বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ম ও শতবর্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট

বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ম কী, প্রধানত এবং সর্বোপরি? কোনো প্রকার গৌরচন্দ্রিকা ছাড়া এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায় এভাবে। তার আগে পরিষ্কার হওয়া দরকার, এখানে ধর্ম বলতে মূলত কাজকেই বোঝানো হচ্ছে, যদিও কাজের চেয়ে ‘ধর্ম’ শব্দবন্ধের অর্থ আরও গভীর এবং বিস্তারও বেশি। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী? প্রধানত তিনটি। এক. পড়ানো, দুই. গবেষণা, তিন. নতুন চিন্তা উৎপাদন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ম কী, প্রধানত এবং সর্বোপরি? কোনো প্রকার গৌরচন্দ্রিকা ছাড়া এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায় এভাবে। তার আগে পরিষ্কার হওয়া দরকার, এখানে ধর্ম বলতে মূলত কাজকেই বোঝানো হচ্ছে, যদিও কাজের চেয়ে 'ধর্ম' শব্দবন্ধের অর্থ আরও গভীর এবং বিস্তারও বেশি। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী? প্রধানত তিনটি। এক. পড়ানো, দুই. গবেষণা, তিন. নতুন চিন্তা উৎপাদন।

বিশ্ববিদ্যালয় তার কাজ দিয়ে জারি রাখে নিজের ধর্ম, উপস্থাপন করে বিশিষ্টতা ও বৈশিষ্ট্যের রূপ ও রূপক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রধান তিনটি কাজ দিয়ে প্রকাশ করেছে কোন ধর্ম এবং নিজের পরিচিতি ও স্বরূপকে কোন পর্যায় ও মাত্রায় উন্নীত করেছে, শতবর্ষ উদযাপনের মহিমা ও মর্যাদার লগ্নে—সংকট তালাশ ও অবলোকনের নিমিত্তে এই লেখা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মকে বোঝার আগে একটা বিষয় স্পষ্ট করে বলা প্রয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়—বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ম পালনের চেয়েও অধিক গুরুত্ববহ ধর্ম পালন করেছে। সেটা হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ম কী না তা নিয়ে মত-দ্বিমত থাকতে পারে। কিন্তু এই অনন্য অর্জন একটা জাতির অভিযাত্রাকে যে পরিণত দিয়েছে-তা বিশ্বে তুলনারহিত। সেক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবী নামক গ্রহে একটা উদাহরণ। নিপীড়িত-নির্যাতিত-অধিকার বঞ্চিত-স্বাধীনতা হারা মানুষ, সমাজ, সংগঠন, রাষ্ট্র, জাতির জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ভূমিকা পালন ও ইতিহাস নির্মাণের শক্তি-সাহস ও সৌন্দর্য অবশ্যপাঠ্য হতে পারে তাদের-যারা নিজেরা ইতিহাসের ঐরাবতকে নিজেদের স্বপ্ন-লক্ষ্য ও আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য কাজে লাগাতে চান।

ঢাবির সেই অর্জন ও গৌরবের ইতিহাসকে শ্রদ্ধা জানিয়ে মান্যতা দিয়ে যদি এই প্রশ্ন হাজির করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়—বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ম পালন কতটুকু করেছে? তার কাজ দিয়ে ধর্ম পালনের যে গভীরতা ও বিস্তারের সক্ষমতা—সেই জায়গায় তার অবদান কতটুকু, যখন চলছে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের পূণ্যযাত্রা।

আমাদের এই ভূখণ্ডে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূরণ হওয়া গর্ব ও গৌরবের। জনপদের মানুষ মাত্রই সকলের জন্যই সবিশেষ আনন্দ ও আত্মশ্লাঘারও। কারণ এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে জাতির হাজার বছরের ইতিহাস, প্রাপ্তি- আত্মগর্বি-আত্মাভিমানী হওয়ার ইতিহাস। বলছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। স্মরণ করছি আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে। বাংলাদেশ যখন তার জন্মের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছে, তখন স্মরিত হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের শুভক্ষণ।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশত পূর্ণ হওয়ার মাহেন্দ্রমণ্ডিত বছরও এটি। স্বাধীনতার স্থপতি হওয়ার পেছনে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেখেছে দীপ্র ভূমিকা। বাঙালির বাংলা ভাষা আন্দোলন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বৈরাচার-সামরিক জান্তাবিরোধী আন্দোলনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান সূর্যের মতো। এইসব কৃতী ও কীর্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়েছে পৃথিবীর যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিন্নমাত্রার এক ধারাপাত- চেনা চৌহদ্দির বাইরের আলাপ।

