এবার আরও বড় পরিসরে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা, প্রস্তুতি শেষ

পূর্বাচলে ঢাকা আল্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার প্রধান ফটক। ছবি: সৌরভ হোসেন সিয়াম/স্টার

নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৭তম আসরের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।

আগামী রোববার সশরীরে এই মেলা উদ্বোধনের কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

আয়োজকরা বলছেন, পূর্বাচলে দ্বিতীয় বারের মতো অনুষ্ঠেয় এ মেলায় এবার স্টলের সংখ্যা বেড়েছে শতাধিক। আয়োজন ও সাজসজ্জার ক্ষেত্রেও এসেছে বড় পরিবর্তন। গতবার যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে নানা অভিযোগ ছিল ব্যবসায়ীদের। এবার সেই দুর্ভোগ কমাতে দেওয়া হয়েছে বিশেষ নজর।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন সেতু পেরিয়ে এশিয়ান হাইওয়ে (ঢাকা বাইপাস) ধরে কিছুটা এগুলেই পূর্বাচল উপশহরের ৪ নম্বর সেক্টর। সেখানে গড়ে উঠেছে ২৮ একর আয়তনের বিবিসিএফইসি।

আজ শুক্রবার দুপুরে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, সেখানে চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতিতে শেষ নজর দেওয়ার পর্ব। বিবিসিএফইসি'র ১৪ হাজার ৩৬৬ বর্গমিটার আয়তনের ২টি হল ছাড়াও এর সামনে-পেছনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন ও স্টলগুলোতে অভ্যন্তরীণ সজ্জা ও পণ্য নামানোর কাজ করছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। মেলার প্রবেশদ্বারটি নির্মিত হয়েছে মেট্রোরেলের আদলে।

মেলার প্রবেশমুখের ডানদিকে গাজী গ্রুপের প্যাভিলিয়নে কাজ করছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। উজ্জ্বল হোসেন নামে এক শ্রমিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ১ মাস যাবৎ ২০ জন শ্রমিক সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত কাজ করছেন। সকল কাজ প্রায় শেষ। রাতের মধ্যে পণ্য সাজানোর কাজও শেষ হয়ে যাবে।'

ছবি: সংগৃহীত

কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির ডেপুটি ম্যানেজার এনায়েত উল্লাহ সরকারের সাথে। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'গতবারের তুলনায় এবার মেলা ভালো হবে বলে আশা করি। এবার রাস্তাঘাটও ভালো হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকলে তো ক্রেতা বা দর্শনার্থীরা উৎসাহ পান না।'

নারী উদ্যোক্তা আফসানা হকের সাথে কথা হয় জয়িতা ফাউন্ডেশনের প্যাভিলিয়নে। বরিশাল থেকে এসেছেন তিনি। আফসানা জানান, দেশের বিভিন্ন জেলার ২৬ জন নারী উদ্যোক্তা জয়িতা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এই মেলায় অংশ নিচ্ছেন। প্রতিবারই তারা বাণিজ্য মেলায় অংশ নেন। তবে অন্যান্যবার মেলা শুরুর আগেরদিন আসতেন। তবে এবার আয়োজকদের পক্ষ থেকে ২দিন আগে স্টলে পণ্য নিয়ে আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, 'প্যাভিলিয়নের কাজ আগেই শেষ হয়েছে। এখন বিভিন্ন জেলা থেকে আগত উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য সাজাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী সশরীরে মেলা উদ্বোধন করবেন, তার নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় রেখে এইবার দু'দিন হাতে রেখে মেলায় আসতে হয়েছে।'

ওয়ালটনের সিনিয়র অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর বাদল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শেরেবাংলা নগরের চেয়ে এই জায়গাটা ভালো। তবে এখানে গোডাউন সিস্টেম নেই। একত্রে বেশি পণ্য এনে রাখা যায় না। তাছাড়া যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে বিক্রিত পণ্য ক্রেতার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া মুশকিল। এই কারণে ইলেকট্রনিক্সের অনেক কোম্পানি এবারও অংশ নেয়নি। তবে আমরা গতবারের মতো এবারও বিক্রির চেয়ে এক্সক্লুসিভ পণ্য প্রদর্শনীর দিকে বেশি নজর দিচ্ছি।'

