অস্ট্রেলিয়ায় শিক্ষা ভিসার আবেদনে বাংলাদেশিদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ

অ্যাকাডেমিক প্রমাণপত্র, ইংরেজি ভাষার স্কোর এবং আর্থিক বিবৃতিসহ একটি আবেদন তৈরির জন্য মিথ্যা নথি বিক্রি করার মতো অভিবাসন এজেন্টের অভাব নেই বাংলাদেশে।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি অপেরা হাউস। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার রাস্তায় হাঁটতে গেলে একটি দৃশ্য খুব চোখে পড়ে। বিভিন্ন অফিসের সামনে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পতাকার ছবি সাঁটানো এবং সেখানে নানা ধরনের স্লোগান লেখা, যার বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করার জন্য।

এমন দৃশ্য দেখা যায় বিভিন্ন মফস্বল শহরেও।

উল্লিখিত দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুবিধার্থে স্থানীয় মাইগ্রেশন এজেন্টদের নিযুক্ত করে।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং চাকরির অনিশ্চয়তা শিক্ষার্থীদের অভিবাসনমুখী করে তুলেছে। এ সুযোগটিই নিচ্ছে এক শ্রেণির মাইগ্রেশন এজেন্টরা।

অ্যাকাডেমিক প্রমাণপত্র, ইংরেজি ভাষার স্কোর এবং আর্থিক বিবৃতিসহ একটি আবেদন তৈরির জন্য মিথ্যা নথি বিক্রি করার মতো অভিবাসন এজেন্টের অভাব নেই বাংলাদেশে।

যেসব শিক্ষার্থী অ্যাকাডেমিক শর্ত পূরণ না করে কিংবা ইংরেজি ভাষার দক্ষতা ছাড়াই বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, সঙ্গত কারণেই তাদের নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। বিশেষ করে জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয় চালানোর জন্য পড়াশোনা বাদ দিয়ে কিংবা অবহেলা করে তারা কেবল কাজ করতে থাকেন, খুঁজতে থাকেন স্থায়ীভাবে বসবাসের পথ।

পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাজের সময়সীমা নির্দিষ্ট করা থাকে। সাধারণত তারা প্রতি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজের সুযোগ পান।

গত বছরের জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক মরিসন সরকার শিক্ষার্থীদের কাজের সময়সীমা পুরোপুরি তুলে নেয়। এরপর থেকেই মূলত অস্ট্রেলিয়ায় প্রতারণামূলক স্টুডেন্ট ভিসা আবেদন বৃদ্ধি পায়।

এমন পরিস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতারণামূলক ভিসা আবেদন রোধ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ভারতের নির্দিষ্ট কয়েকটি রাজ্য থেকে স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গত বছরেও ৮০ হাজারের বেশি ভারতীয় শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়ায় অধ্যায়নরত ছিলেন।

অস্ট্রেলিয়ার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সেখানকার গণমাধ্যমগুলোকে জানিয়েছে, ভারতের কিছু আবেদনকারী প্রকৃত ছাত্র নয় এবং তাদের ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষা দপ্তর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতীয় মাইগ্রেশন এজেন্টদের জানায়, অস্থায়ীভাবে সব স্নাতক কোর্সের জন্য পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা থেকে তারা তালিকাভুক্তি স্থগিত করছে ।

এ সংক্রান্ত এক চিঠিতে লেখা হয়, 'এই অঞ্চলগুলো থেকে ভিসা প্রত্যাখ্যানের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক অগ্রগতির বিষয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে এবং আমরা প্রকৃত শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে চাই।'

গত সপ্তাহে দ্য এজ এবং দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের তদন্তে উল্লেখ করা হয়- ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অফ উলংগং, টরেন্স ইউনিভার্সিটি এবং সাউদার্ন ক্রস ইউনিভার্সিটির জন্য কাজ করা শিক্ষা এজেন্টদের ভিসা জালিয়াতির কারণে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ভারতের নির্দিষ্ট কয়েকটি রাজ্যের শিক্ষার্থীদের ওপর স্বরাষ্ট্র দপ্তর কর্তৃক আরোপিত আরও বৃহত্তর নিষেধাজ্ঞা আসছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি একজন মাইগ্রেশন এজেন্ট বলেন, 'অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ভারত, নেপালসহ ৫টি দেশে আমার অফিস আছে। অস্ট্রেলিয়ার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এজেন্ট হিসেবে আমরা প্রায় ২০ বছর ধরে কাজ করছি। বর্তমানে ভিসার ব্যাপারে যে পরিমাণ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে, তা অতীতে কখনো ঘটেনি।'

তিনি আরও বলেন, 'এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দায়ী করা উচিত নয়। এক শ্রেণির মাইগ্রেশন এজেন্টরা শিক্ষার্থী নয় এমন অনেককেও শিক্ষার্থী হিসেবে দেখায়। তারা আবেদনকারীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে দেন। এমন চলতে থাকলে ভারতের মতো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ওপরেও নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে।'

 

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Egg supplies take a hit

The Tejgaon Egg Merchants’ Association, which delivers about 15 percent of the daily supply of 1 crore eggs in the capital, stopped sales from Sunday night claiming it was to avoid harassment by the government authorities.

6h ago