দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বেচ্ছায় একীভূত হওয়ার সময় দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

মেজবাউল হক বলেন, ‘দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে আমানতকারীদের স্বার্থ প্রথম অগ্রাধিকার হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক। ছবি: সংগৃহীত

দুর্বল ব্যাংকগুলোকে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বেচ্ছায় একীভূত ও অধিগ্রহণের সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সময়ের মধ্যে তারা ব্যর্থ হলে ২০২৫ সালের মার্চ থেকে একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গতকাল মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বাংলাদেশ ব্যাংকের সদর দফতরে সাংবাদিকদের বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিসেম্বরের পর পরিস্থিতি মূল্যায়ন করবে এবং সে অনুযায়ী উদ্যোগ নেবে।'

এর আগে, গত বছরের ডিসেম্বরে কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার অবনতির মধ্যে একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণের দিকনির্দেশনা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রম্পট কারেকটিভ অ্যাকশন (পিসিএ) ফ্রেমওয়ার্ক নামে একটি গাইডলাইন জারি করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই উদ্যোগে সঞ্চয়কারীসহ অনেকের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

তবে মেজবাউল হক বলেন, 'দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে আমানতকারীদের স্বার্থ প্রথম অগ্রাধিকার হবে। একইসঙ্গে শক্তিশালী ব্যাংকগুলোর সুরক্ষাও অগ্রাধিকার পাবে।'

একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিস্তারিত গাইডলাইন জারি করবে বলেও জানান তিনি।

'আইন মেনেই একীভূতকরণ করা হবে এবং দুর্বল ব্যাংকের কর্মীরা চাকরি হারাবেন না।'

দুর্বল ও ভালো উভয় ব্যাংক একীভূতকরণের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অডিট ফার্ম দিয়ে মূল্যায়ন করা হবে।

তিনি বলেন, 'বিশ্বে একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণের অনেক উদাহরণ রয়েছে। আমরা তাদের থেকে শেখার চেষ্টা করছি।'

সম্প্রতি রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনের ব্যাংকগুলোর তালিকা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, 'এটি ব্যাংকগুলোর স্বাস্থ্য বিশ্লেষণের সঠিক পদ্ধতি নয়।'

তিনি আরও বলেন, 'এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি বিভাগীয় মূল্যায়ন- বাংলাদেশ ব্যাংকের সামগ্রিক মূল্যায়ন নয়।'

'তালিকাটি গবেষণার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে, গণমাধ্যমে প্রকাশের জন্য নয়,' বলেন তিনি।

এক সপ্তাহ আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংক মালিকদের জানিয়েছিলেন, এক বছরের মধ্যে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হবে এবং সেজন্য ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা কাজ করছে।

তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন, এই একীভূতকরণ শক্তিশালী ও দুর্বল উভয় ব্যাংককে সহায়তা করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তার মতে, দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে প্রায় ৪০টি ভালো করছে। বাকিরা দুর্বল এবং তাদের মধ্যে দশটি একীভূত হবে।

ভালো ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকের একীভূতকরণ বিশ্বব্যাপী একটি স্বীকৃত পদ্ধতি।

বাংলাদেশ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর, 'আমাদের দেশে এটা সম্ভব। একইসঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক অর্থনীতিতে এটি কঠিন।'

তিনি মন্তব্য করেন, 'একীভূত হওয়ার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত কিছু দুর্বল ব্যাংকের পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পুনর্গঠন করা এবং সমন্বিত নিরীক্ষা করা।'

Comments