যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা

পড়াশোনার পাশাপাশি রয়েছে শারীরিক-মানসিক সুস্থতার জন্য নানা আয়োজন

ছবি: নাদিয়া রহমান

পড়াশোনার পাশাপাশি স্পোর্টস এবং অন্যান্য আউটডোর অ্যাক্টিভিটিসকে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রে। শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার জন্য এসব অ্যাক্টিভিটিসগুলো আসলেই কার্যকর।
 
হর্স ব্যাক রাইডিং, রক ক্লাইম্বিং, বিভিন্ন মৌসুমে হাইকিং, ক্যানোইং, ওয়াটার রাফটিং, কেভ (গুহা) কায়াকিং; কত যে অ্যাক্টিভিটির পরিবেশ আছে এই মার্কিন মুল্লুকে! 

হাইকিংয়ে গিয়ে দেখেছি ৬০ বছরের মানুষেরাও অনায়াসে হেঁটে চলছেন। বোঝাই যায়, কতটা স্বাস্থ্য সচেতন তারা। এখানকার মানুষজন কদাচিৎ সামাজিক মাধ্যমে সময় ব্যয় করেন। ক্লাসের শুরুতে বা শেষে প্রত্যেকেই চলে যায় জিমনেশিয়াম কিংবা সুইমিং পুলে। বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা খরচে বিভিন্ন সুযোগ রেখেছে এই জিমনেশিয়ামে। এমনকি রয়েছে ট্রেইনারও। সব থেকে ভালো লাগে যে দিকটি, এখানে কেউ কারও কাজে কখনো ভ্রূক্ষেপ করে না। প্রতিটা মানুষ নিজের স্বাচ্ছন্দ্যমতো একেকটা অ্যাক্টিভিটি নিয়ে ব্যস্ত। কারও সেদিকে তাকানোর সময়ও যেন নেই। ছেলে এবং মেয়ে, প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীই যাতে নিজের সুবিধামতো অ্যাক্টিভিটিসে যুক্ত থাকতে পারে, সেভাবেই এখানকার পরিবেশ গড়ে উঠেছে। প্রায়শই ভাবি, এখানে গড় আয়ু বেশি হবার এটা অন্যতম একটি কারণ! ৭০ বছরেরও বেশি বয়স্ক মানুষ কী দিব্যি ক্যাম্পিং করতে বেড়িয়ে পড়ছে! অনেক প্রফেসরকে দেখেছি সাইকেল নিয়ে ছুটির দিনে বেড়িয়ে পড়তে। কিংবা বড়শি-ছিপ নিয়ে লেকে মাছ ধরতে যেতে! 

বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও প্রতিটি বাড়ির সামনেই রয়েছে বিভিন্ন স্পোর্টসের কোর্ট। বাস্কেটবল, টেনিস, টেবিল টেনিস, ফুটবলসহ কত রকমের যে স্পোর্টস হতে পারে, এখানে না আসলে প্রত্যক্ষভাবে দেখা হত না। 

শুধু বিনোদনের জন্যই নয়, এই স্পোর্টসের ওপর রয়েছে বিভিন্ন বৃত্তি কিংবা স্কলারশিপের সুযোগও। যখন গেম ডে (খেলার দিন) শুরু হয়, ওদিন প্রত্যেকেরই ব্যস্ততা থাকে স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখবার। আমরা যারা ভাবি, আমাদের উপমহাদেশের মানুষজনই ক্রিকেট বা অন্যান্য খেলা নিয়ে আগ্রহী, বিষয়টা কিন্তু মোটেও তেমন নয়। এখানকার মানুষেরও রয়েছে নিজেদের পছন্দের বিভিন্ন স্পোর্টস এবং এ জন্য শিক্ষার্থীদের স্কুল পর্যায় থেকেই তৈরি করা হয়। 

এখানে কোনো অ্যাক্টিভিটিকেই কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয় না। যারা স্পোর্টস ছাড়াও নিজেদের মোট সময় কাটাতে পছন্দ করেন তাদের জন্য বাগান করার সুযোগ রয়েছে। শুধু নিজেদের বাড়িই নয়, আমরা যারা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী আছি, তাদের জন্যও আলাদা প্লট লিজ নেওয়ার ব্যবস্থা আছে। প্রত্যেকের জন্য লাল ফিতা দিয়ে চিহ্নিত করা একেকটি বাগান। এখানে অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে দেখেছি নিজ হাতে বাগানের সরঞ্জাম দিয়ে মাচা তৈরি করে বাগান সাজিয়ে তুলছেন। সেখানে দেশি বিভিন্ন  জাতের সবজি, শাঁক ফলানো হচ্ছে। বাগানের সময়টুকু বসন্তের শেষ থেকে শরত পর্যন্তই। বিশাল বাগানের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেই দেখা যাবে, ক্লাস শেষে একেকজন শিক্ষার্থী নিজ হাতে বাগানের আগাছা পরিষ্কার করছেন, তাদের পরিবারের শিশুরা ঝুড়িতে সবজি তুলে রাখছে। আমরা যারা ব্যাচেলর শিক্ষার্থী আছি, তারা প্রায়ই এসব বাগানের সবজির খোরাক পেয়ে যাই। কুমড়ো ফুল থেকে শুরু করে, দেশীয় বিভিন্ন শাঁক, সিম, মরিচ দিয়ে দুতিন বেলা দেশীয় খাবারের খোরাক তো হয়ে যায়!  

মানসিক সুস্থতা এখানে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কাউন্সেলিং ছাড়াও রয়েছে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সংগঠন। এই সংগঠনগুলো প্রায়ই নানা আয়োজন করে থাকে ক্যাম্পাসে। ঈদ, দিওয়ালী, হোলি কিংবা হ্যালোইন সব ধরনের আয়োজনই করা হয়। এখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা, জিজ্ঞাসা আলোচনার পাশাপাশি ওয়ান ডিশ পার্টির আয়োজন করে থাকে। মূল উদ্দেশ্য হলো, প্রতিটি দেশ এবং সংস্কৃতির শিক্ষার্থীকেই সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া। অন্য একটি দেশের মানুষ এবং রীতিনীতিকে জানতে পারা।
 
শুরুর দিকে মনে করতাম, বিভিন্ন পার্টি, ডিনার মানেই শুধু পশ্চিমা সংস্কৃতি এবং তাদের খাবার। মোটেও তা নয়। এরা অন্য দেশের শিক্ষার্থী এবং তাদের খাবারের বাছ-বিচারের প্রতি কতটা যে সচেতন এখানে এসে বুঝেছি। যেকোনো ডিনার কিংবা পট-লাকের (ওয়ান ডিশ পার্টির মতই) আগেই একটি তালিকায় জেনে নেওয়া হয়, কারও কোনো খাবারে অনীহা আছে কি না। যারা শুধুই ভেগান, ভেজেটেরিয়ান তাদের জন্যও থাকে আলাদা ব্যবস্থা। প্রতিটি বিষয়কে এরা কতটা পেশাদারত্বের সঙ্গে ব্যবস্থাপনা করতে পারে, দেখে ভাবি আমাদের আসলে শেখার আছে অনেক কিছু!

 

নাদিয়া রহমান: প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকির মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।

Comments

The Daily Star  | English
problems faced by Bangladeshi passport holders

The sorry state of our green passports

Bangladeshi passports are ranked among the weakest in the world.

5h ago