দাম বাড়তে-কমতে পারে যেসব পণ্যের

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। আজ সোমবার বিকেলে অর্থ মন্ত্রণালয়ে তিনি এই বাজেট পেশ করেন

বাজেট বক্তৃতার শুরুতে অর্থ উপদেষ্টা একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণ করেন। একইসঙ্গে তিনি স্মরণ করেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অকুতোভয় শহীদদের। তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন তিনি। বলেন, '২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের এক ক্রান্তিলগ্নে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। আমাদের ওপর বর্তায় বিগত সরকারের রেখে যাওয়া প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার এবং নৈরাজ্য দূর করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার কঠিন কাজটি।

'আমি স্বস্তি এবং আনন্দের সাথে জানাতে চাই, মাত্র ১০ মাসেরও কম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে সে লক্ষ্য পূরণে অনেকদূর এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থান এর পর যে আশায় আমরা বুক বেঁধেছিলাম তা খুব শীঘ্রই আমরা পূরণ করতে সক্ষম হবো ইনশাল্লাহ।'

বাজেটে নিম্নোক্ত পণ্যের দাম বাড়ানো ও কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

দাম বাড়বে

সিগারেট, অনলাইন কেনাকাটা, রড, প্রসাধনী সামগ্রী, সাবান-শ্যাম্পু, শিশুদের খেলনা, দেশে তৈরি মোবাইল ফোন, গৃহস্থালি প্লাস্টিক সামগ্রী, এলপিজি, দেশে তৈরি এলপিজি সিলিন্ডার, ফ্ল্যাট, বলপয়েন্ট কলম, হেলিকপ্টার সার্ভিস, দেশে তৈরি ওয়াশিং মেশিন, দেশে তৈরি মাইক্রো ওভেন, দেশে তৈরি ইলেকট্রিক ওভেন, দেশে তৈরি ব্লেন্ডার-জুসার-মিক্সার-গ্রাইন্ডার, দেশে তৈরি ইলেকট্রিক কেটলি-ইস্ত্রি, দেশে তৈরি রাইস কুকার-প্রেসার কুকার, ব্লেড, দেশে তৈরি লিফট, দেশে তৈরি ফোর স্ট্রোক থ্রি-হুইলার যান, ওটিটি কনটেন্ট, বাণিজ্যিক ভবন (কমার্শিয়াল স্পেস), সেলফ-কপি পেপার-ডুপ্লেক্স বোর্ড-কোটেড পেপার, সুতা, ম্যানমেড ফাইবার, স্ক্রু-নাট-বোল্ট, সার্জিক্যাল কিটস, শিপ স্ক্র্যাপস গুডস, সিমেন্ট শিট, ক্রেডিট রেটিং সার্ভিস, থ্রি-হুইলার ব্যাটারি, সেটআপ বক্স ইত্যাদি।

দাম কমবে

চিনি, স্যানিটারি ন্যাপকিন, আইসক্রিম, ভূমি নিবন্ধন ফি, নিউজপ্রিন্ট পেপার, ক্যানসারের ওষুধ, ইনসুলিন, এলএনজি, টায়ার, দেশি তৈরি ই-বাইক, মাটির পাত্র-পেপার প্লেটস-অন্যান্য, কম্পিউটারের দেশে তৈরি বড় মনিটর, ‍উড়োজাহাজ ভাড়া, লিথিয়াম-গ্রিফিন ব্যাটারি ইত্যাদি।

জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে ভিন্ন আঙ্গিকে। অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তৃতা রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হয়।

১ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এই বাজেট প্রস্তাব পাস হবে আগামী ৩০ জুন।

সর্বশেষ ২০০৮ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সংসদের বাইরে বাজেট দেওয়া হয়েছিল।

ওই বছরের ৯ জুন তখনকার অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম ২০০৮-০৯ অর্থবছরের জন্য ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। সেদিনও ছিল সোমবার।

এবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে নিজের প্রথম বাজেট দিতে যাচ্ছেন সালেহউদ্দিন আহমেদ; যিনি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সামরিক থেকে গণতান্ত্রিক বিভিন্ন সরকারে ১৫ জন অর্থমন্ত্রী বা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি (অর্থ উপদেষ্টা অথবা সামরিক আইন প্রশাসকসহ) ৫৩টি বাজেট উপস্থাপন করেছেন।

তিন মেয়াদে সর্বোচ্চ ১২টি করে বাজেট দেওয়ার রেকর্ড আছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) সরকারের দুই প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান এবং আবুল মাল আবদুল মুহিতের।

আওয়ামী লীগের গত চার মেয়াদে সাড়ে ১৫ বছরে আবুল মাল আবদুল মুহিত টানা দশবার, আ হ ম মুস্তফা কামাল পাঁচবার এবং আবুল হাসান মাহমুদ আলী একবার জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেন।

নির্বাচিত সরকারের আমলের এসব বাজেট জাতীয় সংসদেই উপস্থাপন করা হয়। পরে মাসজুড়ে সেই প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা হত সংসদে। জুন মাসের শেষ দিকে সংসদে পাস হত নতুন অর্থবছরের বাজেট।

এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বাজেট উপস্থাপন করার পর ৩০ জুন তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর করা হবে।

তবে অতীতের রেওয়াজ মেনে বাজেট ঘোষণার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে বাজেট নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এছাড়া পুরো জুন মাসজুড়ে অংশীজনদের মতামত নেওয়ার কথাও তিনি বলেছেন।

সর্বশেষ ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়ে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। জুলাইয়ে নতুন অর্থবছর শুরুর পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।

স্বাধীনতার পর এবার প্রথমবার বাজেটের আকার বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে কমিয়ে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার আশপাশে (জিডিপির ১২ দশমিক ৬৫ শতাংশ) ধরা হচ্ছে। বিদায়ী অর্থবছরের চেয়ে শূন্য দশমিক ৮৮ শতাংশ কমছে আকার; টাকার অংকে যা সাত হাজার কোটির মতো।

Comments

The Daily Star  | English

Trump brokered ceasefire agreement in contact with Israel, Iran: White House official

Meanwhile, fresh series of explosions were reported in the Iranian capital Tehran, as per AFP journalist

1d ago