কুষ্টিয়ায় ভয়াবহ জুলাই

করোনার তীব্র ঝুঁকিতে থাকা খুলনা বিভাগের সীমান্তবর্তী জেলা কুষ্টিয়ায় জুলাই মাসে ভয়াবহতা ছিল নজিরবিহীন। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ভয়াবহতার হিসেবে মহামারির শুরু থেকে চলতি মাস পর্যন্ত হিসেবে সবচেয়ে ভয়ংকর ছিল গত জুলাই মাসটি।
করোনা রোগীদের অনেকেই কোনো বেড পাননি। হাসপাতালের করিডোরে ঠাঁই নিয়েছেন। ছবি: স্টার

করোনার তীব্র ঝুঁকিতে থাকা খুলনা বিভাগের সীমান্তবর্তী জেলা কুষ্টিয়ায় জুলাই মাসে ভয়াবহতা ছিল নজিরবিহীন। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ভয়াবহতার হিসেবে মহামারির শুরু থেকে চলতি মাস পর্যন্ত হিসেবে সবচেয়ে ভয়ংকর ছিল গত জুলাই মাসটি।

মাস জুড়ে মৃত্যুর মিছিলের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে করোনা শনাক্তের গতি।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসের ৩১ দিনে জেলায় করোনায় আক্রান্ত ৩৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। যেখানে ২০২০ সালের ২৩ মার্চ জেলায় প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকে গত ৩০ জুন পর্যন্ত মারা যান ২১১ জন।

এই সময়ের মধ্যে শনাক্ত হয়েছে আট হাজার ৫০ জন। যেখানে কেবল গত মাসেই শনাক্ত হয়েছে ছয় হাজার ৩৬৬ জন।

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. সালেক মাসুদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জুলাই মাসটি অপ্রত্যাশিত মাত্রায় ভয়ানক ছিল। এই অভিজ্ঞতা বিনিময় করা সাধ্যের বাইরে।'

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ এখনও স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়ায় মেডিকেলের শিক্ষকরা চিকিৎসা দিয়ে থাকেন কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা করোনা ডেডিকেটেড কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে।

ডা. সালেক জানান পুরো জুলাই মাস জুড়ে এই করোনা হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১২ থেকে ১৩ জন রোগী মারা গেছেন।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. আব্দুল মোমেন বলেন, 'কষ্টের কথা হলেও পুরো জুলাই জুড়ে করোনার তীব্রতায় এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।'

তিনি আরও বলেন, 'জুলাই মাস জুড়ে হাসপাতালের ২০০ শয্যার বিপরীতে গড়ে ২৩০ থেকে ২৫০ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। সর্বোচ্চ ২৮৭ জন রোগীও ভর্তি ছিলেন এখানে।'

এত বিশাল সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার সার্বিক সামর্থ্য হাসপাতালের ছিল না বলে জানান ডা. মোমেন।

তিনি জানান, অসংখ্য রোগীকে তারা সাপোর্ট দিতে পারেননি। রোগীদের যে ধরনের চিকিৎসা দরকার ছিল তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না।

তার মতে, ভর্তিকৃত রোগীদের অধিকাংশেরই অক্সিজেন প্রয়োজন ছিল।

ডা. মোমেন বলেন, 'হাসপাতালে একটি সি-প্যাপ, একটি বি-প্যাপ, চারটি আইসিইউ ও ২৪টি এইচডিইউ বেড দিয়েই চিকিৎসা সেবা মোকাবিলা করা হয়েছে। যেখানে হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলাসহ অন্যান্য আধুনিক উপকরণ ব্যবহার করার প্রয়োজন ছিল সেখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন বা সিলিন্ডারের অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে।'

পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এসএম মুস্তানজিদ বলেন, 'খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের কয়েকটি জেলায় করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ হয়েছে ব্যাপকভাবে। ভারতীয় এই ডেল্টা ধরন খুলনা বিভাগের কয়েকটি জেলায় তীব্র আকার ধারণ করেছে। তার মধ্যে রয়েছে খুলনা, চুয়াডাঙা, যশোর ও কুষ্টিয়া। জেলাগুলোর সীমান্ত সংলগ্নতা, সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশসহ বেশ কিছু কারণে করোনার ভারতীয় ধরন জেলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।'

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি দেখেছেন, কুষ্টিয়ায় এর তে সবগুলো বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ ভ্যারিয়েন্টই আছে। এর উপসর্গের মধ্যে যেমন রয়েছে সাধারণ ঠাণ্ডা, তেমনি আছে প্রচণ্ড জ্বর, গলা ব্যাথাসহ অন্যান্য উপসর্গও।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. মুসা কবির বলেন, 'এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে মানুষের আত্মসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। জীবের মৃত্যু অনিবার্য, তাই বলে রোগব্যাধিতেই মরতে হবে সেটা তো অনিবার্য নয়। একটু সচেতন হলেই এই রোগ এড়িয়ে যাওয়া যায়।'

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh Bank dissolves National Bank board

Bangladesh Bank again dissolves National Bank board

The bank’s sponsor director Khalilur Rahman made the new chairman

1h ago