রেড রিভার গর্জে হাইকিং

ছবি: নাদিয়া রহমান

যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসার অন্যতম ভালো দিক হলো এখানকার আউটডোর অ্যাক্টিভিটিস। যার যেটা পছন্দ, সে সেদিকেই সময় দেয়। এই স্বাধীনতায় কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। 

প্রত্যেকেই এখানে বিভিন্ন আউটডোর অ্যাক্টিভিটিসে যুক্ত। ক্লাসের যে অধ্যাপক সপ্তাহের পাঁচদিনই গবেষণায় ডুবে থাকেন, ছুটির দিনে তাকেও দেখা যাবে খুব সাধারণভাবে কায়াকিং বা হাইকিং করতে। এখানে এ বিষয়টাই বেশ ভালো লাগে- কাজের মাঝেও কীভাবে ব্যক্তিগত জীবনকে গুরুত্ব দিতে হয়। 

শরতে এখানে চমৎকার আবহাওয়া থাকে। মৃদু বাতাস আর 'ফল কালার', যাকে বলা যায় শরতের রঙে রঙিন। অক্টোবরের নাতিশীতোষ্ণ এমনই এক দিনে আমরা কয়েকজন হাইকিংয়ে গিয়েছিলাম রেড রিভার গর্জে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আন্তর্জাতিক সেন্টার সেখান থেকেই এমন আয়োজন করা হয়। 

সকাল ৭টা মানে একদম ৭টা। এই সময়ের কোনো নড়চড় নেই। আমরা প্রায় ২৫ জনের একটি মাঝারি দল নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম কেন্টাকির এই রেড রিভার গর্জে। দুই পাশে সারি সারি বার্চ, পাইন গাছ আর ওপরে উজ্জ্বল নীল আকাশের মাঝে মসৃণ রাস্তা দিয়ে আমাদের দুটো গাড়ি এগিয়ে চলল। পথে একটুও ক্লান্তি লাগেনি কারও। কোনো ট্র্যাফিক বা হর্নের শব্দও আমাদের সহ্য করতে হয়নি। 

রেড রিভার গর্জ মূলত একটি ন্যাশনাল ফরেস্ট, যার চারপাশে পুরোনো রক বা ক্লিফ রয়েছে। অর্থাৎ, বেলেমাটির প্রায় ২০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের মতো। আর গর্জ হল মূলত এই বন আর পাথরগুলোর মাঝে বয়ে চলা ঝর্ণার পানি। অনেকেই এখানে রক ক্লাইম্বিং, জিপলাইনিং করতে আসেন গ্রীষ্ম থেকে শরতের সময়টাতে। তবে সেই যাত্রায় আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল আঁকাবাঁকা সরীসৃপের মতো কখনো বেশ প্রশস্ত আবার পরক্ষণেই সংকীর্ণ পথটুকু পাড়ি দিয়ে 'আর্চ অব ট্রায়াম্ফ' এর চূড়ায় পৌঁছানো। যেখান থেকে তিন-চার মাইল পেছনে ফেলে আসা পুরো পথ, সারি সারি রক, ফুটতে থাকা নাম না জানা অসংখ্য বুনো ফুল সব একসঙ্গে দেখা যায়। ইন্ডিয়ান আর্চের সরীসৃপের মতো পাথুরে ট্রেইল পেরিয়ে যেই আর্চ অব ট্রায়াম্ফে পৌঁছলাম, পুরো শরতের লাল-কমলা-হলদে রঙ চোখে পড়ল। আমাদের ২৫ জনের যে দলটি কিছুক্ষণ আগেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল, তা আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম এই চূড়ায় উঠে। 

হ্যালোউইন উৎসবের জন্য প্রস্তুতকৃত কুমড়ো। ছবি: নাদিয়া রহমান

ফেরার পথটি ছিল তুলনামূলক সহজ। আমরা অধিকাংশই হাঁপিয়ে গিয়েছিলাম বলে আমাদের দল প্রধান ক্যারেন স্লেয়মেকার সংক্ষিপ্ত পথ বেছে নিয়েছিলেন। যখন এই আর্চের পথে যাত্রা শুরু করেছিলাম তখন সকাল ৯টার মতো বাজে, আর ফেরার সময় প্রায় পড়ন্ত বিকেল। ঝুপ করেই অন্ধকার আর কুয়াশা নেমে আসবে, তাই ঘড়ি ধরেই আমরা দল প্রধানকে অনুসরণ করলাম। নিচেই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল কাঠের তৈরি মনোরম লজ। চারপাশে ছিল আদিম বুনো একটা ঘ্রাণ। আধুনিকতার শহর, ক্যাম্পাসের কোলাহল থেকে কোথায় যেন এসে পড়েছি। 

ফের তৈরি হয়ে আমাদের সন্ধ্যা এবং রাত কেটে যায় কুমড়োকে হ্যালোউইনের জন্য প্রস্তুত করতেই। কেননা কয়দিন পরই ছিল হ্যালোউইন। আমরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে একেকটি কুমড়োকে প্রস্তুত করছিলাম। সব শেষে ছোট্ট বাতি জ্বালিয়ে কাঠের বারান্দায় সবার হট চকোলেট হাতে আড্ডা। বাইরে জাঁকিয়ে কুয়াশা পড়ছে, তার মধ্যেই আমরা জবুথুবু হয়ে উদযাপন করছিলাম আমাদের শহর থেকে, যান্ত্রিক যত হিসাব-নিকাশ থেকে দূরে থাকা বনে ঘেরা এই সময়টিকে। 

নাদিয়া রহমান: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কেন্টাকির শিক্ষার্থী।

Comments

The Daily Star  | English

Rooppur, MRT-1, Matarbari to get special focus

Three mega projects will get special focus in the upcoming development budget with the view to providing cheaper electricity, easing Dhaka dwellers’ transportation problem and enhancing international trade for Bangladesh.

13h ago