কিন্তু সর্বজনীন এবং চেনা চৌহদ্দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান প্রশ্নসাপেক্ষ, প্রত্যাশার নিক্তিতে আশাবাদী হওয়ার মতো নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ধারণা এবং মূল কাজ নতুন চিন্তা উৎপাদন করা এবং প্রশ্ন করতে শেখানো, এই জায়গায় শতবর্ষী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা সেই অর্থে চোখে পড়ার মতো নয়। বহুমাত্রিক সংকট চাদরের মতোই জড়িয়ে আছে। সাধারণ অর্থে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাজ যতটা না পড়ানো, তার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো গবেষণা। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, গবেষণা এখানে যতটুকু হয়, তার বেশির ভাগই পদোন্নতির লক্ষ্যে। আবার যে গবেষণাটুকু হয়, তার মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন এবং নানারকমের অসংগতি ও চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ। ফলে, পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে যে এক ধরনের অসাধুতা ও দুর্নীতি যুক্ত রয়েছে তা সবারই জানা।

যে বিদ্যালয়ের গবেষণার মান এই পর্যায়ের সেখানে নতুন চিন্তা কতটুকু উৎপাদন হবে এবং হওয়া সম্ভব তা বলা বাহুল্য। ফলে, শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন চিন্তা উস্কে দেওয়া-নতুন চিন্তার পরিবেশ তৈরি করার ক্ষেত্রে এর অবস্থান তলানিতে। ফলে, এখানে নতুন চিন্তার চর্চা হয় না, নতুন চিন্তার ব্যাপারে কারও কোনো আগ্রহও নেই। যে বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা নতুন চিন্তার ব্যাপারে উৎসুক নয়, শিক্ষার্থীদের অবস্থা সেখানে কীরূপ ও কোন পর্যায়ের তা সহজেই অনুমেয়। মনে রাখতে হবে নতুন চিন্তার ব্যাপারে কোনো বিদ্যালয়ের আগ্রহ না থাকার অর্থ হলো বিশ্ববিদ্যালয় তার ধর্ম পালন করছে না।

পড়ানো-গবেষণা-নতুন চিন্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মের আলোকে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত, একে অপরের পরিপূরক এবং প্রাণসঞ্চারি। অর্থাৎ কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ানোর কাজটা যদি ঠিকমতো হয়, তাহলে গবেষণাটা ঠিকমতো হবে। কারণ যথাযথভাবে পড়াতে গেলেই গবেষণাটা প্রাসঙ্গিক ও অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। আর গবেষণাটা অবশ্যম্ভাবী ও যথাযথভাবে সম্পন্ন হলে সেখানে অবশ্যই নতুন চিন্তা উৎপাদন হবে। আর এসবের মূলে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কাঠামোয়- শ্রেণিকক্ষে- ছাত্র সংসদে- ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তনে- শিক্ষক লাউঞ্জে- ক্যাম্পাসে- শিক্ষার্থী নিবাসে এককথায় বিশ্ববিদ্যালয় চৌহদ্দির সর্বত্রই প্রশ্ন করার অবাধ স্বাধীনতা-সুযোগ ও চর্চার পরিবেশ রাখতে হবে। এবং এই অভ্যাসকে বিকশিত ও ডানা মেলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যতো ধরনের পৃষ্ঠপোষণ থাকার দরকার তার সমুদয় ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানের এই তরঙ্গকে ধারণ ও অর্থবহ করে তুলতে পারলে তরঙ্গের অভিঘাত লাগবে সারা দেশে। ফলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান কাঠামোর আলোয় শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয় আলোকিত হয়ে উঠবে পুরো জাতি সমগ্র দেশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি শতবর্ষে এসে এসব বিবেচনার প্রয়োজন মনে করছে?

