গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সুপারিশ: বেশি ভোগান্তি প্রিপেইড গ্রাহকের

গত সপ্তাহে বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি (টিইসি) গ্যাসের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করে। ছবি: প্রতিকী

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) টেকনিক্যাল কমিটি গ্যাসের দাম বাড়ানোর যে সুপারিশ করেছে, তা বাস্তবায়ন হলে অন্য যে কোনো খাতের চেয়ে প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করেন এমন আবাসিক গ্রাহকেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।

কারণ, এই গ্রাহকদের গ্যাসের দাম বাড়ানোর সুপারিশ হয়েছে সবচেয়ে বেশি, ৪৩ শতাংশ। যেখানে গড় দাম বৃদ্ধির সুপারিশ ২০ শতাংশ।

এ সুপারিশের ফলে ধীরগতির প্রিপেইড মিটার বসানোর উদ্যোগে আরও ভাটা পড়তে পারে।

৬টি গ্যাস বিতরণ প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় এক দশক আগে প্রিপেইড মিটার বসানোর কার্যক্রম শুরু হলেও মাত্র ৪ লাখ বাসাবাড়িতে প্রিপেইড মিটার বসানো হয়েছে।

গ্রাহকেরা সচেতনভাবে গ্যাস ব্যবহার করবেন, এমন উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। তাছাড়া, প্রিপেইড মিটার ব্যবহারের ফলে অপচয়ের পাশাপাশি গ্যাস চুরিও কমার কথা।

এ মুহূর্তে মোট ৪৩ লাখ বাসাবাড়িতে পাইপের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।

গত সপ্তাহে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আয়োজিত গণশুনানিতে সংস্থাটির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি (টিইসি) গ্যাসের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করে।

শুনানিতে বিইআরসির উপপরিচালক (শুল্ক) মো. কামরুজ্জামান সুপারিশ উপস্থাপনের সময় বলেন, 'যেসব বাসাবাড়িতে এখনও প্রিপেইড মিটার বসানো হয়নি, তারা যে বিল দেন, সেটা প্রিপেইড মিটারযুক্ত বাসায় গড় ব্যবহারের চেয়ে অনেক বেশি।'

বিইআরসি জানায়, একজন প্রিপেইড ব্যবহারকারী মাসে গড়ে ৩৫ থেকে ৪৫ ঘন মিটার গ্যাস ব্যবহার করেন, যার দাম আসে প্রায় ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা।

অপরদিকে, একটি মিটারবিহীন বাসায় ৭৩ থেকে ৭৫ ঘন মিটার গ্যাস ব্যবহারের গড় হিসাব করে বিল তৈরি করা হয়। যার ফলে এক চুলার গ্যাসের বিল ৯২৫ টাকা, ২ চুলার ৯৭৫ টাকা হয়।

কমিটি আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাসের দাম প্রতি ঘন মিটারে ১২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৮ টাকায় উন্নীত করার সুপারিশ করেছে।

ফলে প্রিপেইড মিটারের গ্রাহকেরা আগের মতোই ৩৫ থেকে ৪৫ ঘন মিটার ব্যবহার করলেও তাদের মাসিক ব্যয় বেড়ে ৬৩০ থেকে ৮১০ টাকার মতো হবে। 

দ্য ডেইলি স্টার কয়েকজন প্রিপেইড গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলেছে এবং প্রত্যেকেই কারিগরি কমিটির সুপারিশ নিয়ে তাদের হতাশার কথা জানিয়েছেন।

রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী তুহিন রহমান বলেন, 'আমরা প্রিপেইড মিটার বসানোর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছিলাম, কারণ এতে আমাদের গ্যাসের খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। তবে এটি যদি আমাদের জন্য বোঝায় পরিণত হয়, তাহলে ভবিষ্যতে কেউ আর এ ধরনের ভালো উদ্যোগে সরকারকে সহযোগিতা করবে না।'

ইতোমধ্যে বিইআরসি মিটারবিহীন বাসাবাড়িতে ডাবল বার্নার চুলার ট্যারিফ ৯৭৫ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৮০ টাকা এবং সিংগেল বার্নার চুলার ট্যারিফ ৯২৫ থেকে বাড়িয়ে ৯৯০ টাকায় উন্নীত করার সুপারিশ করেছে।

এ ক্ষেত্রে কমিটি বিল প্রস্তুতের সময় মাসে এক চুলায় ৫৫ ঘনমিটার, দুই চুলায় ৬০ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার হয়েছে, এমনটা ধরে বিল নেওয়ার সুপারিশ করেছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এই সুপারিশকে 'বৈষম্যমূলক' বলে অভিহিত করেন।

তিনি বলেন, 'প্রথমত, এই মুহূর্তে গ্যাসের দাম বাড়ানোর পেছনে কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। মানুষ ইতোমধ্যে মুদ্রাস্ফীতির চাপে ভুগছে।'

'বরং সরকারের উচিত অন্যান্য যে কোনো উপায়ে দাম স্থিতিশীল রাখা। তারা কর কমাতে পারে, এলএনজিতে ভর্তুকি বাড়াতে পারে, আগের বছরগুলোতে যে টাকা লাভ করেছে, সেটা ব্যবহার করতে পারে অথবা স্বল্পমেয়াদে বৈদেশিক ঋণও নিতে পারে', যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর কমিটির সুপারিশের পেছনের যুক্তিগুলো স্বচ্ছ করা উচিত।

প্রিপেইডে সবচেয়ে বেশি দাম বৃদ্ধির সুপারিশের বিষয়ে তিনি বলেন, 'যারা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি গ্যাস ব্যবহার করে, তারা এ উদ্যোগে আরও উৎসাহিত হবেন। এ বিষয়টা বিবেচনায় রাখা উচিত।'

'কীভাবে শিল্প কারখানা ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের পরিবর্তে বাসাবাড়িতে সর্বোচ্চ পরিমাণ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব আসে, সেটাও বোধগম্য নয়', যোগ করেন তিনি।

বিদ্যুৎ খাতে প্রতি ঘন মিটার গ্যাসের দাম ১ টাকা ১০ পয়সা বেড়ে ৫ টাকা ৩৪ পয়সা হবে এবং ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টে ১ টাকা ৬৫ পয়সা বেড়ে ১৫ টাকা ৫০ পয়সা হবে।

সার কারখানায় ৪ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বেড়ে ৫ টাকা ৩৪ পয়সা, চা শিল্পে ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে ১২ টাকা ৬৫ পয়সা হবে।

হোটেল ও রেস্তোরাঁর মতো বাণিজ্যিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে ২৩ টাকা থেকে ২৭ টাকা ৬০ পয়সা এবং সিএনজি ফিডের জন্য ৪৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৯ টাকা ৫০ পয়সা করার সুপারিশ করা হয়েছে।

সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে গ্যাসের দাম ৩২ শতাংশ কমে আসবে এবং মাঝারি ও বড় শিল্পে গ্যাসের দাম প্রায় ১৮ শতাংশ বাড়বে।

Comments

The Daily Star  | English

20 non-banks on BB red list

As of December last year, they disbursed Tk 25,808 crore in loans against collateral worth Tk 6,899 crore, according to the BB report

10h ago