রপ্তানি আয়ের অর্ধেকের বেশি আসছে ৫ দেশ থেকে

স্টার ফাইল ফটো

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের অর্ধেকেরও বেশি আসছে মাত্র ৫ দেশ থেকে। সরকারের নানা উদ্যেগের পরও দেশের রপ্তানি বাজার উন্নত দেশের গুটিকয়েক বাজারের ওপরই নির্ভরশীল হয়ে আছে।

অর্থাৎ, গত এক দশকে রপ্তানি বাজার ও পণ্যের বহুমুখীকরণে দেশের প্রচেষ্টা প্রত্যাশিত সুফল বয়ে আনেনি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, স্পেন ও ফ্রান্স বাংলাদেশ থেকে ২৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য কিনেছে। এটি দেশের মোট বার্ষিক ৫৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের ৫২ শতাংশেরও বেশি।

তথ্য অনুসারে, রপ্তানির ক্ষেত্রে ১৭ শতাংশ নিয়ে শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। গত অর্থবছরে জার্মানি থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ১২ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং যুক্তরাজ্য থেকে আয় হয়েছে ৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

এ ছাড়াও, স্পেন ও ফ্রান্স থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে যথাক্রমে ৬ দশমিক ৬২ ও ৫ দশমিক ৯২ শতাংশ।

গত এক দশক ধরে এই ৫ দেশে সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি হয়ে আসছে।

রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষণা পরিচালক মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার এখনো হাতে গোনা কয়েকটি দেশ ও তৈরি পোশাকের মতো কয়েকটি পণ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।'

তার মতে, পণ্যের বৈচিত্র্যের অভাবে বাংলাদেশ নতুন বাজার খুঁজতে পারছে না। তাই রপ্তানি আয়ও বাড়েনি।

'একই সঙ্গে বাজার ও পণ্য উভয়ই বৈচিত্র্যময় করা চ্যালেঞ্জিং। তবে অর্থনীতিকে টেকসই করতে এটি প্রয়োজন,' যোগ করেন তিনি।

তিনি মনে করেন, অল্প সংখ্যক পণ্য ও অল্প সংখ্যক দেশের ওপর নির্ভরশীলতা ঝুঁকি তৈরি করে।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি আরও বলেন, 'যেমন, মন্দার কারণে জার্মানির অর্থনীতি ধাক্কা খাচ্ছে। এটি বাংলাদেশের জন্য অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।'

তিনি আরও বলেন, 'গত ৬ মাস ধরে দেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার ধীর গতিতে চলছে।'

জার্মানি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ। গত ৫ বছরে ইউরোপের প্রধান অর্থনীতির এই দেশটি বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য কিনেছে।

অর্থনীতিবিদ রাজ্জাক জানান, স্থানীয় উৎপাদকদের পণ্য সরবরাহের সক্ষমতা থাকায় বাংলাদেশের বিদ্যমান বাজারগুলো ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন নতুন বাজার খোঁজা উচিত।

ভারত ও চীন সম্মিলিতভাবে প্রায় ২৮০ কোটি জনসংখ্যার দেশ। বন্ধুপ্রতীম এই দেশ ২টি বাংলাদেশকে পণ্য রপ্তানির সুযোগ দিতে পারে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে সপ্তম বৃহত্তম আমদানিকারক ছিল ভারত। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির এই দেশটি বাংলাদেশ থেকে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য কিনেছিল। ১ বছর আগে এই পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।

মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, 'বাংলাদেশ প্রতিবেশীদের বাজারে বৈচিত্র্যময় পণ্য রপ্তানির সুযোগ খোঁজার প্রচেষ্টা জোরদার করতে পারে।'

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের বাজারে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক পণ্য এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিদ্যমান বাজার ধরে রাখতে পারে। পাশাপাশি নতুন বাজারে যেতে পারে।

'ভিয়েতনাম বছরের পর বছর ধরে ২টি খাতের পণ্য নিয়ে বিশ্ব বাজারের একটি বড় অংশ দখল করে আছে' উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদ রাজ্জাক প্রশ্ন করেন, 'তাহলে আমরা কেন অনেক পিছিয়ে থাকব?'

বাংলাদেশে কৃষিপণ্য, চিংড়ি ও নন-লেদার জুতা উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে।

মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'রপ্তানিকারকরা যদি মানসম্মত কৃষিপণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারেন, তাহলে তা ব্যাপক সাফল্য বয়ে আনবে।'

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান সরকারকে বিদ্যমান বাণিজ্যনীতি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান। যাতে উৎপাদকরা বাজারের সম্ভাবনা যাচাই করতে পারেন।

লাতিন আমেরিকায় মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল এ দেশের রপ্তানিকারকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাজার হতে পারে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'বিদ্যমান বাজারগুলো ধরে রেখে আমাদের অবশ্যই নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে।'

তৌফিকুল ইসলাম খান মনে করেন, বাংলাদেশের উচিত তৈরি পোশাকের পাশাপাশি অন্যান্য পণ্য রপ্তানির কথাও চিন্তা করা। কেননা, এটি বর্তমানে মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ।

তিনি বলেন, 'নতুন বাজারে পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর কৌশল আমাদের নিতে হবে।'

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি ধীরে ধীরে বাড়চ্ছে। যেমন, গত কয়েক বছরে জাপান ও অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।'

বিশ্বসেরা ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী বলেন, 'তরুণ কর্মী ও প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের ফলে দেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।'

তিনি আরও বলেন, 'সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে রপ্তানি আরও বেশি হবে।'

তবে তিনি উল্লেখ করেন যে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বিশ্বব্যাপী পণ্য কেনার হার কমেছে।

বিশ্বব্যাংকের মত, বাণিজ্য প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে রপ্তানি বহুমুখীকরণ না করলে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দিকে বাংলাদেশের অগ্রগতি কমে যেতে পারে।

গত এপ্রিলে সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, রপ্তানি বাড়াতে বাংলাদেশে উচিত রপ্তানি অবকাঠামো উন্নয়ন ও মুক্তবাণিজ্য চুক্তির পাশাপাশি বিনিয়োগ ব্যবস্থা উদার করা এবং শুল্ক কমানো।

Comments

The Daily Star  | English

Interim govt must not be allowed to fail: Tarique addresses BNP rally

Thousands join BNP rally from Nayapaltan to Manik Mia Avenue

2h ago