শতবর্ষের শুভক্ষণে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন দেখা উচিত ছিল আজ থেকে একশ বছর পর অর্থাৎ দুইশ বছর উদযাপনকালে কোন অবস্থায় নিজেকে দেখতে চাই। সেই লক্ষ্যে উনারা কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন এবং বছরের পর বছর ধরে সেটা চলতেই থাকবে। পরিকল্পনা নেওয়া উচিত প্রতি এক দশক পর নিজেদেরকে কোন মাত্রায় উন্নীত করতে চায় তারা। এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার নিজস্ব আইনে এসব বিষয়কে যুক্ত করতে হবে এমনভাবে যাতে প্রশাসনিক পদের রদবদল হলেও লক্ষ্যসমূহ চলতে থাকে আপন গতিতে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষী অনুষ্ঠান কি শতবর্ষের ঐতিহ্য ও স্মারকবাহী হতে পেরেছে। এই ধরনের আয়োজন কি শতবর্ষের অর্জনকে গৌরবাবাহী করে, নাকি প্রস্ফুটনের সুযোগ দেয়? শতবর্ষ পরে গিয়ে কি এই অনুষ্ঠানের কোনো একটা আয়োজন কিংবা পর্ব সেই সময়ের প্রজন্মের কাছে আলোচনা কিংবা স্মরণ করার মতো মহার্ঘ্য কিছু হয়ে উঠবে? যদি না হয়, তাহলে এই অনুষ্ঠান শতবর্ষকে ধারণ করতে কতটুকু পেরেছে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ।

এই বিশ্ববিদ্যালয়কে যারা গৌরবমণ্ডিত করেছেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক থাকা অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়েছেন মহিমা ও মর্যাদা, তাদের কি যথার্থ স্মরণ ও সম্মান জানানো হলো এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে? যারা জীবিত রয়েছেন তাদের কি যুক্ত করা হয়েছে? এসবের উত্তর যদি না হয়, তাহলে শতবর্ষী আয়োজন শতবর্ষকে ধারণ করতে সংকীর্ণতা দেখিয়েছে।

একটা বিশ্ববিদ্যালয় নানা জনের অবদানে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। প্রতিষ্ঠাতা থেকে শুরু করে একজন অফিস সহকারীরও থাকে প্রভূত অবদান। শতবর্ষের পথ চলায় তার ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে অজস্র-অগণন মানুষের কর্মমুখরতায়-পদচারণে। বিশ্ববিদ্যালয় এদের সবাইকে কেবল স্মরণ করলেই হবে না, যারা বিশেষভাবে স্মরণ হওয়ার মতো-তাদেরকে সেভাবেই স্মরণ করতে হবে এবং তাদের অবদান অন্যকে জানানোর মতো সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। স্যুভেনিরে-সেমিনারে-দাওয়াতপত্রে যেমন যুক্ত করা সম্ভব, তেমনি সম্মান জানানোর কী কী উপায় আছে সেগুলো নিয়েও ভাবা যেত বৈকি। কিন্তু শতবর্ষের অনুষ্ঠান শতবর্ষকে ধারণ করার মতো হলো কি? উল্টো স্যুভেনিরের নামে যা হয়েছে, তা কলঙ্কিত করেছে শতবর্ষের আয়োজনকে। বর্ষপূর্তি ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর কেবল দুই বইয়ে ব্যয় হয়েছে অর্ধকোটি টাকারও বেশি, যা নিয়ে আপত্তি তুলেছে ঢাবির ফাইন্যান্স কমিটি।

শতবর্ষে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি ভেবে দেখার ফুরসত পেয়েছে তাদের প্রাপ্তি কী, বিশেষ করে স্বাধীন বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছরে? বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মে এই বিশ্ববিদ্যালয় কি আশাব্যঞ্জক জায়গায় উপনীত হতে পেরেছে, প্রতিনিয়ত কি সেই চর্চার মধ্যদিয়ে যেতে পেরেছে। বুদ্ধিবৃত্তিক জায়গায় নতুন ঢেউ রপ্তানি-কিংবা আমদানি করা সম্ভব হয়েছে কি? বিশ্ববিদ্যালয় কি বিশ্বের সঙ্গে জ্ঞান কাঠামো পুঁজি করে যোগসূত্র ঘটানোর সক্ষমতা দিতে পেরেছে তার শিক্ষার্থীদের? নাকি কেবলই চা-সিঙ্গারা-সমুচার কেত্তন শুনিয়েছে?

