নেপালে ট্রেকিংয়ের প্রস্তুতি

নেপালে সহজ ও ছোটখাটো ট্রেক থেকে শুরু করে কয়েক সপ্তাহব্যাপী পর্বত আরোহণের সুযোগ রয়েছে। যার মধ্যে এভারেস্ট বেস ক্যাম্প ট্রেক, অন্নপূর্ণা সার্কিট ট্রেক এবং ল্যাংটাং ট্রেক বেশ জনপ্রিয়। তবে কোন ট্রেক আপনার জন্য উপযুক্ত সেটি নির্ভর করবে শারীরিক সক্ষমতা, সময় এবং দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়ার মন-মানসিকতার ওপর।  
নেপালে ট্রেকিংয়ের প্রস্তুতি
ছবি: কে তানজীল জামান

নেপাল ট্রেকিং হতে পারে আপনার জীবনের স্মরণীয় অভিজ্ঞতাগুলোর একটি; যেখানে শ্বাসরুদ্ধকর পর্বত আরোহণের সময় ভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি মিলবে বিশ্বের সবচেয়ে মনোহর প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকনের সুযোগ। 

তাই আপনার নেপাল ট্রেকিংয়ের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিতে সাহায্য করতে আজকের আয়োজনে থাকছে কিছু দিক-নির্দেশনা। 

সঠিক ট্রেক নির্বাচন

নেপালে সহজ ও ছোটখাটো ট্রেক থেকে শুরু করে কয়েক সপ্তাহব্যাপী পর্বত আরোহণের সুযোগ রয়েছে। যার মধ্যে এভারেস্ট বেস ক্যাম্প ট্রেক, অন্নপূর্ণা সার্কিট ট্রেক এবং ল্যাংটাং ট্রেক বেশ জনপ্রিয়। তবে কোন ট্রেক আপনার জন্য উপযুক্ত সেটি নির্ভর করবে শারীরিক সক্ষমতা, সময় এবং দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়ার মন-মানসিকতার ওপর।  

প্রয়োজনীয় অনুমতির ব্যবস্থা 

নেপালে কয়েকটি ট্রেকের জন্য বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন পড়বে। উদাহরণ হিসেবে, এভারেস্ট বেস ক্যাম্প ট্রেকের জন্য টিআইএমএস (ট্রেকারদের তথ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেম) এবং অন্নপূর্ণা সার্কিট ট্রেকের জন্য এসিএপি (অন্নপূর্ণা সংরক্ষিত এলাকা অনুমতি) ইত্যাদি অনুমতি নিতে হয়। আর এসব অনুমতির জন্য ভ্রমণকারীকে আগে কাঠমান্ডু বা পোখারায় যেতে হবে।

ভ্রমণ প্রস্তুতি

নেপালের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কাঠমান্ডুতে অবস্থিত, যেখানে আন্তঃদেশীয় ফ্লাইটের জন্য অসংখ্য অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরও পাওয়া যাবে। সেখানে পৌঁছানোর পর পথ চিনে এগিয়ে যাওয়া, জিনিসপত্র বহন করা  এবং স্থানীয় বিভিন্ন বিষয়ে ধারণা পেতে একজন গাইড বা পোর্টারের সাহায্য নেওয়ার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।

শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি

নেপাল ট্রেকিং শরীরের ওপর চাপ ফেলতে পারে, তাই যাওয়ার আগে থেকে শারীরিক সুস্থতার দিকে নজর দিতে হবে। এ জন্য ভ্রমণের কয়েক মাস আগে থেকে কার্ডিও এবং শক্তিক্ষমতা বাড়ানোর জন্য একটি প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে যোগ দেওয়া বেশ বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এ ছাড়া উঁচু উচ্চতায় ট্রেকিং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে।

প্যাকিং 

বৈরী আবহাওয়ায় নিজেকে মানিয়ে নিতে হালকা, টেকসই পোশাক এবং প্রয়োজনীয় গিয়ার নিতে ভুলে গেলে চলবে না। সঙ্গে নিতে হবে গরম পোশাক, একটি করে ওয়াটারপ্রুফ জ্যাকেট এবং প্যান্ট, ভালো মানের এক জোড়া হাইকিং বুট এবং একটি আরামদায়ক ব্যাকপ্যাক। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত জিনিসপত্র যেমন প্রসাধন সামগ্রী, প্রাথমিক চিকিৎসা কিট এবং পর্যাপ্ত নগদ অর্থ নিয়ে রওনা করতে হবে। 

উচ্চতায় অস্বস্তি সম্পর্কে সচেতনতা
 
দ্রুত পর্বত আরোহণের সময় কেউ কেউ উঁচু উচ্চতার কারণে অসুস্থ হয়ে যায়। মাথাব্যথা, ক্লান্তি এবং বমি বমি ভাব দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পথের মাঝে কিছুক্ষণ পর পর বিশ্রাম এবং পানি পান করতে হবে। 

স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা 

নেপাল বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর আবাসস্থল। আর তাদের প্রত্যেকের রয়েছে নিজস্ব রীতিনীতি এবং ঐতিহ্য। ট্রেকিংয়ে যাওয়ার পর সেখানকার স্থানীয় অভ্যাস এবং রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত এবং সেখানকার মানুষদের বা পবিত্র স্থানের ছবি তোলার আগে অনুমতি নেওয়া আবশ্যক।

জরুরি অবস্থার জন্য প্রস্তুতি 

নেপালের রুক্ষ ভূখণ্ড এবং অপ্রত্যাশিত আবহাওয়া ট্রেকিংকে চ্যালেঞ্জিং করে তুলতে পারে, তাই জরুরি অবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ভ্রমণ বিমা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা কিট নেওয়া হয়েছে কি না আগে থেকেই নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া নিকটতম চিকিৎসা সুবিধা সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। 

এ বিষয়গুলো ঠিকঠাক অনুসরণ করতে পারলে আপনার নেপালযাত্রা হবে নিরাপদ এবং আনন্দদায়ক। মনোমুগ্ধকর দেশ নেপালের সৌন্দর্য এবং সংস্কৃতির স্বাদ নিতে হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে বের হওয়াই ভালো। তবে এ ক্ষেত্রে ভ্রমণপথে সেখানকার পরিবেশের ওপর আপনি কী প্রভাব ফেলছেন সে সম্পর্কে সর্বদা সচেতন থাকার চেষ্টা করবেন।

ট্রেকিং হোক আনন্দময়!

 

অনুবাদ করেছেন আসরিফা সুলতানা রিয়া 

Comments