‘পাকুড়তলাটাকে সবাই বটমূল বলতেই ভালোবাসেন’

Shakil
ছায়ানট-এর সহ-সভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল

আগামী পহেলা বৈশাখে রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের ৫০ বছর পূর্তি হবে। কৃষিকাজের সুবিধার্থে মোগল সম্রাট আকবর ১৫৮৪ সালে বাংলা সন প্রবর্তন করার পর থেকে এদেশের কৃষকরা চৈত্রমাসের শেষদিন পর্যন্ত ভূস্বামীদের খাজনা পরিশোধ করতেন। এর পরদিন অর্থাৎ নতুন বছরে ভূস্বামীরা খাজনাদাতাদের মিষ্টিমুখ করাতেন। আবহমান বাংলার চিরায়ত ‘বর্ষবরণ’-কে নাগরিক জীবনে গানের মাধ্যমে উদযাপন করার রীতি সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। এ বিষয়ে কথা হয় সংগঠনটির সহ-সভাপতি খায়রুল আনাম শাকিলের সঙ্গে।

 

দ্য ডেইলি স্টার অনলাইন: ছায়ানটের বর্ষবরণের ইতিহাসটি একটু জানাবেন কি?

খায়রুল আনাম শাকিল: ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট ঘরোয়া পরিবেশে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান করলেও পরে একসময় সিদ্ধান্ত নেয় উন্মুক্ত পরিবেশে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করার। সেই ভাবনা থেকে ১৯৬৭ সালে রমনায় প্রথম বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বিশিষ্ট প্রকৃতিবিজ্ঞানী ও আলোকচিত্রী ড. নওয়াজেশ আহমেদ রমনায় ছায়াঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশের কথা বলেন এবং একটি বড় গাছের নিচে জায়গা ঠিক করেন। সেটি ছিল পাকুড় গাছ; তবে কেউ তা ‘বট’ বলেছিলেন। এরপর থেকে তা ‘বটমূল’ হিসেবেই পরিচিতি পায়। আর এই পাকুড়তলাটাকে সবাই বটমূল বলতেই ভালোবাসেন।

এরপর স্বাধিকার আন্দোলনের সময় আমরা বুঝতে পারি পহেলা বৈশাখ আমাদের জাতীয় জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এই উৎসবটি আমাদের উজ্জীবিত করবে। আমরা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই দিনে আনন্দ করবো। ধীরে ধীরে এই উৎসবটি আমাদের জাতীয় জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে।

দ্য ডেইলি স্টার অনলাইন: রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন কি থাকছে?

খায়রুল আনাম শাকিল: এই বর্ষপূর্তিতে আমরা ছায়ানট ভবনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। এ উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নানান আঙ্গিকের গান পরিবেশন করা হয়। এসব গান সচারচর ‘বটমূলে’ গাওয়া হয় না।

এছাড়াও, আলোকচিত্রের মাধ্যমে বটমূলে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ৫০ বছরের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। প্রদর্শনীটিও ছায়ানট ভবনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

আগামী ৭ এপ্রিল বিকেলে স্মরণিকা ও বর্ষপঞ্জি প্রকাশ করা হবে এবং একটি সেমিনারের আয়োজন করা হবে। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করবেন মফিদুল হক। এরপর, ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় ২০০১ সালের বোমা হামলায় নিহত নিরীহ দর্শক-শ্রোতাদের স্মরণ করে কথা-গান ও প্রদীপ জ্বালানো হবে।

দ্য ডেইলি স্টার অনলাইন: এবারের অনুষ্ঠানে ১৯৬৭ সালের শিল্পীরা গান করবেন কি?

খায়রুল আনাম শাকিল: আমরা চেষ্টা করছি পুরাতন শিল্পীদের দিয়ে গানের আয়োজন করার। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাঁদের কেউ কেউ পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে গান গাবেন বলে আশা করছি।

দ্য ডেইলি স্টার অনলাইন: সে সময় কারা কারা গান করেছিলেন?

খায়রুল আনাম শাকিল: সেই সময় রমনার বটমূলে অনেকেই গান করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে এখন যাঁদের নাম মনে পড়ছে তাঁরা হলেন ফাহমিদা খাতুন, ইফফাত আরা দেওয়ান, আহসান মোর্শেদ, সেলিনা মালেক চৌধুরী, শাহীন সামাদ, ডালিয়া নওশীন প্রমুখ।

দ্য ডেইলি স্টার অনলাইন: আপনি প্রথম কত সালে রমনার বটমূলে গান করেছেন?

খায়রুল আনাম শাকিল: আমি ছায়ানটে ভর্তি হই ১৯৬৯ সালে। তখন ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিলাম। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ভালোভাবে গান গাওয়া শুরু করি। ১৯৭৪ সালে ছায়ানটের পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে সম্মেলক গানের জন্য নির্বাচিত করা হয়। তখন লোক সমাগম মোটামুটি ছিল। তবে কোন অর্থেই এখনকার মতো নয়। আর কিছু লোক ফুটপাতে ছোট আকারে হস্তশিল্পের জিনিসপত্র বিক্রি করতেন।

বটমূলে গান গাওয়ার জন্য নির্বাচিতদের দলে আমি আছি এটা ভেবেই তো মহা আনন্দিত ছিলাম। সামনের সারিতে আমার আত্মীয়স্বজনরা বসেছিলেন; আমার গান শুনলেন। বন্ধুরা বললো, ‘তোমাকে দেখেছি’ – এতে আরও আনন্দিত হলাম।

এরপর ১৯৮৬ সালে বটমূলে প্রথম একক গান পরিবেশন করি।

দ্য ডেইলি স্টার অনলাইন: রমনার বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠানটিকে ইউনেস্কো ঐতিহ্যের তালিকায় নিয়ে আসার ব্যাপারে কোন কিছু ভাবছেন কি?

খায়রুল আনাম শাকিল: বিষয়টি নিয়ে একবার ভাবা হয়েছিল, তবে বেশি দূর অগ্রসর হওয়া যায়নি। তবে এখন এর ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আবারও বিষয়টি নিয়ে আমরা ভাববো।

দ্য ডেইলি স্টার অনলাইন: আপনাকে ধন্যবাদ।

খায়রুল আনাম শাকিল: ধন্যবাদ।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

40m ago