শতবর্ষের অর্জন ও অপ্রাপ্তি নিয়েও আয়োজন হওয়া উচিত ছিল। নিজেদেরও একটা পর্যবেক্ষণ থাকতে পারত। এবং এই অভিজ্ঞতার আলোকে নির্ধারণ করা যেত আগামী দিনের যাত্রাপথের করণীয়সমূহকে। শতবর্ষে কতজন নোবেল লরিয়েটকে কি হাজির করেছে শিক্ষার্থীদের মাঝে? শতজন বিশ্বচিন্তক কি পদচারণ করেছেন ক্যাম্পাসে। বিশ্ববিদ্যালয় তুলনামূলক সাহিত্য পড়ানো হয়। শতবর্ষী এই বিশ্ববিদ্যালয় কি বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের সঙ্গে নিজেদের তুলনা করার প্রয়োজন মনে করেছে-নিজস্ব গবেষণায়। যদি না করে থাকে তাহলে একটা বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান-বিজ্ঞানে কীভাবে বিশ্ব-ভূগোলে নেতৃত্ব দিবে। যদি নেতৃত্ব দিতে না পারে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করতে না পারে তাহলে বুঝতে হবে তার নামের সঙ্গে 'বিশ্ববিদ্যালয়' শব্দটা প্রকৃতার্থে সার্থক ও অর্থবহ হয়ে ‍উঠতে পারেনি। শতবর্ষে এসেও যদি এসব ভাবনাকে আমলে নেওয়া না হয়, বিবেচনায় রাখার প্রয়োজন বোধ না হয়, তাহলে কবে হবে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের জাগরণের যে সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল-বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ম সেই জাগরণ কতটুকু হয়েছে, সেটা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন ছিল। শতবর্ষ তো কেবল উদযাপনের বিষয় নয়, নিজেকে দেখার আয়না। নিজের ফেলা আসা সময়কে মূল্যায়নের কার্যকর সময়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার ধর্মে এই জাতির সংস্কৃতির কোন অভিমুখ নির্মাণ করল তা তালাশ ও অন্বেষণ করার এখনি সময়। এ ক্ষেত্রে কোথায় সমন্বয়ের পথ এবং সংঘাতের ডালপালা ‍উপড়ে ফেলার কী কৌশল তাও বাতলে দেওয়ার দায়-দায়িত্ব ও কর্তব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেই পালন করতে হবে। এইখানের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে কি উল্টো পথে হাঁটছে, নাকি ঠিক পথেই রয়েছে, তা নিয়ে ভাবনা এবং করণীয় খোঁজা এবং বাস্তবায়নের সময়ও এখনই।

বাংলাদেশ গত পঞ্চাশ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্ময়কর উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধন করলেও জ্ঞানে-বিজ্ঞান তার অর্জন আশাব্যঞ্জক নয়। জ্ঞানে-বিজ্ঞানে উন্নতি না হলে এই উন্নয়নকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো দুরূহ হয়ে উঠবে। বৈশ্বিক জ্ঞানকাঠামোয় আমাদের স্থানে একেবারে তলানির দিকে, এমনকি দক্ষিণ এশিয়াতেও আমরা অবস্থানগত দিকে সর্বনিম্নে। জ্ঞান কাঠামোর এই বাস্তবতা আমাদের জন্য হতাশা ও লজ্জার হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সেটা অধিকতর প্রযোজ্য। কেননা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে জ্ঞান উৎপাদন করে-বাংলাদেশ সেটাকেই ধারণ করে।

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও বাংলাদেশ যে পূর্ণাঙ্গরূপে কল্যাণমুখী রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পারিনি, তার নেপথ্যের কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ম পালন করতে পারিনি। ফলে, আমাদের বিশ্বমাঝে যে ভাবে-যে রূপে নীতি নির্ধারণ ও প্রভাবকের ভূমিকা পালন করার কথা ছিল তা না হয়ে ওঠার পেছনেও একই কারণ।

শতবর্ষের এই শুভক্ষণ কেবল উদযাপন নয়, কেবল অর্জনের অহমিকা নয়, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ম' নামক চশমায় দেখতে হবে না প্রাপ্তিসমূহকে-না হয়ে ওঠার বেদনাকে উপলব্ধি করতে হবে দরদি মন দিয়ে- সংবেদনশীল হৃদয়ে; অন্বেষণ করতে হবে এবং বেরিয়ে আসার পথ। 'বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মে' মনোযোগ দিতে হবে সর্বাগ্রে-সর্বোপরি-তবেই সার্থক হবে শতবর্ষ, মুক্তি হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের, মুক্তি হবে দেশ ও জাতির।

ড. কাজল রশীদ শাহীন: লেখক, সাংবাদিক ও গবেষক

[email protected]

Comments

The Daily Star  | English

Create right conditions for Rohingya repatriation: G7

Foreign ministers from the Group of Seven (G7) countries have stressed the need to create conditions for the voluntary, safe, dignified, and sustainable return of all Rohingya refugees and displaced persons to Myanmar

3h ago