২০১৯ সালে পূর্বসূরি টেরেসা মে'র স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পর বরিস জনসনের যুক্তরাজ্য ২টি গুরুতর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে। একটি হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়া, যা ব্রেক্সিট হিসেবে পরিচিত ও অপরটি করোনা মহামারি।

এই ২ ঘটনায় যুক্তরাজ্য সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর অবস্থায় পৌঁছে যায়। জ্বালানি ও খাদ্যসামগ্রীর দাম বাড়তে থাকায় প্রবল চাপে আছে বর্তমান সরকার।

তবে বরিসের নেতৃত্বের প্রতি সবচেয়ে বড় আঘাত এসেছে লকডাউনের সময় তার দলের কর্মীদের ধারাবাহিকভাবে পার্টি আয়োজনের তথ্য প্রকাশের পর। এসব ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় দেশজুড়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। কনজারভেটিভ পার্টির নেতারা অস্বস্তি প্রকাশ করেন।

ভোটগ্রহণের আগে হাউজ অব কমন্স-এ বক্তৃতা দিয়ে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন বরিস। তিনি বলেন, 'আমি আপনাদের আবারো বিজয় এনে দেব।'

বরিস হেরে গেলে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস। টুইটারে তিনি বলেন, 'আমি আনন্দিত যে আমাদের সহকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। আমি তাকে শতভাগ সমর্থন করি। এখন আমাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে এগিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে।'

যুক্তরাজ্যের ইতিহাস বলছে, অনাস্থা ভোটে পড়া প্রধানমন্ত্রীরা বেশ দুর্বল অবস্থায় পড়ে যান।

গত মাসের শেষের দিকে প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনে ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আইনভঙ্গের সংস্কৃতি ও 'পার্টি' আয়োজনের বিস্তারিত তথ্য ওঠে আসে। অনেকে এ প্রতিবেদনটিকে 'পার্টিগেট' নামে অভিহিত করেছেন।

পার্টিগেট কেলেঙ্কারীর অভিযোগে বরিস জনসনের পদত্যাগের দাবি জানায় যুক্তরাজ্যের বাসিন্দারা
পার্টিগেট কেলেঙ্কারীর অভিযোগে বরিস জনসনের পদত্যাগের দাবি জানায় যুক্তরাজ্যের বাসিন্দারা। ছবি: রয়টার্স

বরিস মাথা নিচু করে এসব ঘটনার পূর্ণ দায়িত্ব নেন। বলেন, এখন সময় এসেছে 'এগিয়ে যাওয়ার' এবং ব্রিটেনের ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি ও ইউক্রেন যুদ্ধের দিকে মনোযোগ দেওয়ার।

অনাস্থা ভোটে জয়ী হলেও বরিস জনসন আগামীতে আরও চাপে পড়বেন বলে বিশ্লেষকরা মনে করেছেন। তাদের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ব্রেক্সিট-পরবর্তী মতানৈক্য ও দেশে বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি সরকারের ওপর ধারাবাহিকভাবে চাপ সৃষ্ট করে যাচ্ছে।

তাই, বরিস 'বিজয়'ছিনিয়ে আনলেও তা ধরে রাখতে পারবেন কি না এখন সেটাই দেখার বিষয়।

 

Comments