তিনি আরও বলেন, 'রাস্তাঘাটের সমস্যা হলেও ভেতরে কিন্তু আলাদা সুবিধা পাবেন ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা। কেননা ভেতরে অনেক জায়গা। সহজেই ভিড় হওয়ার সুযোগ নেই। তাছাড়া তিনশ' ফিটের রাস্তার কাজ চলছে দেখলাম, শেষ হয়ে গেলে হয়তো যাতাযাতেও ক্রেতারা সুবিধা পাবে।'

ছবি: সংগৃহীত

এক্সিবিশন সেন্টারের পেছনের অংশে ভারত, চীন, তুরস্কসহ বিদেশি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন চোখে পড়ে। এমন একটি প্যাভিলিয়নে কার্পেট সাজানোর কাজ করছিলেন 'টার্কিশ কার্পেট' নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মো. সেলিম। তিনি বলেন, 'তুরস্কের কোম্পানির পক্ষে আমরা কয়েকজন গত ৫দিন ধরে কাজ করছি। ভেতরের কাজ শেষ। এখন কার্পেট সাজানোর কাজ চলছে।'

এ মেলার যৌথ আয়োজক বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এটি ডিআইটিএফের ২৭তম আসর। এর আগে মেলার ২৫টি আসর বসেছে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে।

করোনা মহামারির ধকল কাটিয়ে গতবছর প্রথমবারের মতো পূর্বাচলের বিবিসিএফইসিতে মেলার ২৬তম আসর বসে।

এবার প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে মেলা শুরু হয়ে চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। মেলায় প্রবেশে প্রাপ্তবয়স্কদের ৪০ টাকার টিকিট কাটতে হবে। শিশুদের জন্য টিকিটের মূল্য ২০ টাকা।

মেলায় দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে কাঞ্চন সেতু পর্যন্ত প্রতিদিন শতাধিক বিআরটিসির দোতলা বাস চলাচল করবে বলেও জানিয়েছেন আয়োজকরা। এছাড়াও মেলায় আগতদের নিরাপত্তায় র‌্যাব, পুলিশ, আনসারসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ নজরদারির পাশাপাশি মেলা এলাকায় ৩১৯টি সিসি ক্যামেরা থাকবে।

ছবি: সংগৃহীত

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সচিব ও বাণিজ্য মেলার পরিচালক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মেলাকে ঘিরে সবধরনের প্রস্তুতি শেষ। এখন কেবল গোছানোর কাজ চলছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। চারদিকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশও কাজ করছেন। দর্শনার্থী বা ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিয়ে কোন ধরনের সমস্যা হবে না বলে আশা করছি।'

তিনি আরও বলেন, 'এবার মেলার পরিধিও বাড়ানো হয়েছে। মেট্রোরেলের আদলে প্রবেশদ্বার করা হয়েছে। কিডস্ এবং ফুড জোন আলাদা করা হয়েছে। সুদৃশ্য বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়নও করেছি আমরা। এছাড়া ২টি হাসপাতালের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যত সুন্দরভাবে মেলা সাজানো যায় সেই চেষ্টাই করছি আমরা।'

এছাড়া আগেই রাস্তাঘাট সংস্কারের কাজ করা হয়েছে জানিয়ে ইপিবি'র এই কর্মকর্তা বলেন, 'রাস্তাঘাট সব ক্লিয়ার। মেলায় বিবিসিএফইসি'র নিজস্ব পার্কিং স্পেস ছাড়াও সামনে পেছনে দেড় হাজার গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা আছে। এছাড়া রাজউকের একটি জায়গায় ১ হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে।'

Comments

The Daily Star  | English
How artistes flamed cultural defiance in July

How artistes flamed cultural defiance in July

From stage to street, artistes and activists led a cultural revolt against brutality and censorship

7h ago