অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমে শেখ হাসিনাকে প্রত্যাবাসন নিয়ে আশঙ্কা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং পালিয়ে ভারত চলে যাওয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

'শেখ হাসিনাকে প্রত্যাবাসনের যেকোনো প্রচেষ্টা ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ও বিরোধীদল কংগ্রেসের প্রতিরোধের মুখোমুখি হবে। ভারত চাইবে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে পুনর্বাসিত হোক, পুনর্গঠিত হোক এবং মূলধারার রাজনীতিতে ফিরে আসুক।'

শুক্রবার 'অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনে (এবিসি)' বাংলাদেশের পতিত সরকার প্রধান শেখ হাসিনাকে দেশে প্রত্যাবাসন নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

এবিসি অস্ট্রেলিয়ার জনপ্রিয় গণমাধ্যম। শেখ হাসিনার প্রত্যাবাসন বিষয়ক প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন ম্যাক্স ওয়াল্টন ও নাজমা সামবুল।

ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের সম্পর্ক, পতনের প্রেক্ষাপট, গণহত্যা, পলায়ন, বিচার ও তাকে দেশে প্রত্যাবর্তন নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

এতে বলা হয়েছে, 'কয়েক দশক ধরে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এ বছরের শুরুতেই সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয়। সরকারি চাকরিতে কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ থেকে শুরু হয়ে শেষ পর্যন্ত তা বাংলাদেশের স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার দেশব্যাপী আন্দোলনে পরিণত হয়।'

'এই আন্দোলনকে বিশ্বের প্রথম "জেনারেশন জেড বিপ্লব" হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আন্দোলনের ফলে তিনি (হাসিনা) হেলিকপ্টারযোগে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান এবং দিল্লিতে নির্বাসিত হন।'

'"আয়রন লেডি" শেখ হাসিনার কট্টর শাসনের অধীনে ভারত দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশকে অন্যান্য দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশীদের তুলনায় অনেক বেশি স্থিতিশীল অংশীদার হিসেবে মনে করেছে।'

'আগস্টে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামল আকস্মিকভাবে শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশে নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে শেখ হাসিনার বিরোধ ছিল দীর্ঘদিনের। ভারতে নির্বাসিত শেখ হাসিনা দাবি করেছেন, ড. ইউনূস সংখ্যালঘুদের "গণহত্যা"র জন্য দায়ী। মুহাম্মদ ইউনুস ভারতীয় একটি সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, হিন্দুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার দাবিগুলো অতিরঞ্জিত।'

এবিসির এই প্রতিবেদনে বেশ কয়েকজন রাষ্ট্র ও রাজনীতি বিশেষজ্ঞের  সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।

সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের রিসার্চ ফেলো অমিত রঞ্জন বলেছেন, 'বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সবসময়ই এই অনুভূতি থাকে যে, ভারত বাংলাদেশের বিষয়ে খুব বেশি হস্তক্ষেপ করে। তাদের এই বিশ্বাসও রয়েছে, হাসিনার স্বৈরাচারী শাসন ভারতীয় স্টাবলিশমেন্ট দ্বারা সমর্থিত ছিল।'

বাংলাদেশ পিস অবজারভেটরির গবেষক খন্দকার তাহমিদ রেজওয়ান বলেন, 'বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক শুধুমাত্র হাসিনার আওয়ামী শাসনামলের সঙ্গে উষ্ণ ছিল, সাধারণ মানুষের সঙ্গে নয়।'

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন ২০২৫ সালের শেষ দিকে বা ২০২৬ সালের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে ভারতের কাছে ফেরত চাইবে বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়, ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের ভবিষ্যত নির্ভর করছে, ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে হস্তান্তর করতে প্রস্তুত কি না, তার ওপর।

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Cyber Security Ordinance to be announced this week: law adviser

Nine sections have been scrapped from the Cyber Security Act 2023, he says

25m ago