ড্রাগন-শো দিয়ে মালয়েশিয়ায় উদযাপিত হচ্ছে চীনা নববর্ষ

ড্রাগন-শো ও জমকালো উৎসবের মধ্য দিয়ে মালয়েশিয়ায় শুরু হয়েছে চীনা নববর্ষ উদযাপন। দেশটিতে বসবাসকারী প্রায় ৭৬ লাখ চীনা মেতে উঠেছেন উৎসবে। একে লুনার নিউ ইয়ার বা বসন্ত উৎসবও বলা হয়।
চীনা নববর্ষ উপলক্ষে উৎসবের আমেজে সেজে উঠেছে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন শহরের রাস্তা। ছবি: সংগৃহীত

ড্রাগন-শো ও জমকালো উৎসবের মধ্য দিয়ে মালয়েশিয়ায় শুরু হয়েছে চীনা নববর্ষ উদযাপন। দেশটিতে বসবাসকারী প্রায় ৭৬ লাখ চীনা মেতে উঠেছেন উৎসবে। একে লুনার নিউ ইয়ার বা বসন্ত উৎসবও বলা হয়।

চীনা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ার বাদশাহ সুলতান ইব্রাহিম ও রানী জরিথ সোফিয়া। তিনি বলেছেন, চীনা নববর্ষের উত্সব মালয়েশিয়ানদের মধ্যে তাদের জাতি, ধর্ম বা সংস্কৃতি নির্বিশেষে ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করবে।

শনিবার সকালে উইসমা এমসিএতে আয়োজিত চীনা নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠান যোগ দেন, প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। তাকে স্বাগত জানান, এমসিএ সভাপতি ডা. উই কা সিওং।

এ বছর ১০ ফেব্রুয়ারি চীনা নববর্ষের প্রথম দিন ধার্য করা হয়েছে। এই উৎসব চলবে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। চীন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে সাধারণ ছুটি থাকছে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এই সময় শহরের মানুষেরা ছুটে যান গ্রামে তাদের পরিবারের কাছে। মালয়েশিয়া ছাড়াও সিঙ্গাপুর, লাওস, কম্বোডিয়াতে এটি প্রধান উৎসব হিসেবে উদযাপন করা হয়।

চীনা নববর্ষ উপলক্ষে ২১ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ১৫ দিন ধরে শুক্লপক্ষে এই উৎসব চলে। নতুন পোশাক, খাবার এবং বেড়ানোর মাধ্যমে নববর্ষ উদযাপন করা হয়।

চীনা জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে বিশ্বাস করা হয়, নববর্ষ কোনো না কোনো প্রাণীর সঙ্গে সম্পর্কিত। রাশিচক্রের ১২টি প্রাণীর মধ্যে একটির সঙ্গে যুক্ত হয় প্রতিবছর। এই ১২টি প্রাণী হলো- ইঁদুর, ষাঁড়, বাঘ, খরগোশ, ড্রাগন, সাপ, ঘোড়া, ছাগল, বানর, মোরগ, কুকুর এবং শূকর।

প্রতি ১২ বছর পর পর একটি রাশির বছর আবার ফিরে আসে। নতুন বর্ষ একটি প্রাণী থেকে আরেকটিতে সওয়ার করে। ২০২৩ সালে ২২ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল খরগোশের বছর, যা চলে ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত। ২০২৪ সালের চীনা বছরকে ড্রাগনের বছর বলা হয়েছে। এর আগে ২০১২ সালটি ছিল ড্রাগনের। উৎসব শুরুর আগে নিজেদের বাড়িঘর পরিষ্কারের ধুম পড়ে যায় ঘরে ঘরে। অনেক বাড়িতে বিশেষ করে দরজা, জানালায় লাল রঙের নতুন প্রলেপ দেওয়া হয়।

লাল রঙের গৃহসজ্জা সামগ্রী, বিশেষ ঐতিহ্যবাহী প্রবাদ, উপদেশ ও ধর্মীয় বাণী বা চিহ্নসংবলিত লাল ব্যানারে ভরে ওঠে চীনাদের বাড়িঘর। নববর্ষের প্রথম দিনে ধর্মীয় আচার দিয়ে শুরু হওয়া এই উৎসব গড়ায় ১৫ দিন পর্যন্ত। শেষ হয় ১৫তম সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্বলন উৎসবের দিনে।

রাজধানী কুয়ালালামপুরসহ মালয়েশিয়ার প্রতিটি রাজ্যের শপিংমলগুলোতে সপ্তাহব্যাপী উৎসব এবং ড্রাগন-শো'র আয়োজন করা হয়েছে। চায়না টাউন এলাকায় উৎসবের মাত্রা যেন আরেকটু বেশি।

পুরনো বছরের সব ব্যর্থতাকে যেমন খরগোশ নিয়ে যাবে, তেমনি নতুন বছরে সাফল্য আর সৌভাগ্যকে বয়ে আনবে ড্রাগন, এমনটাই বিশ্বাস চীনাদের। সব মল, পার্কসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে প্রতিদিন বিকেল আর সন্ধ্যায় চলে ড্রাগনের নাচ আর নানান প্রদর্শনী।

হাত জোড় করে মাথা নুয়ে একজন আরেকজনকে বলেন, 'কং সি ফা চাই'। একজন আরেকজনের সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করেন। চীনা নববর্ষ হলেও মালয়, ভারতীয় থাই, লাও, জাপানিজ, কোরিয়ান, জাভানিজসহ সব জাতিগোষ্ঠীর কাছেই বড় উৎসব এই নববর্ষ। এই উৎসবে পরিবারের সবার জন্য নতুন জামাকাপড় কেনা হয়। বাড়িতে রান্না হয় সুস্বাদু খাবার আর ছোটদের দেওয়া হয় আশীর্বাদসহ অর্থ, যাকে বলা হয় 'আমপায়'। এটা বাংলাদেশির 'সালামি'র রীতির মতোই।

অন্যান্য দেশে শুধু চীনারা এ উৎসব পালন করলেও মালয়েশিয়ায় প্রায় সব জাতির লোকজন অপেক্ষায় থাকেন চীনা নববর্ষের। নববর্ষ মানেই লম্বা ছুটি আর মোটা অংকের বোনাস। মালয়েশিয়ায় বেশির ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক চীনারা হওয়ায় সরকারিভাবে নববর্ষের ছুটি দুদিন হলেও বেশির ভাগ চীনা তাদের প্রতিষ্ঠান এক থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত বন্ধ রাখেন। অনেক প্রতিষ্ঠান বেতনের সমান বোনাসও দেয়।

নববর্ষকে কেন্দ্র করেই মালয়েশিয়ায় আমদানি করা হয় লাখ লাখ টন কমলা। চীনারা তাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের নানা জাতের কমলা উপহার হিসেবে দেন।

পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের অর্থনীতিতে রয়েছে চীনা প্রভাব। তাই, এই উৎসবও পালন করা হয় ঘটা করে। সবগুলো দেশের রীতি, সংস্কৃতিতে দারুন প্রভাব বিস্তার করেছে এই নববর্ষ। মানুষ তাদের বাসস্থান, কর্মস্থলগুলোকে সাজিয়েছে লাল লণ্ঠনে বা ড্রাগনের সাজে। রেস্টুরেন্ট ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে কর্মীদের পরনে উৎসবের লাল পোশাক। চারদিকেই চলছে উৎসবের আমেজ। চীনাদের পাশাপাশি সবাই এই উৎসবে আনন্দময় সময় কাটান। মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরাও বাদ যান না চীনা নববর্ষের আনন্দ থেকে।

Comments