ওমানে হুন্ডি কারবারিদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান

ওমানে বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাব আয়োজিত রেমিট্যান্সবিষয়ক সেমিনারে অতিথি বক্তারা। ছবি: সংগৃহীত।

ওমানে প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও ব্যাংকাররা বলেছেন, 'বড় বড় হুন্ডি ব্যবসায়ী ছাড়াও শত শত হুন্ডি কারবারি আছে। কারবারিরাই অবৈধ হুন্ডি চ্যানেলের প্রধান নিয়ামক। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে হুন্ডি কারবারিদের আইনের আওতায় আনা জরুরি হয়ে পড়েছে।'

তারা বলেছেন, 'রাঘব-বোয়ালরা আড়ালে থাকলেও ছোট ছোট কারবারিরা দৃশ্যমান, প্রবাসী সমাজে চিহ্নিত। সাধারণ প্রবাসীরা বুঝে বা না বুঝে তাদের টোপে দেশে টাকা পাঠান। তাদের প্রতিরোধ কঠিন নয়, প্রয়োজন আন্তরিকতা ও কার্যকর উদ্যোগ।'

গত শুক্রবার ওমানের রাজধানী মাস্কাটে ন্যাশনাল ব্যাংক অব ওমানের অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাব আয়োজিত 'বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রেরণে উৎসাহ প্রদান ও হুন্ডি প্রতিরোধে করণীয়' শীর্ষক সেমিনারের এসব কথা বলেন বক্তারা।

এতে কূটনীতিক, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, পেশাজীবী, সংগঠকসহ বাংলাদেশ কমিউনিটির বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন। তারা বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রতিবন্ধকতা এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে মতামত তুলে ধরেন।

আলোচকরা বলেন, 'ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠালে বাংলাদেশ সরকারের প্রণোদনা প্রাপ্তির সুযোগ যেমন থাকে, তেমনি মাতৃভূমির উন্নয়নেও ভূমিকা রাখা সম্ভব।'

সেমিনারে উপস্থিত ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, সংগঠকসহ বাংলাদেশ কমিউনিটির বিশিষ্টজনরা। ছবি: সংগৃহীত।

এ আলোচনা সভার প্রধান অতিথি বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার ও মিশন উপপ্রধান মৌসুমী রহমান বলেন, 'করোনা মহামারির নেতিবাচক প্রভাবের পর রাশিয়া-ইউক্রেন পরিস্থিতির বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় রেমিট্যান্সের প্রাসঙ্গিকতা ও প্রয়োজনীয়তা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।'

'তাই রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে হুন্ডিসহ প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার পাশাপাশি প্রবাসীদের সচেতনতার ওপর সরকার জোর দিয়েছে,' বলেন তিনি।

মৌসুমী রহমান জানান, ওমানে হুন্ডি প্রতিরোধ ও প্রবাসীদের সচেতন করতে বাংলাদেশ দূতাবাস কাজ করছে। প্রবাসীদের কনস্যুলেট সেবায় ব্যাংকিং চ্যানেলে  পাঠানো রেমিট্যান্স স্লিপ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। হুন্ডি কারবারিদের অবৈধ ব্যবসা থেকে সরে আসার জন্য কঠোর হুশিয়ারি বার্তা দেওয়া হয়েছে।

সভার গেস্ট অব অনার ন্যাশনাল ব্যাংক ওমানের (এনবিও) রিটেইল ও ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের প্রধান তারিক আতিক বলেন, 'একজন নাগরিককে তার নিজের স্বার্থেই দেশের স্বার্থ-সাফল্য-সুনাম বিবেচনায় রাখা দরকার। মনে রাখতে হবে, কোনো অবৈধ পন্থায়ই ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য সুফল আনে না।'

তিনি জানান, ওমানের অন্যতম শীর্ষ আর্থিক প্রতিষ্ঠান এনবিও প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এজন্য সম্প্রতি বাংলা ডিজিটাল প্ল্যাটফরমও চালু করা হয়েছে।

বিশেষ অতিথি বাংলাদেশিদের প্রধান মুদ্রা বিনিময় প্রতিষ্ঠান গালফ ওভারসিজ এক্সচেঞ্জের সিইও ইফতেখার উল হাসান চৌধুরী হুন্ডির বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে প্রশ্ন করেন, 'যারা হুন্ডিতে টাকা পাঠান বা হুন্ডি ব্যবসায় জড়িত তাদেরকেও "রেমিট্যান্সযোদ্ধা" বলা যাবে কি না।'

এ বিষয়ে যুক্তি দিতে গিয়ে তিনি বলেন, 'সারা বিশ্বের প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় সোয়া ১ কোটি। সম্প্রতি লেনদেন ও পরিমাণ বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৬০ শতাংশ প্রবাসী হুন্ডি বা অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন।'

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ক্লাবের চেয়ারম্যান সিরাজুল হক প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'বৈধ চ্যানেলে প্রবাসী আয় বাড়লে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগবে। কাজেই আপনারা বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠান, সামান্য লাভের লোভে অবৈধ কোনো পন্থা অবলম্বন করবেন না।'

'হুন্ডিকে না বলুন' এই শ্লোগান নিয়ে ওমানে হুন্ডি প্রতিরোধের মাধ্যমে বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ কমিউনিটির দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে সোশ্যাল ক্লাব মাঠে থাকবে বলে জানান তিনি।
সোশ্যাল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম এন আমিনের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল ব্যাংকের হেড অব সেলস জি ভি রামাকৃষ্ণা, প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি সংগঠক আবু তাহের, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হামিদ, ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা কামাল, ইব্রাহিম চৌধুরী, মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন, আবু ইউছুপ, সোশ্যাল ক্লাবের ভাইস চেয়ারম্যান আজিমুল হক বাবুল ও রেজাউল করিম, কোষাধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল ছালাম আল্ কাদরী এবং গালফ এক্সচেঞ্জের কমপ্লায়েন্স ম্যানেজার মাসুদ রানা।

উল্লেখ্য ওমানে বৃহত্তম প্রবাসী সম্প্রদায় বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ। ওমান থেকে বৈধপথে বছরে গড়ে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা রেমিট্যান্স আসে বাংলাদেশে।

প্রতিবেদক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English
future of bangladesh after banning awami league

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

15h ago