থাইল্যান্ডে ‘থাই স্যুপ’ নেই

থাইল্যান্ডে ‘থাই স্যুপ’ নেই
ছবি: মাজেদুল নয়ন

যে দেশের নামে নামকরণ, সে দেশেই যদি সেই পণ্য কিংবা খাবার না পাওয়া যায়, তাহলে তো সেটা অবাক করার মতোই ব্যাপার!

বাংলাদেশের রসনাবিলাসীদের কাছে যেগুলো 'থাই স্যুপ' হিসেবে পরিচিত, চেষ্টা করলেও তা থাইল্যান্ডে পাওয়ার জো নেই। অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই বাস্তব।

থাইল্যান্ডের কোনো স্থানীয় রেস্তোরাঁয় গিয়ে আপনি যদি থাই স্যুপ অর্ডার করতে চান, তাহলে সেটা বোঝাতে আপনাকে বেশ ধকল পোহাতে হবে।  

তার কারণ থাইল্যান্ডে জনগণের এমন কোনো স্যুপ নেই, যা মৌলিক খাবার হিসেবে পরিবেশন করা হয়। 

তবে ব্যাংকক বা পাতায়ায় ভারতীয় এবং বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টগুলো স্বদেশী কায়দায় থাইস্যুপ তৈরি করে থাকে। যার সঙ্গে থাই খাবারের কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় না। 

শুধু দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ নয়, বরং পশ্চিমের অনেক মানুষের মধ্যেও একটি সাধারণ ধারণা রয়েছে, থাই জনগণ প্রতি বেলায় থাই স্যুপ আর নুডলস খেয়ে থাকেন। আসলে প্রতিবেলায় ভাত খায় এখানকার বেশিরভাগ মানুষ। ভাতের বিকল্প হিসেবে নুডলসও খেয়ে থাকে অনেকে। 

তবে থাইল্যান্ডের মূল খাবার কি বা সবচেয়ে প্রচলিত খাবার কি? উত্তর হচ্ছে, 'গাই মান কাই'। রসুন এবং আদা দিয়ে স্বেদ্ধ ভাতের ওপর মুরগীর মাংস সিদ্ধ বা ভেজে দেওয়া হয়। এর সঙ্গে রসুন, লেবু, ধনিয়াপাতা, শুকনো মরিচ দিয়ে বানানো সস পরিবেশ করা হয়। এই গাই মান কাই এখানে সবচেয়ে প্রচলিত খাবার। ৫০ বাথ (প্রায় ১৫০ টাকা) দিয়ে খাওয়া যায়। তবে থাইল্যান্ডে যেকোনো স্থানীয় রেস্টুরেন্টে গেলে একটি স্যুপ আপনি ফ্রি পাবেন। মূলা,  আদা এবং পেঁয়াজে দীর্ঘ সময় সেদ্ধ করে এই স্যুপ বানানো হয়। থাইরা মূল খাবারের পাশাপাশি চামচে কেটে মুখে দেয় এই গরম স্যুপ। 

থাইল্যান্ডে স্থানীয়দের কাছে স্যুপ একটি সাইড ডিশ, যেটা ভাত বা অন্য খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া হয়। চামচে কেটে শুধু স্যুপ খাওয়া হয় না। 

থাইল্যান্ডের স্থানীয় রেস্টুরেন্টগুলোতে গেলে শুধু থাই স্যুপ না বলে সবচেয়ে জনপ্রিয় স্যুপটির অর্ডার করতে হলে আপনাকে বলতে হবে, টম ইয়ামের কথা। বিদেশিদের কাছে থাই স্যুপ হিসেবে সবচেয়ে পরিচিত এই টম ইয়াম। গাই মান কাই বা পান কা পাওয়ের (ভাতের সঙ্গে শূকরের মাংস) সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। 

সোমবার সকালে চাতুচাকে আমাদের বাসার পাশের ফুড কোর্টে আমরাও অর্ডার করি টম ইয়াম। তবে টম ইয়াম যে শুধু চিংড়ি দিয়েই হয়, তা নয়। বরং চিংড়ির বদলে মুরগী, গরু অথবা শূকরের মাংস দিয়েও হতে পারে। বা সি-ফুডের সঙ্গেও মাংস মেলানো যেতে পারে। তবে আমাদের জন্য অর্ডার করা টম ইয়ামে স্কুইড এবং মুরগীর মাংস দিতে বলি। 

