আটলান্টিক সাগরের বেরলিঙ্গা দ্বীপে একদিন

বেরলিঙ্গা দ্বীপ। ছবি:সংগৃহীত

আটলান্টিক পাড়ের দেশ পর্তুগালের আছে ছোট-বড় অসংখ্য দ্বীপ। কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ দ্বীপেই স্থায়ী কোনো বাসিন্দা নেই, কিন্তু বছরের একটি নিদিষ্ট সময়ে এগুলোতে সারা বিশ্ব থেকে পর্যটকের বেশ আনাগোনা দেখা যায়। বেরলিঙ্গা এমনই একটি দ্বীপ। ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড নেচারাল রিজার্ভ তালিকার অন্তর্ভুক্ত এটি।

মনোমুগ্ধকর পাহাড়, গুহা ও সমুদ্র সৈকত সম্বলিত আটলান্টিকের বুকে মায়াবী দ্বীপ বেরলিঙ্গা অনেকগুলো ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত। যারা সাগর, পাহাড়, সৈকত ও রোমাঞ্চকর ভ্রমণ পছন্দ করেন তাদের জন্য চমৎকার এই দ্বীপ। আটলান্টিকের উত্তাল ঢেউ ডিঙিয়ে অজানা গুহা সম্বলিত কোনো নির্জন স্থানে যাওয়ার অনুভূতি নিঃসন্দেহে অন্যরকম।

পর্তুগালেন ঐতিহ্যবাহী সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠন সিআরসিআইপিটির উদ্যোগে বাংলাদেশ কমিউনিটির শিক্ষা সফরে অংশ নিয়ে দ্বীপটি দেখার সৌভাগ্য হলো কিছুদিন আগে। সঙ্গী ছিলেন নানা বয়স ও পেশার প্রায় ২৭০ জনের মতো প্রবাসী বাংলাদেশি।

লিসবন শহর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সাজানো গোছানো দ্বীপ আকৃতির ছোট শহর পেনিস। এই শহরটি মাছ ধরার জন্য বিখ্যাত। লিসবন থেকে রওনা দিয়ে সকালের নাশতার ২০ মিনিট বিরতিসহ ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটে পেনিস শহরে পৌঁছাই।

সেখানে আগে থেকে ভাড়া করা জাহাজ সকলের জন্য অপেক্ষা করছে। সারিবদ্ধভাবে ও সুশৃঙ্খল হয়ে একে একে জাহাজের আসন গ্রহণ করল সবাই। ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত একজনও জাহাজে উঠতে পারে না এবং সব যাত্রীর জন্য লাইফ জ্যাকেট সিটের নিচে রক্ষিত ছিল। তাছাড়া দুর্যোগকালীন বিপদের সব ব্যবস্থাপনা করা আছে জাহাজে।

পেনিস থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগরে মধ্যে অবস্থিত বেরলিঙ্গা দ্বীপপুঞ্জ। জাহাজের মাধ্যমে ১ ঘণ্টার পথ। আটলান্টিকের গাড় নীল রঙের পানি ও বিশাল বিশাল ঢেউ ডিঙিয়ে সামনের দিকে ছুটে চলছে জাহাজ।  এ সময় সবাই মহাসাগরের সৌন্দর্য উপভোগে ব্যস্ত সময় পার করে।

প্রায় ৪৫ একর আয়তনের দ্বীপটি খুবই অসাধারণ এবং নির্জন প্রকৃতির এক মায়াবী স্বপ্নপুরী। এখানকার স্বচ্ছ পানি যে কাউকে বিমোহিত করবে। দ্বীপের চারপাশে খাড়া পাহাড় থেকে চারদিকে শুধু নীল রঙের পানিই দেখা যায়। সেইসঙ্গে দেখা যায় ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়ানো নানা রঙের পাখি। এটি সামুদ্রিক নানা পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।

এখানে ১৭ শতাব্দীর তৈরি সাও জোয়াও ব্যাপটিস্তা দাস বেরলেঙ্গাসের দুর্গ নামে একটি দুর্গ রয়েছে। সরু একটি রাস্তা দিয়ে এই দুর্গে প্রবেশ করতে হয়। প্রাগৈতিহাসিক এই দুর্গ স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন। কথিত আছে, এই দুর্গ সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত ছিল, জলদস্যুর আক্রমণ থেকে শহরকে রক্ষা করার জন্য।

এই দুর্গ এখন পর্যটকদের জন্য রাত্রিযাপনে ভাড়া দেওয়া হয়। প্রতি রাতে ৩০ থেকে ৫০ ইউরো। এই দ্বীপে কিছু ছোট ছোট ঘর রয়েছে জেলেদের বসবাসের জন্য। এ ছাড়া ছোট আকারের সমুদ্র সৈকত এবং একটি ক্যাফে ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। ছোট ছোট বোট ভাড়া করে পুরো দ্বীপের চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

দুপুরের খাবারের পরে ৮-১০ জন করে ছোট ছোট নৌকা নিয়ে দ্বীপের চারপাশ দেখতে বেরিয়ে পড়ে সবাই। ৩০ মিনিটের নৌকা ভ্রমণে গ্রেটা দা ইনেস শিলা, বুজিওস গ্রোটো, নীল গুহা তিমি শিলা, এলিফ্যান্ট রক, কোভা দো সোনোসহ বেশ কয়েকটি সুন্দর স্পট দেখার সুযোগ হয়। প্রতিটি নৌকায় একজন গাইড এসব স্পটের নানা তথ্য তুলে ধরেন।

হাজার হাজার পর্যটকের সমাগম থাকলেও দ্বীপের পরিবেশ খুবই পরিষ্কার এবং সাজানো গোছানো। যেহেতু এটি পর্তুগালের একটি সংরক্ষিত দ্বীপ, তাই একটু পর পর বিভিন্ন সর্তকতামূলক সাইনবোর্ড আছে এবং সব পর্যটক সেসব অনুসরণ করছে। সাধারণ একটি স্থান নিয়মকানুন ও সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার ফলে অসাধারণ পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। পুরো ভ্রমণটি ছিল পরিকল্পিত ও সঠিক ব্যবস্থাপনায়।

লেখক: পর্তুগালপ্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক

 

Comments

The Daily Star  | English

Why are onion prices rising abruptly?

Onion prices have been increasing over the past weeks, as farmers and traders release fewer stocks to local markets in the hope of better returns amid the government’s suspension of imports

1h ago