ফিলিস্তিন নয়, মাদকের কারণে কানাডার পণ্য আমদানিতে ৩৫% শুল্ক: হোয়াইট হাউস

কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক। প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত
কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক। প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নতুন বাণিজ্য নীতি অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ বাণিজ্য অংশীদারের পণ্য আমদানিতে শুল্ক আরোপ করেছেন। এই তালিকার ওপরের দিকেই অবস্থান করছে দেশটির সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার কানাডা।

আজ শুক্রবার কানাডার পণ্য আমদানিতে আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্কের ব্যাখ্যা দিয়ে একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন এসেছে।

শীর্ষ কারণ হিসেবে উঠে এসেছে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির এক ঘোষণা। বুধবার তিনি জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত অটোয়া।

তার এই ঘোষণায় বিস্ময় প্রকাশ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। হুমকি দেন, এই নীতির কারণে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি 'কঠিন' হবে। এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা আসে।

তবে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম বিবিসি বলছে ফিলিস্তিন নয়, কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে 'মাদক' পাচার বন্ধ না হওয়াতে এই উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। হোয়াইট হাউসের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে গণমাধ্যমটি। 

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, 'আমরা আগেও এটা উল্লেখ করেছি। 'অবৈধ মাদক সঙ্কট' দূর করার ক্ষেত্রে কানাডা তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি এবং এই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার পর 'যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে কানাডা'। মূলত এসব কারণেই কানাডার পণ্য আমদানিতে উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।'

বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস জানায়, '(কানাডা) যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল ও অন্যান্য অবৈধ মাদকের অবাধ পাচার ঠেকানোর ক্ষেত্রে (যুক্তরাষ্ট্রকে) সহযোগিতা করতে ব্যর্থ হয়েছে'।

ফেন্টানিল মাদক। প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত
ফেন্টানিল মাদক। প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত

'ট্রাম্প দেশটির পণ্য আমদানির ওপর শুল্কের পরিমাণ বাড়িয়েছেন, যাতে বিদ্যমান জরুরি পরিস্থিতিকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা হয়'।  

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি জুলাইয়ের শুরুতে বলেন, 'উত্তর আমেরিকায় ফেন্টানিল পাচারে রাশ টেনে ধরার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে'।

হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে ইউএসএমসিএ (যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডা) চুক্তির আওতাধীন পণ্যগুলোর ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য হবে না।  

এর আগে, ফিলিস্তিন নিয়ে কার্নির ঘোষণার পর সামাজিক মাধ্যমে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প বলেন, এই উদ্যোগের পর কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে যাওয়া 'খুবই কঠিন' হবে।

'ওয়াও! এইমাত্র কানাডা ঘোষণা দিয়েছে, তারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়াকে সমর্থন জানাবে। যার ফলে তাদের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে যাওয়া আমাদের জন্য খুব কঠিন হয়ে পড়েছে', বলেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় কার্নি জানান, তিনি 'হতাশ'।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি। ছবি: এএফপি
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি। ছবি: এএফপি

এক বিবৃতিতে কার্নি বলেন, তার সরকার বিনিয়োগ ও নতুন নতুন রপ্তানি বাজার খুঁজে বের করার মাধ্যমে 'কানাডাকে আরও শক্তিশালী' করার দিকে নজর দেবে। 

কার্নি বলেন, 'কানাডীয়রাই আমাদের সবচেয়ে ভালো ক্রেতা হবেন। অন্য যেকোনো বিদেশি সরকারের চেয়ে আমরা আমাদের নিজেদেরকে আরও বেশি দিতে পারি। আমরা কানাডীয় কর্মীদের মাধ্যমে কানাডার সম্পদ ব্যবহার করে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাব, যা কানাডার সব নাগরিকের উপকারে আসবে।'

অন্যান্য কয়েকটি দেশে নতুন শুল্কের হার আরও এক সপ্তাহ পর প্রযোজ্য হলেও, কানাডার ক্ষেত্রে এটি আজ থেকেই চালু হচ্ছে। হোয়াইট হাউসের ফ্যাক্ট শিটে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

মেক্সিকোর পর কানাডাই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। মার্কিন পণ্যের সবচেয়ে বড় ক্রেতাও কানাডা।

গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩৪৯ দশমিক চার বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে কানাডা। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে ৪১২ দশমিক সাত বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের জরিপ ব্যুরো এই তথ্য জানিয়েছে।

 

Comments