টম ইয়াম বা যেকোন স্যুপ বানাতে এখানে প্রধান শর্ত হচ্ছে প্রচুর হার্বের ব্যবহার। এটা কিন্তু খুবই ঝাল হবে, সঙ্গে টক স্বাদ এবং লেবুর সুগন্ধ। টম ইয়াম রান্নার মূল উপাদানগুলো হচ্ছে, শ্যালট (পেঁয়াজ প্রজাতি), লেমনগ্রাস, ফিস সস, থাই জিঞ্জার বা গ্যালানগাল (আদা প্রজাতি), চিংড়ি বা অন্য মাংস, মাশরুম, কাফির লাইম লিভস, লেবুর রস এবং থাই মরিচ। পানিতে এই হার্বগুলো সিদ্ধ করে এক পর্যায়ে মাছ বা মাংস যোগ করা হয়। স্থানীয়রা যে টম ইয়াম খায়, বেশিরভাগ সময় সেটি খুবই ঝাল। তাই আপনার ঝালের পরিমাণ অর্ডারের সময়ই বলে দিতে হবে। 

টম ইয়ামের পর সবচেয়ে পরিচিত স্যুপ হচ্ছে 'টম খা গাই'। এটাকে থাইল্যান্ডের জাতীয় খাবারও বলা হয়। যদিও বিয়ে বাড়ি বা বড় আয়োজন ছাড়া এই খাবারের উপস্থিতি চোখে পড়বে না। উত্তর থাইল্যান্ডের এই খাবারে প্রতিবেশি দেশ লাওসের খাবারের স্বাদের প্রভাব রয়েছে। এটাকে সিদ্ধ গালাংগাল চিকেন স্যুপও বলা হয়। যেটার মূল উপাদান নারিকেলের দুধ আর মুরগীর মাংস। হার্ব উপাদান হিসেবে থাকে, গালাংগাল (আদা প্রজাতি), লেমনগ্রাস, রসুন, পাকা মরিচের গোড়া, কাফির লাইম লিভস, ফিস সস এবং মাশরুম। 

এ ছাড়া থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় স্যুপগুলোর মধ্যে রয়েছে, টম ইয়াম বোরাম, টম চুয়েট, কেম অং, টাই কিয়ে, সুকি ইত্যাদি।
 
এখানে কোনো প্রকার স্যুপেই মাংস বা মাছকে একেবারে মিশিয়ে ফেলা হয় না। বরং স্যুপের মধ্যে টুকরা হিসেবেই থাকে। এবং মূল খাবারের সঙ্গে খাওয়া হয়। এ ছাড়া ব্যাবহৃত কোনো হার্বই পিশে বা মিহি গুড়া করে ব্যবহৃত হয় না। ফলে স্যুপ খাওয়া শেষ হলেও বাটিতে সেদ্ধ সব হার্ব পড়ে থাকে।

তাহলে বাংলাদেশে যে থাই স্যুপ খাই আমরা সেগুলো কি? 

আমার স্ত্রী কানলাওয়াই ওয়ায়েক্লায়হং থাই নাগরিক। তাকে নিয়ে ঢাকার বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্টে থাই খাবার খেতে গিয়েছিলাম। গুলশানের একটি রেস্টুরেন্ট ছাড়া আর কোনটিতেই পরিপূর্ণ থাই হার্ব পায়নি সে। কানলাওয়াইয়ের মতে, থাই স্যুপতো কখনো আলাদা করে পরিবেশনের বিষয় না! এটা মূল খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া হয়। যেমন বাংলাদেশিরা ডাল খায়। তবে খাওয়ার প্রক্রিয়াটা ভিন্ন। বাংলাদেশের রেস্টুরেন্টগুলোতে নিজস্ব স্বাদে এবং প্রক্রিয়ায় স্যুপ তৈরি করে 'থাই স্যুপ' হিসেবে বিক্রি করা হয় বলে মনে করেন তিনি। 

থাইল্যান্ডের স্থানীয় রেস্টুরেন্টে গেলে মেন্যুতে 'থাই স্যুপ' নামে কোনো ডিশ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর শুধু টম ইয়াম অর্ডার দিয়ে খেতে বসলেও সেটা হবে কিছুটা অস্বাভাবিক!

মাজেদুল নয়ন: থাইল্যান্ড প্রবাসী সাংবাদিক

 

Comments

The Daily Star  | English
Ahsan Khan Chowdhury on national budget 2025

Budget falls short on raising industrial competitiveness

The government must prioritise boosting the competitiveness of all industries if it wants to create more jobs, capture a bigger share of global markets, and strengthen the economy.

12h ago