জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রবাসীদের ভাবনা

‘বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোর মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে’
জাতীয় নির্বাচন ২০২৪
প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন চলছে। বিএনপিসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছে। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন হবে। নির্বাচনের গাড়ি কারো জন্য থেমে থাকবে না।

এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের মানুষ মোটা দাগে দুই ভাগে বিভক্ত। একটি দল বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনের পক্ষে, অন্য দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়।

প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ চীন ও রাশিয়া বর্তমান সরকারের পক্ষে দৃশ্যমান ভাবে কথা বললেও আমেরিকা ও ইউরোপ জনদাবির পক্ষে রয়েছে বলেও মনে হচ্ছে। তারা সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন দেখতে চায়।

আমেরিকা ইতোমধ্যে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করেছে। ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, এমনকি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে বলেও আলোচনা শোনা যাচ্ছে।

কিন্তু, এই নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। জানতে কথা বলেছি কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশির সঙ্গে। তারা প্রকাশ করেছেন তাদের নির্বাচনী ভাবনা।

ইতালির রাজধানী রোমে বসবাস করেন নুরে আলম সিদ্দিকি বাচ্চু। তিনি বলেন, 'দেশে নির্বাচনের আয়োজন চলছে। সরকার সঠিক সময়ে নির্বাচন করছে, এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে না থাকায় সরকারি দল আওয়ামী লীগের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই ভোটের মাঠে। ফলে একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। একজন প্রবাসী হিসেবে এটা আমাকে ব্যথিত করেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা বিএনপির ভুল সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির উচিৎ ছিল আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া এবং নির্বাচনে থেকে সরকারকে তাদের দাবি মানতে বাধ্য করা।'

'একতরফা নির্বাচনের ফলে দেশে রাজনৈতিক সংকট বৃদ্ধি পাবে। আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ হবে, যা সরকারকে গভীর সংকটে ফেলে দিতে পারে,' বাচ্চু যোগ করেন।

স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেন প্রবাসী সোহেল আহমদ বলেন, '২০১৪ ও ২০১৮ সালে দুটি প্রহসনমূলক নির্বাচনের পর দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল ২০২৪ সালের নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে হবে। কিন্তু বর্তমান সরকারের ব্যবস্থাপনায় যে তফসিল ঘোষণার করা হয়েছে, তাতে মানুষের ভোটাধিকার নির্বাসনেই রয়ে গেছে।'

সোহেলের মতে, 'গত ১৫ বছরে সরকার ও প্রশাসন যৌথভাবে রাজনৈতিক ভিন্নমত দমন করেছে। বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গুম, খুন, কারাদণ্ড দিয়ে দেশে একদলীয় শাসন কায়েম করেছে; আইন করে গণমাধ্যমের কণ্ঠ চেপে ধরেছে; দুর্নীতি ও প্রশাসনিক দলীয়করণ অতীতের যেকোনো সময়কে হার মানিয়েছে; রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর করা হয়েছে। সুতরাং এই সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।'

তিনি বলেন, 'দেশের প্রায় এক কোটি ৫৫ লাখ মানুষ প্রবাসে থাকেন। নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকারসহ অন্যান্য স্বার্থ নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের স্পষ্ট পরিকল্পনা অথবা কর্মসূচি চোখে পড়েনি। যা প্রবাসীদের দেশপ্রেমের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর উদাসীনতা প্রকাশ করেছে।'

'সরকার প্রশাসনকে ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন করলে দেশ গভীর সংকটে পড়বে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। তেমনটি হলে দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের দিকে যাবে, দেশের পোশাক বাণিজ্য বন্ধ হবে,' তিনি যোগ করেন।

ইউরোপের জলকন্যা ভেনিস প্রবাসী মো. আকতার উদ্দিন বলেন, 'নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক—একজন প্রবাসী হিসেবে এটাই আশা করি। তবে দুঃখের বিষয় হলো আওয়ামী লীগকে হারানোর মতো কোনো দলের অস্তিত্ব নেই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে।'

বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর নির্বাচন বর্জনকে যৌক্তিক দাবি করে আকতার উদ্দিন বলেন, 'তফসিল ঘোষণার আগে থেকে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সরকারের আচরণ এবং প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে তারা নির্বাচন বর্জন করতে বাধ্য হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'সরকার হয়তো ভাবছে, নির্বাচন করে ফেলতে পারলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কিছুদিন সমালোচনা হবে, পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। অতীতে এমন ঘটনা ঘটলেও এবার হয়তো তা হবে না। সরকারকে বেশ বেকায়দায় পড়তে হতে পারে।'

আকতারের ভাষ্য, 'নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক না হলে দেশে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়বে। অতিআত্মবিশ্বাসী আওয়ামী লীগ নিজেরাই বিরোধে জড়াবে, রাজনৈতিক শত্রুতা ও ঘৃণা ছড়াবে। দেশ বাঁচাতে হলে ভালো নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।'

ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডন প্রবাসী শেখ জালালের মতে, 'দেশ এখন ভালো অবস্থায় আছে। গত ১৫ বছরে দেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশের আরও উন্নয়ন হবে, দেশের চেহারা বদলে যাবে।'

জালাল যোগ করেন, 'এই সরকারের আমলে দ্রব্যমূল্য কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু তা বৈশ্বিক কারণে। ইংল্যান্ডেও জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে।'

ইতালির পাদোভা প্রবাসী আমিনুল হাজারী বলেন, 'বাংলাদেশে জবাবদিহিতার সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে, একজন প্রবাসী হিসেবে এমন একটি নির্বাচন আশা করি।'

হাজারী দাবি করেন, 'রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসীদের ভোটাধিকার থাকা উচিৎ এবং জাতীয় সংসদে প্রবাসীদের জন্য সংরক্ষিত আসন থাকা উচিৎ। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য যা আবশ্যক।'

'বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোর মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে,' তিনি যোগ করেন।

প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি রোম প্রবাসী ওয়াসিম রাজা খান বলেন, 'যে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবাসীদের "নবাবজাদা" বলে কটাক্ষ করেন, সে দেশের নির্বাচন নিয়ে প্রবাসীরা কী ভাবলো, কী ভাবলো না তাতে কারো কিছু যায় আসে না। দেশের রাজনীতিকরা প্রবাসীদের "রেমিট্যান্স কামলা" মনে করেন। প্রবাসীদের ভাবনার গুরুত্ব তাদের কাছে নেই।'

উত্তর-পূর্ব ইতালির অসংখ্য খালের শহর ত্রেভিজো প্রবাসী নাজনীন আক্তার বলেন, 'বাংলাদেশ আমাদের শেকড়, আমাদের অস্তিত্ব। সেখানে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক দস্যিপনা বন্ধ হোক। গণমানুষের ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের প্রক্রিয়া ফিরে আসুক, একজন প্রবাসী হিসেবে এটাই চাই।'

Comments

The Daily Star  | English

Has the war in Gaza exposed limitations of free speech in US?

Protests have rocked US university campuses over the last week as pro-Palestinian students have encamped on the grounds of Columbia, Yale, and New York University, among other prestigious educational institutions, urging universities to divest from the state of Israel amid the ongoing genocide.

39m ago