রোহিঙ্গা গণহত্যা: ফেসবুকের বিরুদ্ধে ১৫০ বিলিয়ন পাউন্ডের মামলা

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর পেছনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য এবং সেগুলো সরিয়ে ফেলতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যর্থতাকে দায়ী করে মামলা করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে।
২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইনে হামলা চালানোর পর অনেক রোহিঙ্গা প্রাণের ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। রয়টার্স ফাইল ফটো

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর পেছনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য এবং সেগুলো সরিয়ে ফেলতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যর্থতাকে দায়ী করে মামলা করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে।

সোমবার দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে একযোগে হওয়া এ মামলায় ১৫০ বিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে ফেসবুকের কাছে।

সান ফ্রান্সিসকোর উত্তরাঞ্চলীয় জেলা আদালতে দায়ের করা একটি অভিযোগে বলা হয়, ফেসবুক 'রোহিঙ্গাদের জীবনের বিনিময়ে' দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছোট দেশটিতে তার জনপ্রিয়তা তৈরি করতে আগ্রহী ছিল।

এতে আরও বলা হয়, 'শেষ পর্যন্ত বার্মা থেকে ফেসবুকের তেমন কিছু অর্জন করতে পারেনি। কিন্তু রোহিঙ্গাদের পরিণতি এর চেয়ে আর ভয়াবহ হতে পারে না।'

সোমবার ফেসবুকের যুক্তরাজ্য কার্যালয়ে আইনজীবীদের জমা দেওয়া একটি চিঠিতে বলা হয়, তাদের ক্লায়েন্টরা পরিবারসহ মিয়ানমারের শাসক ও বেসামরিক চরমপন্থীদের চালানো গণহত্যার শিকার হয়েছেন। এ সবের মধ্যে 'সহিংসতা, হত্যা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর ঘটনা' আছে।

এতে আরও বলা হয়, মিয়ানমারে ২০১১ সাল থেকে চালু হওয়া ফেসবুক এ প্রক্রিয়াকে সহায়তা করেছে।

যুক্তরাজ্যের আইনজীবীরা আগামী বছর সে দেশে ও বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব করে উচ্চ আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করবেন।

যুক্তরাজ্যের আইনি সংস্থা ম্যাককিউ জুরি অ্যান্ড পার্টনারসের ওই চিঠিতে বলা হয়, 'ফেসবুকে ছড়িয়ে যাওয়া বিভিন্ন বক্তব্য ওই সহিংসতাকে আরও উস্কে দেয়, যা সবাই জানে এবং এ নিয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়েছে।'

২০১৮ সালে ফেসবুক স্বীকার করে যে মিয়ানমারে মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংস, বিদ্বেষপূর্ণ এবং উস্কানিমূলক বক্তব্য রোধে তারা যথাযথ ভূমিকা নেয়নি।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালিত একটি স্বাধীন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, 'যারা ঘৃণা ছড়াতে এবং ক্ষতি করতে চায় ফেসবুক তাদের মাধ্যমে যোগাযোগের একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছে এবং এতে অফলাইনে সহিংসতার জন্ম দিয়েছে।'

ফেসবুকের হুইসেলব্লোয়ার ফ্রান্সেস হাউগেন অভিযোগ করেছেন যে প্ল্যাটফর্মটি ইথিওপিয়াসহ অনেক দেশে জাতিগত সহিংসতাকে উত্সাহিত করছে এবং এটি বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট কাজ করছে না।

তিনি জানান, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মাত্র ৯ শতাংশ ইংরেজি ভাষাভাষী। অথচ ভুল তথ্য ঠেকাতে ফেসবুকের ব্যয়ের ৮৭ শতাংশ ব্যয় করা হয় ইংরেজি কন্টেন্টের ক্ষেত্রে।

ম্যাককিউর চিঠিতে বলা হয়, 'ফেসবুক দোষ স্বীকার করা সত্ত্বেও কাউকে ক্ষতিপূরণের একটি পয়সাও বা অন্য কোনো সহায়তা দেওয়া হয়নি। সহিংসতা থেকে বেঁচে যাওয়া কাউকে ক্ষতিপূরণ নিয়ে কিছু বলা হয়নি।'

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ফেসবুকের বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলোর মধ্যে আছে-ফেসবুকের অ্যালগরিদম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য ছড়াতে সাহায্য করেছে, স্থানীয় মডারেটর এবং ফ্যাক্ট চেকারদের পেছনে বিনিয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংস ও উস্কানিমূলক পোস্ট প্রত্যাহার করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং হিংসা ছড়ানো অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করেনি বা জাতিগত সহিংসতাকে উত্সাহ দেওয়া গ্রুপ ও পেজগুলো বন্ধ করেনি।

দাতব্য প্রতিষ্ঠান এমএসএফ এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর 'ক্লিয়ারেন্স অপারেশন' চলাকালে নিহত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি।

ওই ঘটনার পর বাংলাদেশের রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসে এবং কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাস করছে।

ফেসবুকের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের করা মামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ জন রোহিঙ্গা দাবিদার আছেন। আর, যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাস অ্যাকশন মামলাটি সে দেশে অবস্থানরত আনুমানিক ১০ হাজার রোহিঙ্গার পক্ষে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English

Taka to trade more freely by next month

Bangladesh will introduce a crawling peg system by next month to make the exchange rate more flexible and improve the foreign currency reserves, a key prescription from the International Monetary Fund.

4h ago